লেবু খাওয়ার উপকারিতা জেনে রাখুন

লেবু খাওয়ার উপকারিতা জেনে রাখুন।আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আপনি কি লেবু খাওয়ার উপকারিতা, ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা, গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা এবং লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আজকের "লেবু খাওয়ার উপকারিতা" শিরোনামের লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইলো।
গরম-পানিতে-লেবু-খাওয়ার-উপকারিতা
গরম-পানিতে-লেবু-খাওয়ার-উপকারিতা। ছবি - এআই
লেবু হল ভিটামিন সি এবং আ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ঔষধি গুণে ভরপুর একটি ভেষজ ফল। প্রাকৃতিক উপাদান লেবুর গুনাগুন এবং উপকারিতা জানলে আপনি সত্যিই চমকে উঠবেন। মানব দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকারী ফল লেবুর গুনাগুন সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তাই তাদের জন্য লেবু খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর জন্য হাজির হয়েছি।

লেবু খাওয়ার উপকারিতা

লেবু খাওয়ার উপকারিতা জানেন কি? তাহলে এখনই জেনে রাখুন ঔষধি গুণে ভরপুর রসালো লেবুর বহুবিধ ব্যবহার, অবিশ্বাস্য গুনাগুন ও বিস্ময়কর বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে। লেবুর শরবত, লেবুর চা, লেবুর জুস, ভাতের সাথে লেবু এমনকি যেকোনো মুখ রোচক খাবারের সাথে লেবু চাই। ওজন কমাতে, হজম শক্তি বাড়াতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, কিডনির পাথর প্রতিরোধে, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে, ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণে রাখতে, ত্বক সতেজ রাখতে ইত্যাদি উপকারে লেবু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাহলে চলুন লেবু খাওয়ার জাদু করি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।

ওজন কমাবে লেবু

আজকাল যে কোন বয়সের যে কোন মানুষের ওজন বৃদ্ধি বা স্থূলতা একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ওজন বেড়ে গেলে আমাদের অনেকেরই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই এটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে অনেকেই দ্রুত ওজন কমানোর উপায় খুঁজে থাকেন। কিন্তু অতিরিক্ত চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন না হয়ে আপনার হাতের নাগালের কাছেই সহজলভ্য লেবু দিয়ে আপনি সহজেই আপনার বাড়তি ওজন কমাতে পারবেন। গবেষণায় দেখা গেছে, লেবুতে পলিফেনোল নামক এক প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। ফলে লেবু পানি মধুর সাথে মিশিয়ে পান করলে দ্রুতই ওজন কমে।
এক সমীক্ষায় ইঁদুরের ওপর ট্রায়াল করে দেখা গেছে, লেবুর পলিফেনোল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে স্থূলতা প্রতিরোধ করে থাকে। তাছাড়া লেবুতে বিদ্যমান ফাইবার আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট পূর্ণতা বোধ করতে সাহায্য করে। এতে বারবার খাবার খাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে।
লেবু-খাওয়ার-উপকারিতা
লেবু-খাওয়ার-উপকারিতা। ছবি - এআই

লেবু হজম শক্তি বাড়ায়

আমাদের পেটের হজম শক্তি কমে যাওয়ায় অনেকেই অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে থাকেন। কিন্তু লেবু খেলে এই হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কেননা লেবুতে দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে যা আমাদের পেটের অন্ত্রের জন্য বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। যার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধিতে লেবু বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এজন্য প্রতিদিন সকালে লেবু পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়ে যায়। এমনকি কারো দীর্ঘদিনের পেটে বদহজমের সমস্যা থাকলে সেটিও ভালো হয়ে যায়।

কিডনির পাথর দূর করবে লেবু

আজকাল অনেকেই কিডনিতে পাথর রোগের সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাদের জন্য লেবু হতে পারে আশীর্বাদ স্বরূপ। কারণ লেবু পানি পান করলে কিডনির পাথর প্রতিরোধ এবং নির্গত করার প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যায়। আমরা জানি, লেবুতে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক এসিড রয়েছে। আর এই সাইট্রিক এসিডের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সাইট্রেট যা আমাদের প্রস্রাবের অম্লত্বকে হ্রাস করতে সক্ষম।
এর ফলে এটি কিডনির ছোট ছোট পাথর ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে। লেবু শরীরে সৃষ্ট বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। এর ফলে লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বেড়ে যায়। সুতরাং কিডনির পাথর দূর করতে লেবু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিডনিতে পাথর থাকা রোগীগণ অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

লেবু খেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে

নিয়মিত লেবু খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে অবিশ্বাস্যভাবে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে। লেবু হল ভিটামিন সি গুনে ভরপুর। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, ভিটামিন সি আমাদের দেহের সংবহনতন্ত্রের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের মতো ঝুঁকি কমিয়ে থাকে। গবেষকদের মতে, একটি পূর্ণ লেবুর রসে ১৮.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। অন্যদিকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ভিটামিন সি এর চাহিদা হল ৬৫.৯০ মিলিগ্রাম। আর লেবুতে বিদ্যমান পটাশিয়াম সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে।
তাই হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য খাবারের তালিকায় লেবু রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ট অ্যাসোসিয়েশন এর এক গবেষণা অনুসারে দেখা গেছে, কেউ নিয়মিত লেবু খেলে তার স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। তবে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকা রোগীরা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে লেবু

