সজনে পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম জানুন
সজনে পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম জানুন। আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আপনি কি সজনে পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম, সজনে পাতার ব্যবহার, গর্ভাবস্থায় সজনে পাতার উপকারিতা, সজনে পাতা খেলে কি হয়, সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার উপকারিতা, ডায়াবেটিস রোগের কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা এবং সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চান?
![]() |
সজনে-পাতার-উপকারিতা-অপকারিতা। ছবি - এআই |
সজনে (Moringa ) পাতা মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শাক বা সবজি। সজনে পাতার গুণ ও উপকারিতা এতই ব্যাপক যে দেশি-বিদেশি পুষ্টি বিজ্ঞানীরা একে অলৌকিক পাতা হিসাবে অভিহিত করেছেন। সজনে পাতার নিউট্রিশন (পুষ্টিমান) এবং ফুড ভ্যালু (খাদ্যমান) যেকোনো মানুষকে বিস্মিত করবে। বর্তমান সময়ের আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রাকৃতিক সুপার ফুড সজনে পাতা। কিন্তু এর গুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তাই চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সজনে পাতার উপকারিতা
সজনে পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে রাখুন। আরো জানুন - পৃথিবীর অলৌকিক পাতা ও সুপার ফুড খ্যাত এবং বিশ্বের সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব সজনে পাতার পুষ্টিগুণ ও কিভাবে খাবেন। সজনে পাতা অত্যন্ত পুষ্টিকর সমৃদ্ধ হওয়ায় পুষ্টিবিজ্ঞানীরা একে 'পুষ্টির ডিনামাইট' এবং বিভিন্ন ভিটামিনে ভরপুর হাওয়ায় একে 'মাল্টিভিটামিন পাতা' বলে থাকেন। সজনে পাতায় ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন এবং ৮ ধরনের অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। এছাড়াও এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ রয়েছে। চলুন সজনে পাতার উপকারিতাগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুন: ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে
সজনে পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
সজনে পাতায় অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। সজনে পাতার অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণ এবং ভিটামিন সি বিভিন্ন রোগ জীবাণুর সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া এর অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ শরীরকে বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ থেকে রক্ষা করে দেহকে কার্যক্ষম ও শক্তিশালী করে তোলে। বিশেষ করে করোনা মহামারী চলাকালে সজনে পাতা বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সজনে পাতা
![]() |
সজনে-পাতার-গুড়া-খাওয়ার-উপকারিতা। ছবি - এআই |
সজনে পাতার বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন পরিপাকতন্ত্রের অনেক ধরনের সমস্যা দূর করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। কারো খাবার সহজে হজম না হলে, পেট ব্যথা করলে কিংবা অতিরিক্ত এসিডিটির কারণে বুক জ্বালা-পোড়া করলে সজনে পাতা খেলে এ সকল সমস্যা সহজেই দূর হয়ে যায়।
সজনে পাতার পাশাপাশি সজনে ফুল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। এক গবেষণা থেকে জানা যায়, পেটের এসিডিটি প্রায় ৮৫% কমাতে পারে এবং পেপটিক আলসার প্রতিরোধ করতে পারে সজনে পাতা।
সজনে পাতা হার্ট ভালো রাখে
নিয়মিত সজনে পাতা খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সজনে পাতায় কোয়ারসেটিন এর মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আমাদের কার্ডিওভাসকুলার হেলথ ভালো রাখে। তাছাড়া সজনে পাতা রক্তের খারাপ কোলেস্টরেল দূর করে আমাদের হার্টে নিয়মিত রক্ত প্রবাহ সচল রেখে উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় সজনে পাতা
সজনে পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। আর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড় ও দাঁত গঠনে সহায়তা করে থাকে। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলেন, সজনে পাতার পুষ্টি মান এবং গরুর দুধের পুষ্টি মান প্রায় কাছাকাছি। অর্থাৎ সজনে পাতায় যা রয়েছে, গরুর দুধেও তা রয়েছে। আর আমরা আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে গরুর দুধ খেয়ে থাকি। কিন্তু কেউ গরুর দুধের পরিবর্তে সজনে পাতা খেলেও সে চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। সুতরাং সজনে পাতা হাড় এবং দাঁতের সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সজনে পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
সজনে পাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ কোষের ফ্রি রেডিকেল গুলোকে ধ্বংস করে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাছাড়া সজনে পাতায় 'নিয়াজিমিসিন' নামক একটি যৌগ বিদ্যমান রয়েছে যেটি ক্যান্সারের কোষ বিকাশকে ধ্বংস করে। সুতরাং নিয়মিত সজনে পাতা খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আরো পড়ুন: পাকস্থলীর ক্যান্সার কি ভালো হয়?
