রোগ মুক্তির দোয়া বাংলা ৬টি বিস্তারিত
রোগ মুক্তির দোয়া বাংলা ৬টি বিস্তারিত। আপনারা অনেকেই রোগমুক্তির দোয়া বাংলা, কোরআনে রোগ মুক্তির দোয়া, দ্রুত রোগ মুক্তির দোয়া, সন্তানের রোগ মুক্তির দোয়া ও আয়ুব নবীর রোগ মুক্তির দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। তাই আজকের লেখাটিতে আপনাদের জন্য রোগ মুক্তির ছয়টি দোয়া বাংলা নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করি লেখাটিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাথেই থাকবেন।
![]() |
রোগ-মুক্তির-দোয়া-বাংলা। ছবি- এআই |
রোগ মুক্তির দোয়া বাংলা
মহান আল্লাহ তা'য়ালার সৃষ্টির সেরা জীব হলো মানুষ। আর এই মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন বিভিন্ন রকম সুখ-শান্তি ও অসুখ-বিসুখ, রোগ সমস্যা দিয়ে। তাছাড়া মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানুষকে বিভিন্ন রকম নেয়ামত দান করেছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হল বান্দার সুস্থতা। এই সুস্থতা পাশাপাশি তিনি মানুষকে অসুস্থতাও মাঝেমধ্যে পেয়ে থাকেন। সুস্থতায় যেমন আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করা উচিত ঠিক তেমনি অসুস্থতা বা রোগ মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। পবিত্র আল কোরআনের মহান আল্লাহ তা'আলা ৬ (ছয়)টি আয়াত নাজিল করেছেন, যেগুলোকে আয়াতে শেফা বা রোগ মুক্তির আয়াত বলা হয়।
রোগ মুক্তির ৬টি দোয়া বাংলা
মহান আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাকে যেমন সুস্থ রাখেন ঠিক তেমনি বিভিন্ন রোগ দিয়েও অসুস্থ রাখতে পারেন। আবার এসব রোগ থেকে মুক্তির জন্য তিনি তাঁর বান্দার জন্য রোগ মুক্তির দোয়াও শিখিয়ে দিয়েছেন। আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহসহ আল কোরআন এর প্রথম সূরা ফাতিহা (আলহামদুলিল্লাহ) পাঠ করা রোগ মুক্তির জন্য সবচেয়ে কার্যকরী আমল। নিচে আল কোরআনে বর্ণিত রোগ মুক্তির ৬টি আয়াত বা রোগ মুক্তির ৬টি দোয়া বাংলায় উল্লেখ করা হলো-
১। সূরা ইউনুসের ৫৭ নম্বর আয়াত
আরবি উচ্চারণ:
وَشِفَاۤءࣱ لِّمَا فِی ٱلصُّدُورِ وَهُدࣰى وَّرَحۡمَةࣱ لِّلۡمُؤۡمِنِینَ
বাংলা উচ্চারণ:
ওয়া শিফাউ'ল লিমা ফিচ্ছুদু-রি ওয়া হুদাও ওয়া রাহমাতুল লিল মু'মেনিন।
বাংলা অর্থ:
এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত এবং রহমত মুসলমানদের জন্য।
২। সূরা তাওবার ১৪ নম্বর আয়াত
আরবি উচ্চারণ:
وَيَشْفِ صُدُوْرَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ
বাংলা উচ্চারণ:
ওয়া ইয়াশফি ছুদুরা ক্বাওমিম মু'মিনিন।
বাংলা অর্থ:
এবং হে আল্লাহ, মু'মিনদের (মুসলমানদের) অন্তর সমূহ শান্ত করে দিন।
৩। সূরা হা-মীম এর ৪৪ নম্বর আয়াত
আরবি উচ্চারণ:
قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَّشِفَاءٌ
বাংলা উচ্চারণ:
কুলহু ওয়া লিল্লাযীনা আমা-নু হুদাঁও ওয়া শিফাউন।
বাংলা অর্থ:
বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার।
৪। সূরা আশ্-শোয়ারার ৮০ নম্বর আয়াত
আরবি উচ্চারণ:
وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
বাংলা উচ্চারণ:
ওয়া ইজা মারি দতু ফা-হুয়া ইয়াশফি-নী।
বাংলা অর্থ:
এবং যখন আমি রোগাক্রান্ত/অসুস্থ হই, তখন তিনিই (আল্লাহ) আরোগ্য দান করেন।
৫। সূরা বনী ইসরাইলের ৮২ নাম্বার আয়াত
আরবি উচ্চারণ:
وَنُنَزِّلُ مِنَ ٱلۡقُرۡءَانِ مَا هُوَ شِفَاۤءࣱ وَّرَحۡمَةࣱ لِّلۡمُؤۡمِنِینَ
বাংলা উচ্চারণ:
ওয়া নুনাজ্জিলু মিনাল ক্বোরআ'নী মা হুয়া শিফাউ' ওয়া রাহমাতুল্ লিল মু'মিনি-ন।
বাংলা অর্থ:
আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মু'মিনের জন্য রহমত।
