ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে? জানুন সমাধান

ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে? জানুন সমাধান।আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আপনি কি দীর্ঘদিন ঠোঁট ফাটার সমস্যায় ভুগছেন? আপনি কি জানতে চান ঠোঁটফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে? ঠোঁট ফাটা দূর করার উপায়, ঠোঁট ফাটে যে ভিটামিনের অভাবে তার নাম জানতে চান? তাহলে আজকের 'ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে' শিরোনামের লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
ঠোঁট-ফাটা-দূর-করার-উপায়
ঠোঁট-ফাটা-দূর-করার-উপায়। ছবি - এআই
ঠোঁট ফাটা অনেকেরই একটি সাধারন সমস্যা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শীতের শুরুতে এই ঠোঁট ফাটার প্রকোপ বেশি লক্ষ্য করা যায়। তবে কী শীতকাল, কী গ্রীষ্মকাল - সারাবছর যেকোনো সময়ই আপনার ঠোঁটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে শুষ্ক আবহাওয়ার পাশাপাশি ভিটামিনের অভাবেও কিন্তু ঠোঁট ফাটে। তাই ঠোঁট ফাটা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে আপনি কিছু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ঘরোয়া উপায়ে খুব সহজেই ঠোঁট ফাটার সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে?

ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে? জেনে নিন সেই ভিটামিনের নাম, উৎস এবং প্রাকৃতিক উপাদানসহ সম্পূর্ণ ঘরোয়া সমাধান। ঠোঁট ফাটার জন্য শুষ্ক আবহাওয়ার পাশাপাশি ভিটামিনও দায়ী। আমাদের দেহে পুষ্টিকর খাবার ও খনিজ পদার্থের অভাবে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। সেই হিসেবে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (Vitamin B2, B3, B6, B12) এর অভাবে অনেকের ঠোঁট শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে এবং একসময় ঠোঁট ফেটে যায়। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ মনে করেন, বিশেষ করে ভিটামিন বি২ - B2 (রিবোফ্লাভিন) এবং ভিটামিন বি৩ - B3 (নিয়াসিন) এর অভাবে ঠোঁট ফেটে যেতে পারে এবং ঠোঁটের কোণে ক্ষত বা ঘা সৃষ্টি করতে পারে।

মুখ ও ঠোঁটের যত্নে ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন)

  • ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন) আপনার ঠোট শুষ্ক হওয়া ও ঠোঁটফাটা থেকে রক্ষা করে।
  • ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন) মুখের কোণে ঘা বা ক্ষ ত সৃষ্টি হওয়া থেকে বাঁচায়।
  • ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন) আপনার জিহ্বা লাল ভাব এবং ফোলা হওয়া থেকে মুক্তি দেয়।
  • ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন) চোখের পাতায় চুলকানি এবং চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।

মুখ ও ঠোঁটের যত্নে ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন)

  • ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) আপনার ঠোঁট ফেটে চামড়া উঠা থেকে রক্ষা করে।
  • ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) আপনার ঠোঁটের ত্বকের শুষ্কতা, রুক্ষতা ও লালচে ভাব কমায়।
  • ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) অনেকের মাথা ঘোরা এবং ক্লান্তি দূর করে।
  • তাছাড়াভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) অনেকের হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

মুখ ও ঠোঁটের যত্নে ভিটামিন বি ৬ এবং ভিটামিন বি১২

ভিটামিন বি ৬ (পাইরিডক্সিন) এবং ভিটামিন বি১২ (সায়ানাকোবালামিন) মুখ এবং ঠোঁটের যত্নে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। অনেকেই ঠোট ফাটার অন্যতম কারণ হিসেবে ভিটামিন বি ৬ এবং ভিটামিন বি১২ এর অভাবকে দায়ী করে থাকেন।
ঠোঁট-ফাটে-কোন-ভিটামিনের-অভাবে
ঠোঁট-ফাটে-কোন-ভিটামিনের-অভাবে। ছবি - এআই
অবশ্য অনেকে ভিটামিন বি১২ এর অভাবে হাত পা, জহ্বা জ্বালাপোড়া, ঠোঁট ফাটা, রক্তশূন্যতা এবং ক্লান্তি ভাব অনুভূত করতে পারেন।