শরীর থেকে টক্সিন বের করবে সজনে পাতা
বিজ্ঞানীরা মনে করেন একজন মানুষের শরীরে ৭০ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ (সেল) থাকে। আর প্রতিটি কোষের ভেতরে প্রত্যেকদিন লক্ষাধিক রিএকশন হয়। অর্থাৎ প্রতিমুহূর্তে এই লক্ষাধিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলে শরীরে ভয়াবহ কিছু বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন) আমাদের সেল এর মধ্যে বা কোষের ভেতরে তৈরি হয়। কোন কারণে এই টক্সিন গুলো যদি বের হতে না পেরে কোষের মধ্যে থেকে যায় তাহলে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে এবং একসময় জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
![]() |
সজনে-পাতার-উপকারিতা। ছবি - এআই |
কিন্তু সজনে পাতার উপকারী গুণ শরীর থেকে এই বিষাক্ত পদার্থ গুলোকে বের করে দিয়ে শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে থাকে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী শরীরকে ডিটক্স করার জন্য কিছু প্রোগ্রাম তৈরি হয়েছে যা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কেউ প্রোগ্রামগুলো ফলো করে শরীরে জমানো বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ গুলো বের করতে পারেন।
সজনে পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সক্ষম
নিয়মিত সজনে পাতা খেলে ডায়াবেটিস এর মত জটিল রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সজনে পাতা রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ফলে কেউ সজনে পাতা খেলে ডায়াবেটিস রোগ সহজেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করবে সজনে পাতা
সজটা পাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। কেননা স্বজনের পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। আর এই পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, একদল সুস্থ অংশগ্রহণকারী লোক প্রতিদিন ১২০ গ্রাম করে রান্না করা সজনে পাতা খেয়েছিল (১ সপ্তাহের জন্য)। আর অন্য দল সজনে পাতা খায়নি। খাওয়ার ২ ঘন্টা পরে যারা সজনে পাতা খেয়েছিল তাদের রক্তের চাপ ছিল কম আর যারা সজনে পাতা খায়নি তাদের রক্তচাপ ছিল বেশি। সুতরাং এ থেকে প্রমাণিত হয়, সজনে পাতা রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। (তথ্যসূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে)
মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সজনে পাতা
সজনে পাতার নানা ধরনের পুষ্টিগুণ ও ভিটামিন মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়ক। তা ছাড়া গর্ভবতী নারী এবং স্তন্যদানকারী মহিলা প্রতিদিন সজনে পাতা খেলে আয়রন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ইত্যাদির চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। তাছাড়া স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য এটি কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না।
সজনে পাতা রক্ত শূন্যতা বা অ্যানিমিয়া দূর করে
আমাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা রোগ দেখা দেয়। এদিকে সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও জিংক পাওয়া যায়। তাই কেউ নিয়মিত সজনে পাতা খেলে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া দূর হয়।
আরো পড়ুন: বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ
অ্যালঝাইমার ও বিষন্নতা দূর করে সজনে পাতা
সজনে পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য স্নায়ুতন্ত্র কে সহজেই প্রভাবিত করতে পারে এমন রোগ গুলোর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। এর ফলে সজনে পাতা নিউরোপ্যাথিক পেইন, অ্যালঝাইমার ও বিষন্নতা (ডিপ্রেশন) লক্ষণগুলো দূর করতে সক্ষম।
ত্বক ও চুলের যত্নে সজনে পাতা
