পর্দা বা হিজাব নিয়ে হাদিস ও কোরআনের আয়াত
পর্দা বা হিজাব নিয়ে হাদিস ও কোরআনের আয়াত আলোচনা। আসসালামু আলাইকুম। আপনি কি পর্দা নিয়ে হাদিস, পর্দা নিয়ে কোরআনের আয়াত, পুরুষের পর্দা নিয়ে কোরআনের আয়াত ও হাদিস, পর্দা করা ফরজ, নারীর পর্দা এবং পর্দা নিয়ে ইসলামিক উক্তি, মুসলিম নারীদের হিজাবের গুরুত্ব বিষয়ে জানতে চান? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে পর্দা বা হিজাব নিয়ে হাদিস ও কোরআনের আয়াত শিরোনামে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
![]() |
পর্দা-হিজাব-নিয়ে-হাদিস-কোরআনের-আয়াত। ছবি-এআই |
ইসলামে পর্দা শব্দটি মূলত ফারসি। যার আরবি প্রতিশব্দ হিজাব। আর পর্দা বা হিজাবের বাংলা অর্থ ঢেকে রাখা, আবৃত করা, আড়াল, অন্তরায়, আবরণ, আচ্ছাদন, বস্ত্র দিয়ে সৌন্দর্য ঢেকে নেওয়া ও গোপন করা ইত্যাদি। ইসলামের পরিভাষায়, নারী ও পুরুষের উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জনের জন্য উভয়ের মধ্যে ইসলাম কর্তৃক নির্ধারিত যে আড়াল বা আবরণ রয়েছে তাকে পর্দা বা হিজাব বলা হয়। তাই আজকে আপনাদের জন্য পর্দা নিয়ে হাদিস ও কোরআনের আয়াত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পর্দা বা হিজাব নিয়ে হাদিস ও কোরআনের আয়াত
মূলতঃ ইসলাম বিশ্বজনীন এক চিরন্তন ও শাশ্বত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ এবং অত্যন্ত কার্যকর উপায় হল পর্দা বা হিজাব। হিজাব বা পর্দা যেমন নারীর সতীত্ব, ইজ্জত, আবরুর রক্ষাকবচ তেমনি সৌন্দর্য এবং মর্যাদার প্রতীক। নারীদের সম্মান, মর্যাদা ও সতীত্ব অক্ষুন্ন রাখতেই ইসলাম তাদের ওপর আরোপ করেছে পর্দা বা হিজাব পালনের বিধান। পর্দা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই ফরজ বিধান।
ইসলামে পর্দা বা হিজাব পালনের পদ্ধতি- ৩ প্রকার
১। বাড়িতে বা গৃহে অবস্থানকালীন পর্দা বা হিজাব।
২। বাইরে চলাফেরা বা গমনকালীন পর্দা বা হিজাব।
৩। বৃদ্ধা অবস্থায় পর্দা বা হিজাব।
পর্দা বা হিজাব নিয়ে কোরআনের আয়াত
ইসলামে নারী তার অভ্যন্তরীণ রূপ-লাবণ্য, সৌন্দর্য ও বাহ্যিক আকৃতি-গঠন বেগানা পুরুষের দৃষ্টি থেকে আড়ালে রাখার বিশেষ ব্যবস্থাই হল পর্দা বা হিজাব। আল-কোরআন ও হাদিসের অকাট্য দলিল প্রমাণের ভিত্তিতে নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি বিধানের মতোই সুস্পষ্ট এক ফরজ বিধান হল পর্দা। মহান আল্লাহ তায়ালা স্ত্রী, কন্যা ও মু'মিন নারীদের সম্পর্কে পবিত্র আল কুরআনে বলেন,
আরবি উচ্চারণ:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
বাংলা অর্থ:
হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যা গনকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্তপ্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল ,পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব: আয়াত নং ৫৯)
আরো পড়ুন: সন্তান লাভের দোয়া ও আমল সমূহ।
নারীদের সর্বাবস্থায় পর্দা করা ফরজ। এমনকি তাদের প্রধান আবাসস্থল গৃহ এবং এই গৃহে তারা কিভাবে পর্দা রক্ষা করে চলবে, তার দিক নির্দেশনাও মহান আল্লাহতালা আল কোরআনে বলে দিয়েছেন। নারীদের কাছ থেকে অন্য পুরুষদের কোন ব্যবহারিক বস্তু, পাত্র বা বস্ত্র ইত্যাদি নেওয়ার জরুরী প্রয়োজন হলে সরাসরি না নিয়ে বরং পর্দার আড়াল থেকে চেয়ে নিতে হবে। আবাস্থল গৃহে নবী পত্নীদের সাথে অবস্থান কালে পর্দা সম্পর্কে আল্লাহ এরশাদ করেন,