মুখ এবং ঠোঁটের যত্নে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি

আমরা জানি, ভিটামিন এ ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে ঠোঁটকে সতেজ রাখে। ভিটামিন এ এর অভাবে ঠোঁটের ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে ঠোঁট ফেটে যেতে পারে এবং একসময় ঠোঁটে প্রদাহের সৃষ্টি করে ঠোঁট জ্বালাপোড়া করতে পারে। অন্যদিকে ভিটামিন সি ঠোঁটের ত্বকের পুনর্গঠন এবং সতেজতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ভিটামিন সি আপনার ঠোঁট শুষ্ক ও রুক্ষ ভাব দূর করে এবং ত্বককে করে তোলে প্রাণবন্ত।

ঠোঁটের যত্নে জিঙ্ক এবং আয়রন

জিংক এবং আয়রন ঠোঁটের যত্নে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু ভিটামিন নয়, খনিজ আয়রন এবং জিংকের অভাবেও আপনার ঠোঁট ফাটতে পারে। আয়রনের অভাবে আমাদের দেহে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এর ফলে ঠোঁট ফ্যাকাসে এবং প্রাণহীন দেখায়।

ভিটামিন বি২, বি৩ বি৬, বি১২. ভিটামিন এ, সি, জিঙ্ক ও আয়রন এর উৎস কি?

এবার চলুন বন্ধুরা ভিটামিন বি২, বি৩ বি৬, বি১২. ভিটামিন এ, সি, জিঙ্ক ও আয়রন এর উৎস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ভিটামিন বি২ এর উৎস

ভিটামিন বি২ এর ভালো উৎস হল দুধ, টাটকা শাকসবজি, মাছ, ডিম ইত্যাদি। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আপনি আপনার খাবার মেনুতে ডিম, দুধ, বিভিন্ন প্রকার মাছ, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি রাখুন। তাই আপনার ঠোঁট ফাটা রোধে ভিটামিন বি২ যুক্ত খাবার খেতে পারেন।

ভিটামিন বি৩ এর উৎস

ভিটামিন বি৩ এর ভালো উৎস হতে পারে মাছ, মুরগির মাংস, মাশরুম বাদাম ইত্যাদি। সুতরাং আপনি আপনার ঠোঁটের শুষ্কতা ও রুক্ষতা দূর করতে ভিটামিন বি৩ যুক্ত খাবার খেতে পারেন।

ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২ এর উৎস

মুখ ও ঠোঁটের যত্নে ভিটামিন বি৬ এর ভালো উৎস হল মুরগির মাংস, দই, আলু, কলা ইত্যাদি। অন্যদিকে ভিটামিন বি১২ এর উৎস হল গরুর মাংস, দুধ, ডিম এবং সামুদ্রিক মাছ। সুতরাং আপনি ঠোঁট ফাটা থেকে মুক্তি পেতে ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন১২ সমৃদ্ধ খাবার তালিকায় রাখতে পারেন।

খনিজ আয়রন ও জিংক এর উৎস

ঠোঁটকে প্রাণবন্ত ও ঠোঁটফাটা থেকে মুক্তি পেতে আয়রন এবং জিংকের ভূমিকা অপরিসীম। এই আয়রন এর উৎস হতে পারে লাল মাংস, কিসমিস, পালং শাক, লাল শাক এবং ডাল। অন্যদিকে জিংকের উৎস হল মাংস, ডিম এবং বাদাম জাতীয় বীজ।

ঠোঁট ফাটা রোধে ঘরোয়া উপায়

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স জাতীয় খাবার খেলে ঠোঁট ফাটা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তারপরও আপনার আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ঘরোয়া ভাবে খুব সহজেই ঠোঁট ফাটা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।

ঠোঁট ফাটা থেকে মুক্তি দেবে গোলাপজল ও গ্লিসারিন

আপনার ঠোঁট কি শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে? তাহলে আপনার ঠোঁটে ভালোভাবে গ্লিসারিন এবং গোলাপজল লাগিয়ে নিন। কারণ গ্লিসারিন ঠোঁটের ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ঠোঁটকে সতেজ-প্রাণবন্ত রাখে। এজন্য রাতে ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে পরিমাণ মতো গ্লিসারিন এবং গোলাপজল ভালোভাবে মিশিয়ে আপনার ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন। সকালে আপনার ঠোঁট হয়ে উঠবে নরম এবং তুলতুলে।

ঠোঁটের যত্নে মধু এবং অলিভ অয়েল

প্রাকৃতিক উপাদান মধু ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং ঠোঁটের শুষ্কতা-রুক্ষতা দূর করে। অন্যদিকে অলিভ অয়েল ঠোঁটের ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ঠোঁটে আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ঠোঁটকে সতেজ রাখে। এজন্য পরিমাণ মতো মধু এবং অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রিত মধু ও অলিভ অয়েল আপনার ঠোঁটে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। কিছুক্ষণ পর ঠোঁট ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ঠোঁট নরম এবং আকর্ষণীয় দেখাবে।