সজনে পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। আর সজনে পাতার এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ ত্বককে সুরক্ষা দেয় এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। অন্যদিকে সজনে পাতায় ভিটামিন এ রয়েছে, যা আমাদের চোখের স্বাস্থ্য, দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। সুতরাং নিয়মিত সজনে পাতা খেলে আমাদের ত্বক এবং চুল স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও ঝলমলে থাকে।
সজনে পাতা ব্যথা দূর করে
সজনে পাতায় অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকায় এটি শরীরের যেকোন ব্যথা বিশেষ করে কান ব্যথা, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা সেরে যায়। সজনে ফল নির্মিত রান্না করে খেলে গেঁটে ব্যথা দূর হয়। তাছাড়া সজনে পাতার পেস্ট বানিয়ে তাতে হলুদ, লবণ, রসুন ও গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে কুকুরের বিষ ধ্বংস হয়।
কৃমিনাশক সজনে পাতা
সজনের কচি ফল লিভার, প্লীহাদোষ নিবারক, প্যারালাইসিস ও টিটেনাস রোগে উপকারী। এর সাথে কৃমিনাশক হিসেবে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া সজনে পাতা জ্বর, সর্দি-কাশি ও চর্মরোগ দূর করতে সক্ষম। তাছাড়া শরীরের যেকোনো ক্ষতস্থান সারাতে সজনে পাতার পেস্ট বেশ উপকারী।
সজনে পাতা অ্যামাইনো এসিডের চাহিদা পূরণ করে
আমাদের শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ প্রোটিন (আমিষ) দিয়ে তৈরি যার অন্যতম গাঠনিক একক হল অ্যামাইনো এসিড। অ্যামাইনো এসিড আমাদের শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী এবং বিভিন্ন ধরনের মেটাবলিজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য ৯টি অ্যামাইনো অ্যাসিড বিভিন্ন খাদ্যের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। আর সজনে পাতা অ্যামাইনো এসিডের এই চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)
সজনে পাতার অপকারিতা
সজনে পাতার অনেক উপকারিতা গুণ থাকলেও এর কিছু ক্ষতিকর বা খারাপ দিক রয়েছে। অতিরিক্ত যেকোন কিছু গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের জন্য তা ভালো নয়। সে হিসেবে সজনে পাতা প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খেলে উপকারিতার বদলে অপকারিতা দেখা দিতে পারে। তাহলে চলুন সজনে পাতার অপকারিতা গুলো কি কি সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
- অতিরিক্ত সজনে পাতা খেলে ক্ষুধা মন্দা, গ্যাসের সমস্যা, বমি বমি ভাব সহ বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- সজনে পাতায় বিদ্যমান পটাশিয়াম রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কেউ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ খেতে থাকলে তার সাথে সজনে পাতা খেলে রক্তের চাপ আরো কমে যেতে পারে। ফলে শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
- হৃদরোগীদের অনেকেই মনে করে থাকেন শুধু সজনে পাতা খেলে হার্ট ভালো থাকবে। বিষয়টি আসলে সেই রকম নয়। ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সজনে পাতা খেলে ভালো হয়।
- কিডনির সমস্যা জনিত রোগীদের শুধুমাত্র সজনে পাতাকে একমাত্র প্রতিষেধক হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক হবে না।
- ডায়াবেটিস রোগীরা শুধুমাত্র সজনে পাতা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে এটা ভাবলে ভুল হবে। তাই ডায়াবেটিসের ওষুধের পাশাপাশি সজনে পাতা খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
- গর্ভাবস্থায় সজনে পাতা খেলে ভ্রূণের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক সময় এটি প্রজননরোধী হতে পারে। তাই গর্ভবতী নারীদের সজনে পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম।