আরবি উচ্চারণ:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ إِلَّا أَن يُؤْذَنَ لَكُمْ إِلَىٰ طَعَامٍ غَيْرَ نَاظِرِينَ إِنَاهُ وَلَـٰكِنْ إِذَا دُعِيتُمْ فَادْخُلُوا فَإِذَا طَعِمْتُمْ فَانتَشِرُوا وَلَا مُسْتَأْنِسِينَ لِحَدِيثٍ ۚ إِنَّ ذَٰلِكُمْ كَانَ يُؤْذِي النَّبِيَّ فَيَسْتَحْيِي مِنكُمْ ۖ وَاللَّهُ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ ۚ وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاءِ حِجَابٍ ۚ ذَٰلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ ۚ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَن تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَن تَنكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِن بَعْدِهِ أَبَدًا ۚ إِنَّ ذَٰلِكُمْ كَانَ عِندَ اللَّهِ عَظِيمًا
বাংলা অর্থ:
হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি না দেওয়া হলে তোমরা খাওয়ার জন্য আহার্য-রন্ধনের অপেক্ষা না করে নবীর গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ কর, তবে অতঃপর খাওয়া শেষে আপনা আপনি চলে যেও। কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেও না। নিশ্চয়ই এটা নবীর জন্য পীড়াদায়ক। তিনি তোমাদের কাছে সংকোচ বোধ করেন; কিন্তু আল্লাহ সত্য কথা বলতে সংকোচ করেন না। তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর পত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ। (সূরা আহযাব: আয়াত নং ৫৩)
বিভিন্ন প্রয়োজনে নারীদের গৃহের বাইরে যেতে হয়। বাইরে কিভাবে নারীরা পর্দা করবে তার সুস্পষ্ট বর্ণনা মহান আল্লাহতালা আল কোরআনে উল্লেখ করেছেন। নারীদের পবিত্রতা এবং সতীত্ব রক্ষার্থেই তাদের ওপর পর্দা বা হিজাব বিধানের পূর্ণ অনুসরণ অপরিহার্য করা হয়েছে। পবিত্র আল কোরআনে নারীদের গৃহের বাইরে অবস্থানকালে পর্দার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
আরবি উচ্চারণ:
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ ۖ وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
বাংলা অর্থ:
তোমরা গৃহের অভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামাজ কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ! আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পাক পবিত্র রাখতে। (সূরা আহযাব: আয়াত নং ৩৩)
আরো পড়ুন: মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম।
আল্লাহর দেওয়া পর্দা বা হিজাব বিধানের প্রতি পূর্ণ সমর্পিত থাকাই হলো ঈমানের দাবি। এই বিধানকে হালকা কিংবা অমান্য করার কোন অবকাশ আমাদের নেই। কেননা ইসলামের শরীয়তের সুস্পষ্ট ফরজ বিধানের বিরোধিতা করার অধিকার কারোর নেই। সুতরাং মহান আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশাবলী, আদেশ-নিষেধ সকল মু'মিন পুরুষ বা নারী মানতে বাধ্য। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে এরশাদ করেন,
আরবি উচ্চারণ:
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا
বাংলা অর্থ:
আল্লাহ ও তার রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়। (সূরা আহযাব: আয়াত নং ৩৬)
![]() |
পর্দা-হিজাব-নিয়ে-হাদিস-কোরআনের-আয়াত। ছবি-এআই |