লেবু আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম। কেননা ভিটামিন সি এবং আ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ লেবু এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে। কেউ সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হলে তাকে লেবু খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে সহজেই সর্দি, কাশি এবং ফ্লু রোগ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড (ভিটামিন সি) এবং আ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেমকে বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে। তাই লেবু আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অবিশ্বাস্য ভাবে বাড়িয়ে তোলে।

লেবু পানি ধারণ কমায়

আমাদের দেহে বিভিন্ন কারণে অতিরিক্ত পানি জমা হয়ে শরীরে ফোলা ভাব তৈরি হয়। এই সমস্যার সমাধান লেবু পানি খেলে পাওয়া সম্ভব। কেননা লেবু হল প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক। এই লেবু শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে পারে এবং রক্তের পিএইচ মাত্রার ভারসাম্য ঠিক রাখতে সহায়তা করে। এর ফলে শরীরের ফুলে যাওয়ার সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। তাই কারো যদি এই ধরনের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তাকে নিয়মিত লেবু পানি খেতে হবে।
ঠাণ্ডা-পানিতে-লেবু-খাওয়ার-উপকারিতা
ঠাণ্ডা-পানিতে-লেবু-খাওয়ার-উপকারিতা। ছবি - এআই

ত্বকের যত্নে লেবু

লেবুতে বিদ্যমান আ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং আ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে। যার ফলে আপনার ত্বককে আরো বেশি সতেজ এবং উজ্জ্বলতা এনে দিতে পারে লেবু। লেবুর আ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্য ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া ভাব দূর করে ত্বককে পরিষ্কার এবং উজ্জ্বল রাখে। তাছাড়া লেবু শরীরের কোষের ফ্রি রেডিক্যাল কমাতে সহায়তা করে এবং ত্বকের প্রদাহ মোকাবেলা করে থাকে। এমনকি লেবুতে ঢাকা ভিটামিন সি এর কোলাজেন ত্বকের সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে। সুতরাং লেবু ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে ত্বককে ঝকঝকে এবং সতেজ রাখে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবে লেবু

প্রাকৃতিক উপাদান লেবু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুনে ভরপুর। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ গুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম। ইঁদুরের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ গুলো রক্তে বিদ্যমান গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম এবং ইন্সুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সক্ষম। যার কারনে কেউ লেবু খেলে তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে খুব সহজেই। তবে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, এ বিষয়ে ভালো ফলাফল পেতে আরো বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন হবে। ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ লেবু পানি খাওয়ার আগে অবশ্যই রেজিস্টার চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

FAQ: প্রশ্নোত্তর - লেবু খাওয়ার উপকারিতা

১। প্রশ্ন: রাতে ঘুমানোর আগে লেবু খেলে কি হয়?
উত্তর: রাতে ঘুমানোর আগে লেবু খেলে গ্যাস, এসিডিটি কমে হজম শক্তি বেড়ে যায়। শরীরকে আর্দ্র রেখে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে।
২। প্রশ্ন: গরম পানির সাথে লেবু খেলে কি হয়?
উত্তর: গরম পানির সাথে লেবু খেলে শরীর আর্দ্র থাকে, ওজন কমে, হজম শক্তি ভালো হয়, ত্বক উজ্জ্বল রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৩। প্রশ্ন: প্রতিদিন কয়টি লেবু খাওয়া উচিত?
উত্তর: প্রতিদিন স্বাভাবিক সাইজের ২ থেকে ৩টি লেবু খাওয়া নিরাপদ।
৪। প্রশ্ন: ঠাণ্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা কি?
উত্তর: ঠান্ডা পানিতে লেবু খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ত্বক উজ্জ্বল থাকে, শরীর সতেজ থাকে, হজম শক্তি বাড়ে এবং শরীর থেকে দূষিত বর্জ্য দূর হয়।
৫। প্রশ্ন: লেবু কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর?
উত্তর: না, লেবু কিডনির জন্য ক্ষতিকর নয়। বরং কিডনির পাথর বের করে দিতে পারে লেবু।

সর্বশেষ কথা - লেবু খাওয়ার উপকারিতা

আগে বলা হত, প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন- এই আপেল ও কলার চেয়েও লেবু বেশি উপকারী। আমাদের দেশে অত্যন্ত সহজলভ্য এবং সারা বছর পাওয়া যায় লেবু যা ঔষধি গুনে ভরপুর। এটি আমাদের দেহের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়, দেহকে সতেজ রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, ত্বককে আকর্ষণীয় ও উজ্জ্বল রাখে। সর্বোপরি লেবু পানি আমাদের দেহের দূষিত বর্জ্য বের করে দিয়ে দেহকে রোগমুক্ত রাখে। মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী এই ভেষজ ফলটির আমাদের উৎপাদন বাড়ানো ও রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত। প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা লেবু খাওয়ার বিভিন্ন গুনাগুন ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি লেখাটি পড়ে আপনি বেশ উপকৃত হয়েছেন। লেখাটি শেয়ার করার অনুরোধ রইল যেন আপনার বন্ধুবান্ধব উপকৃত হতে পারেন। কোন পরামর্শ থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আজকের লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url