ফাটা ঠোঁটের যত্নে তেল ও চিনির স্ক্রাব

ঠোঁটের ভাটা ভাব দূর করতে তেল ও চিনির স্ক্রাব অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। চিনি হল প্রাকৃতিক স্ক্রাব, যা আপনার ঠোঁটের মৃত কোষগুলোকে তুলে ফেলতে সাহায্য করে। এজন্য প্রথমেই মধু বা তেলের সঙ্গে চিনির পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার সেই তেল ও চিনির পেস্ট ভালো হবে আপনার ঠোঁটে স্ক্রাব করুন। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে ১ থেকে ২বার স্ক্রাব করতে পারেন। ফলে আপনার ঠোঁট দেখাবে নরম তুলতুলে এবং আকর্ষণীয়।

ঠোঁটের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল

ফাটা ঠোঁটের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল জাদুকরি কার্যকারিতা দেখায়। কেননা ক্যাস্টর অয়েল একটি প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার হিসেবে আপনার ত্বকের যত্নে কাজ করে। ফলে রুক্ষ ও শুষ্ক ফাটা ঠোঁটের ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে ঠোঁটকে করে তোলে মোহনীয়। হট ফাটা রোধে ঘরোয়া উপায় হিসেবে আপনি ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

শুষ্ক ফাটা ঠোঁটের যত্নে ভিটামিন ই তেল

ঠোঁটের শুষ্কতা এবং ফাটা ভাব কমাতে পারে ভিটামিন ই তেল। ভিটামিন ই ত্বকের হাইড্রেট বজায় রাখে এবং কোষ পুনর্গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আপনার শুষ্ক ফাটা ঠোঁটের যত্নে ভিটামিন ই তেল ব্যবহার করতে পারেন।

মুখ ও ঠোঁটের যত্নে এক্সট্রা টিপস

  • দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার খান।
  • মুখ ও ঠোঁটের কোণে ঘা বা ক্ষত হলে নাভিতে নারকেল তেল ব্যবহার করুন।
  • শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
  • অতিরিক্ত লবণাক্ত ও ঝাল খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • নিয়মিত ঠোঁটে ময়শ্চারাইজার বা লেপ বাম ব্যবহার করুন।
  • আপনার ঠোঁটের ত্বককে রোদ থেকে রক্ষা করতে বাইরে যাওয়ার পূর্বে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
  • ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।

FAQ: প্রশ্নোত্তর - ঠোঁটফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে

১। প্রশ্ন: কি খেলে ঠোঁট ফাটা কমে?
উত্তর: ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ খাবার যেমন - দুধ, ডিম, মাছ, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি, ভিটামিন ই যুক্ত খাবার যেমন - পালং শাক, সূর্যমুখের বীজ, কাঠ বাদাম, ব্রকলি ইত্যাদি খেলে ঠোঁট ফাটা কমে।
২। প্রশ্ন: কোন ভিটামিনের অভাবে ঠোঁটে ও জিহ্বায় ঘা হয়?
উত্তর: ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক এসিডের অভাবে ঠোঁট ও জিহ্বায় ঘা হয়।
৩। প্রশ্ন: ঠোঁট ফাটা কিসের লক্ষণ?
উত্তর: ঠোঁটফাটা হল ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি১২, দেহে পানি শূন্যতা এবং শুষ্ক আবহাওয়ার লক্ষণ হতে পারে।

সর্বশেষ কথা - ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে

সাধারণত ঠোঁট ফাটে ভিটামিন বি২, বি৩ বি৬, বি১২. ভিটামিন এ, সি, জিঙ্ক ও আয়রন এবং পর্যাপ্ত পানির অভাবে। সুতরাং ঠোঁট ফাটা সমস্যায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি যুক্ত সবজি ও খাবার এবং আয়রন-জিংক সমৃদ্ধ খাবার খেলে ঠোঁট ফাটা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা কোন ভিটামিনের অভাবে ঠোঁট ফাটে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি ব্যাপারটি আপনি ভালোভাবে বুঝতে এবং জানতে পেরেছেন। লেখার মাধ্যমে কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর কোন পরামর্শ থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। লেখাটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো যেন অন্যরাও উপকৃত হতে পারেন। আজকের লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url