নারীগণ মাহারম পুরুষ অর্থাৎ এমন পুরুষ যাদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম বা নিষিদ্ধ, তারা ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের সামনে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারবেনা। এতে পর্দার অপরিহার্যতা প্রমাণিত করে। তাই পিতা, স্বামী, শশুর, পুত্র, আপন নারীগণ, দাস-দাসী ইত্যাদির সামনে পর্দার বিষয়ে মহান আল্লাহতালা কোরআনে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন,
আরবি উচ্চারণ:
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
বাংলা অর্থ:
ঈমানদার নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাত্যুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌন কামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা আন নূর আয়াত নং ৩১)
বয়স্ক নারীদের পর্দা বা হিজাব সম্পর্কে আল কোরআন
বয়স্ক বা বৃদ্ধ নারীদের জন্য ইসলামে পর্দা করার কথা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। যেই বৃদ্ধ নারীর প্রতি কেউ আকর্ষণ বোধ করেনা এবং সে বিবাহের যোগ্য নন তার জন্য পর্দার বিধান কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। মাহ হারাম ব্যক্তিদের কাছে যেসব অঙ্গ আবৃত করা জরুরি নয়, বৃদ্ধ নারীদের জন্য গায়রে মাহরাম পুরুষদের কাছেও সেগুলো আবৃত করা জরুরী নয়। তাই বয়স্ক নারীদের ব্যাপারে পর্দা করা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনে বলেন,
আরবি উচ্চারণ:
وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاءِ اللَّاتِي لَا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَن يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ ۖ وَأَن يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَّهُنَّ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
আরো পড়ুন: উম্মে দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম অর্থসহ।
বাংলা অর্থ:
বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না; তারা যদি তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের অতিরিক্ত বস্ত্র খুলে রাখে তাদের জন্য দোষ নেই, তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা আন নূর: আয়াত নং ৬০)
আশা করি, পর্দা বা হিজাব নিয়ে হাদিস ও কোরআনের আয়াত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন।
পর্দা বা হিজাব নিয়ে হাদিস
পর্দা নিয়ে হাদিস প্রসঙ্গে বলা যায়-আল্লাহর রাসূল সাঃ পর্দার ব্যাপারে বেশ সচেতন ছিলেন। প্রয়োজনের তাগিদে নারীদের জন্য বাড়ির বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য প্রয়োজনের খাতিরে ইসলাম নারীকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে সহিহ বুখারী এবং মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। পর্দার ফরজ বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাঃ তার স্ত্রী সাওদা রাঃ কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,
"প্রয়োজনে তোমাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে" ।(বুখারী: হাদিস নং ৪৭৯৫)
পর্দা বা হিজাব নিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস
১। যে নারী স্ব গৃহ, স্বামী গৃহ বা মায়ের বাড়ি ছাড়া অন্য স্থানে নিজের পর্দা রাখে (কাপড় না খুলে) সে তার ও তার রবের মধ্যকার পর্দা ও লজ্জাশীলতাকে বিদীর্ণ করে দেয়। (তিরমিজি: হাদিস নং ২৮০৩)
২। দেবর হল মৃত্যু সমতুল্য। (মৃত্যু থেকে মানুষ যেভাবে পলায়ন বা সতর্কতা অবলম্বন করে এক্ষেত্রে তাই করতে হবে)। (বুখারী: হাদিস নং ৫২৩২; তিরমিজি: হাদিস নং ১১৭১; মুসলিম: হাদিস নং ২১৭২)