- সজনে পাতার সংলগ্ন ডালপালা আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য এ সকল ডালপালা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কেন হয় - করনীয় কি
সজনে পাতার পুষ্টিমান
সজনে পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। এই পাতায় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, আইরন, সোডিয়াম ইত্যাদি উপাদান রয়েছে। নিচে প্রতি ১০০ গ্রাম সজনে পাতার পুষ্টিমান উল্লেখ করা হলো:
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
কার্বোহাইড্রেট |
৮.২৮ গ্রাম |
ফাইবার/আঁশ | ২.০ গ্রাম |
প্রোটিন (আমিষ) |
৯.৪০ গ্রাম |
স্নেহ |
১.৪০ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম |
১৮৫ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম |
১৪৭ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম |
১৯ মিলিগ্রাম |
আয়রন |
৪.০০ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ |
৩৭৮ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন সি |
৫১.৭ মিলিগ্রাম |
পানি | ৮৫.২ গ্রাম |
তথ্যসূত্র: পুষ্টিবিদ তাসরিয়ার রহমান, মিরপুর ইসলামী ব্যাংক এন্ড কার্ডিয়াক সেন্টার, ঢাকা, বাংলাদেশ।
সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম - কিভাবে খাবেন সজনে পাতা
সজনে পাতা অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি বা শাক। মানুষের শরীরের জন্য উপকারী বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যামাইনো এসিড - কি নেই এই সজনে পাতায়? আপনি যদি সঠিক পদ্ধতিতে বা সঠিক নিয়মে সজনে পাতা খেতে পারেন তাহলে এর সকল উপকারী উপাদান গুলো আপনি সহজেই পেতে পারেন। তা না হলে এর উপকারী উপাদান গুলো আপনি সঠিকভাবে নাও পেতে পারেন। তাহলে চলুন সজনে পাতার খাওয়ার নিয়ম গুলো জেনে নেই।
আরো পড়ুন: মিষ্টি আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি
সজনে পাতা যেভাবে খাবেন -
১। প্রথমে ছোট শাখা প্রশাখা সহ-সজনের পাতা ভেঙ্গে নিন। তারপর শুধুমাত্র পাতাগুলো ছোট ডাল থেকে ছড়িয়ে নিন। এরপর ছোট ছোট পাতাগুলো ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে তারপর অন্যান্য শাকের মত ভেজে নিন। তারপর হালকা সরিষার তেল মিশিয়ে গরম ভাতের সাথে খেতে পারেন।
২। সজনে পাতাগুলো ভালোভাবে সিদ্ধ করে ভর্তা করে খাওয়া যেতে পারে। তবে রান্না করলে অনেক সময় ভিটামিন সি এর গুনাগুন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৩। আজকাল সজনে পাতার গুঁড়া বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ট্রেনডিং এই পাতা বিশ্বব্যাপী বেশ সাড়া ফেলেছে। প্রথমেই পাতাগুলোকে সূর্যের আলোতে ভালোভাবে শুকিয়ে তারপর গুঁড়া করে বায়ুরোধী কৌটায় রেখে খাওয়া যেতে পারে।
৪। সজনে পাতার গুঁড়া বা মরিঙ্গা পাউডার প্রতিদিন সকালে ১ চা চামচ, রাতে ১ চা চামচ আপনার শরীর থাকবে শক্তিশালী এবং কর্মক্ষম। আপনি এই পাউডার চায়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
৫। প্রথমে সজনে পাতা ভালোভাবে ধুয়ে ব্লেন্ড করে জুস হিসেবেও খেতে পারেন। আপনি এই জুসের সাথে আদা, জিরা, বিট লবণ, এমনকি মধু মিশিয়েও টেস্টি করে খেতে পারেন। কারণ কাঁচা সজনে পাতায় সবগুলো পুষ্টিগুণ উপাদান আপনি সহজেই পেয়ে যাবেন।
৬। ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ থেকে ২ চা চামচ সজনে পাতার গুঁড়া ভালোভাবে মিশিয়ে তাতে পরিমাণ মতো জিরার গুঁড়া বা খাটি মধু মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে সকালে খালি পেটে অথবা নাস্তা করার পর পান করতে পারেন।
৭। সজনে পাতা অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়ে খাওয়া উচিত। ১০ থেকে ১৫ দিন খাওয়ার পর আবার কিছুদিন বিরতি দিয়ে খাওয়া উচিত।
FAQ: প্রশ্নোত্তর - সজনে পাতার উপকারিতা
১। প্রশ্ন: সজনে পাতার গুঁড়া খেলে কি ওজন কমে?