৩। কোন অবৈধ নারীকে স্পর্শ করার চেয়ে মাথায় লোহার পেরেক পুঁতে যাওয়া ভালো। (আস সিলসিলাতুস সহিহাহ: ২২৬)
৪। কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নির্জনে সাক্ষাৎ হলে নিঃসন্দেহে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান। (তিরমিজি: হাদিস নং ১১৭১)
৫। তোমরা সেই মহিলাদের নিকট গমন করো না, যাদের স্বামীরা বিদেশে আছে। কারণ, শয়তান তোমাদের রক্ত শিরায় প্রবাহিত হয়। (তিরমিজি: হাদিস নং ১১৭২)
৬। রাসূল সাঃ আমাদেরকে নিষেধ করেছেন যে, আমরা যেন মহিলাদের নিকট তাদের স্বামীদের বিনা অনুমতিতে গমন না করি। (তিরমিজি: হাদিস নং ২৭৭৯)
৭। নারী গুপ্ত জিনিস, সুতরাং যখন সে বাড়ি হতে বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে রমণীয় করে দেখায়। (তিরমিজি: হাদিস নং ১১৩৭)
৮। নারীদের বেশধারী পুরুষের উপর অভিশাপ এবং পুরুষদের বেশধারিনী নারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ। (ইবনে মাজাহ: হাদিস নং ১৯০৪)
৯। কোন নারীর উপর তোমার দৃষ্টি পড়লে তার প্রতি বার বার বৃষ্টিপাত করোনা। বরং নজর অতিসত্বর ফিরিয়ে নিও কারণ, তোমার জন্য প্রথমবার ক্ষমা, দ্বিতীয় বার ক্ষমা নয়। (আহমদ: হাদিস নং ১৩৬৯)
১০। কোন মহিলা যেন মাহরাম পুরুষ ছাড়া একাকিনী সফর না করে, তার নিকট যেন মাহরাম ছাড়া কোন অপরিচিত পুরুষ প্রবেশ না করে। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাঃ! আমি অমুক অমুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য সৈন্য দলে নাম লিখিয়েছি অথচ আমার স্ত্রী হজের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন, এখন আমি কি করবো? রাসূল সাঃ তাকে উত্তর দিলেন, তুমি তার সাথে বের হও। (বুখারী: হাদিস নং ১৮৬২)
১১। রাসূল সাঃ মসজিদের বাইরে দেখতে পান যে, নারীরা রাস্তায় পুরুষের সাথে মিশে গেছেন। তখন আল্লাহর রাসূল সাঃ নারীদের বলেন, তোমরা অপেক্ষা কর কারণ, তোমাদের জন্য রাস্তার মাঝে হাঁটা উচিত নয়; তোমাদের জন্য হলো রাস্তার পাশ। একথা শুনে নারীরা দেয়াল ঘেঁষে হাঁটা শুরু করলে দেখা গেল তাদের অনেকের কাপড় দেয়ালের সাথে মিশে গেছে। (আবু দাউদ: হাদিস নং ৫২৭২)
১২। রাসূল সাঃ বলেন, দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী, যাদেরকে আমি কখনো দেখিনি। তারা ভবিষ্যতে আসবে। প্রথম শ্রেণী হবে একদল অত্যাচারী, যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক, যার দ্বারা তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় শ্রেণী হল সেই নারীর দল, যারা কাপড় পরিধান করবে কিন্তু তবুও তারা উলঙ্গ অবস্থায় থাকবে; নিজেরা অন্যদের প্রতি আকৃষ্ট করবে এবং অন্যদেরকেও তাদের প্রতি আকৃষ্ট করবে, যাদের মস্তক (খোঁপা বাধার কারণে) উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তার গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ বহু দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে। (মুসলিম: হাদিস নং ২১২৮)
১৩। আদম সন্তানের ওপর ব্যভিচারের কিছু অংশ লিপিবদ্ধ হয়েছে, সে অবশ্যই তার মধ্যে লিপ্ত হবে। দুই চোখের ব্যভিচার হল দৃষ্টি; দুই কানের ব্যভিচার হল শ্রবণ; মুখের ব্যভিচার হল অশ্লীল কথা বলা; হাতের ব্যভিচার হল অশোভন স্পর্শ করা এবং পায়ের ব্যভিচার হল খারাপ উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া। আর অন্তর আশা ও আকাঙ্ক্ষা করতে থাকে। লজ্জা স্থান তাকে বাস্তবায়ন করে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে। (মুসলিম: হাদিস নং ২৬৫৭)
১৪। প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী। আর নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন (পুরুষের) মজলিসের পাশ দিয়ে পার হয়ে যায় তাহলে সে এক পতিতা। এমনকি এই অবস্থায় নামাজের জন্য যেতেও নিষিদ্ধ। রাসূল সাঃ বলেন, যে মহিলা সেন্ট ব্যবহার করে মসজিদে যায়, সেই মহিলার গোসল না করা পর্যন্ত কোন নামাজ কবুল হবে না। (সহিহ আল-জামে আস সগীর আযযিয়াদাতুহ: ২৭০)
১৫। যে নারী তার মাথায় এমন চুল বাড়তি লাগায় যা তার মাথার নয়, সে তার মাথায় জালিয়াতি সংযোগ করে। (সহিহ আল-জামে আস সগীর আযযিয়াদাতুহ: ২৭০৫)
কেননা আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষকে হেদায়েতের দিকে ডাকে তার জন্য ঠিক ওই পরিমাণ সওয়াব রয়েছে, যে পরিমাণ পাবে তাকে অনুসরণকারীরা। (সহিহ মুসলিম: হাদিস নং ২৬৭৪, ৬৮ ০৪)
সুতরাং উপরোক্ত হাদিস গুলো নারীর সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পর-পুরুষের জন্য গোপনীয় বস্তু হওয়ার নির্বাচিত দলিল। চাই তা তার চেহারা হোক বা অন্য অঙ্গ হোক। আশা করি, পর্দা বা হিজাব নিয়ে হাদিস ও কোরআনের আয়াত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন।
মুসলিম নারীদের পর্দা বা হিজাবের গুরুত্ব
পর্দা বা হিজাব ইসলাম ধর্মে নারীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং নির্ভরতার প্রতীক। এটি শুধু পোশাক নয় বরং একজন নারীর চারিত্রিক আত্মমর্যাদা, লজ্জাশীলতা এবং আত্মসম্মান রক্ষার এক অভূতপূর্ব নিদর্শন। ইসলামে মুসলিম নারীদের পর্দা ও হিজাবের গুরুত্ব হিসেবে মহান আল্লাহতালা পবিত্র আল কোরআনের বেশ কয়েকটি জায়গায় কয়েকটি আয়াত নাজিল করেছেন। এর সাথে সর্বশেষ নবী ও রাসূল সাঃ নারীদের পর্দা ও হিজাবের ব্যাপারে বেশ কিছু হাদিসের মাধ্যমে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। পর্দা বা হিজাব শুধু হাত, পা, মাথা ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং একজন নারী যেমন আচরণ, কথাবার্তা ও চলাফেরায় ইসলামী শালীনতা বজায় রাখেন, সেটাও পর্দা ও হিজাবের অংশ। পর্দা বা হিজাব মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে নারীকে বিভিন্ন অশ্লীলতা থেকে দূরে রেখে মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করে সমাজে শালীনতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সুতরাং মুসলিম নারীদের পর্দা বা হিজাবের গুরুত্ব অনেক বেশি। আশা করি, পর্দা বা হিজাব নিয়ে হাদিস ও কোরআনের আয়াত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন।
আরো পড়ুন:
সর্বশেষ কথা -পর্দা বা হিজাব নিয়ে হাদিস ও কোরআনের আয়াত
পর্দা বা হিজাব মুসলিম নারীর আত্মপরিচয় এবং ইসলামী আদর্শে জীবন যাপনের বহিঃপ্রকাশ। এটি নারীর আত্মমর্যাদা রক্ষা করে এবং সমাজে শুদ্ধতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রিয় পাঠক আজকের পর্দা বা হিজাব নিয়ে হাদিস ও কোরআনের আয়াত শিরোনামে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি, লেখাটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। লেখাটি শেয়ার করে আপনার বন্ধুবান্ধবদের জানানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। আল্লাহ যেন আমাদেরকে পর্দা বা হিজাব মেনে চলার তৌফিক দান করেন-আমিন। লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url