উত্তর: সজনে পাতার গুঁড়া খেলে অতিরিক্ত ওজন কমে।
২। প্রশ্ন: সজনে পাতা কি ডায়াবেটিস কমায়?
উত্তর: সজনে পাতা রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আরো পড়ুন: ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
৩। প্রশ্ন: কিডনি রোগী কি সজনে পাতা খেতে পারবে?
উত্তর: সজনে পাতা স্বাভাবিক ব্যক্তির কিডনি সুস্থ রাখতে পারে কিন্তু কিডনি রোগীদের সজনে পাতা খাওয়া উচিত নয়।
৪। প্রশ্ন: সজনে পাতার ইংরেজি নাম কি?
উত্তর: সজনে পাতার ইংরেজি নাম হল Moringa Leaf.
৫। প্রশ্ন: সজনে পাতার রস চুলে দিলে কি হয়?
উত্তর: সজনে পাতায় ভিটামিন ই থাকার কারণে এর রস চুলে দিলে চুল ঘন, কালো ও লম্বা হয় এবং চুল পড়া কমে। চুলের গোড়া মজবুত করে চুলকে করে তোলে আকর্ষণীয় এবং ঝলমলে।
উপসংহার - সজনে পাতার উপকারিতা
সজনে পাতা একটি অলৌকিক পাতা। কারণ এতে রয়েছে অবিশ্বাস্য কিছু উপকারিতা পুষ্টি গুনাগুন যা আপনাকে বিস্মিত করবেই। বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশে এই গাছ সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়। অবশ্য শীত প্রধান দেশ বাদে গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রায় সব দেশেই এই গাছ জন্মে থাকে।। এই গাছের ফল সজনে ডাটা হিসেবে খাওয়া হয়। আর পাতা শাক ভাজি ও গুঁড়ো পাউডার হিসেবে খাওয়া হয়। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী খুবই চাহিদা সম্পন্ন সজনে পাতার গুঁড়া বা মরিঙ্গা পাউডার বেশ ট্রেন্ডিংয়ের রয়েছে। মানব দেহের জন্য বহু গুণে গুণান্বিত এই সজনে পাতা সঠিক নিয়মে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই আমাদের শরীরের জন্য ভালো ফল বয়ে আনে না। তাই নিয়ম মেনে পরিমিত সজনে পাতা খাওয়া উচিত। সজনে পাতা সারা বছর পাওয়া যায় এবং খুবই সহজলভ্য। গরিব ধনী সহ সকল শ্রেণীর মানুষ এটি সহজেই কিনে খেতে পারে। তাই এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা বিশাল ভাবে প্রচারের উদ্দেশ্যে সকল শ্রেণীর মানুষ এবং মিডিয়ার অংশগ্রহণে এর ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো উচিত।
আরো পড়ুন: লেবু খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা সজনে পাতার বিভিন্ন উপকারিতা, পুষ্টি গুণ, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি লেখাটি ভালোভাবে পড়েছেন এবং বুঝতে পেরেছেন। লেখা সম্পর্কে কোন মতামত থাকলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন আমরা আপনার সাথে অতি দ্রুত যোগাযোগ করার চেষ্টা করব। লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকলে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো যেন অন্যরাও উপকৃত হতে পারেন। আজকের লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
লেখক পরিচিতি:
মোহাঃ গোলাম কবির
বি.এস-সি (অনার্স), এম.এস-সি
পরিসংখ্যান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।
(বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত নিয়মিত ব্লগ লেখক)
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url