৬। সূরা নাহলের ৬৯ নম্বর আয়াত
আরবি উচ্চারণ:
َخۡرُجُ مِنۢ بُطُونِهَا شَرَابࣱ مُّخۡتَلِفٌ أَلۡوَانُهُ فِیهِ شِفَاۤءࣱ لِّلنَّاسِ
বাংলা উচ্চারণ:
ইয়া খরুঝু মিম বুতু- নিহা- শারা- বোম মুখ তালি ফুন, আল ওয়ানুহু ফি-হি শিফাউ লিন্না- সি।
বাংলা অর্থ:
তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার।
![]() |
রোগ-মুক্তির-দোয়া-বাংলা। ছবি- এআই |
উপরে উল্লেখিত আয়াতগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আল কোরআনে মু'মিনদের জন্য শেফা, রহমত প্রভৃতির কথা সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখিত। ইসলামিক চিন্তাবিদ ও বিশেষজ্ঞ আলেমগণ তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে বলে থাকেন, যদি কেউ কোন একটি ভর্তি পাত্র হাতে নিয়ে মুখের সামনে রেখে উল্লেখিত আয়াতগুলো পড়ে দম করে, ওই পানি ভর্তি পানি পান করলে মহান আল্লাহ তায়ালা সহজেই তাঁর বান্দাকে কঠিন রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি দেবেন- ইনশাল্লাহ।
রোগ মুক্তির দোয়া সম্পর্কে হাদিস
মানুষ অনেক সময় নানা রকম রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং অসুস্থ হয়। কেউ কেউ ছোট রোগে আবার কেউ বড় কোনো দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়। এ সময় মানুষ বেশ দুশ্চিন্তা গ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং মহান আল্লাহর কাছে আরোগ্য কামনা করে থাকে। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
"মহান আল্লাহ তায়ালা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি"। (বুখারী: খন্ড দ্বিতীয়, পৃষ্ঠা ৮৪৮: হাদিস নং ৫২৭৬; তাফসীরে কুরতুবী: খন্ড - দশম, পৃষ্ঠা নং ২৩৫)
অন্য এক হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা'দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু কে দেখতে গিয়ে ৩বার দোয়া করেন,
"হে আল্লাহ! আপনি সা'দকে সুস্থ করে দিন"। (সহিহ বুখারী: হাদিস নং ৫৬৫৯)
অনেক সময় দুশ্চিন্তা, রোগ, দরিদ্রতা ও কষ্ট দিয়ে মহান আল্লাহ তা'আলা মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন। এমনকি এসবের মাধ্যমে তাদের সগিরা গুনাহ মাফ করে থাকেন। এতে তার অনেক গুনাহ মাফ হয় এবং পরকালের হিসাব সহজ হয়। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
"মহান আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন"। (সহিহ বুখারী: হাদিস নং ৫৬৪৫)
সুস্থতা এবং অসুস্থতা দুটোই মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হয় এবং এ দুটিই মহান আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত। সুস্থতা দিয়ে মানুষ শুকরিয়া আদায় করেন এবং অসুস্থতা দিয়ে তার ছোটখাটো গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগীদের দেখে ৭বার নিচের দোয়াটি পাঠ করতেন-
বাংলা উচ্চারণ:
আসয়া লুল্লাহাল আজিম, রাব্বাল আর শিল আজিমি আই ইয়াশফিয়াকা।
বাংলা অর্থ:
আমি মহান আল্লাহর কাছে- যিনি মহা আরশের প্রতিপালক, তোমার সুস্থতা কামনা করছি। (সুনানে তিরমিজি: হাদিস নং ২০৮৩)
অন্য এক হাদিস থেকে জানা যায়, হযরত আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিচের দোয়াটি পড়ে অসুস্থ ব্যক্তিদের ঝাড়-ফুঁক করতেন-
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা রাব্বান নাসি মুজ হি বাল বাসি, ইশফি আনতাশ শাফি লা সাফিয়া ইল্লা আনতা, শিফা আন-লা ইয়ুগাদিরু সাকামা।
বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক, কষ্ট দূরকারী। আমাকে আরোগ্য দিন, আপনি আরোগ্যকারী; আপনি ছাড়া কোন আরোগ্যকারী নেই। এমন আরোগ্য দিন যেন কোন রোগ আবিষ্ট না থাকে। (সহিহ বুখারী: হাদিস নং ৫৭৪২)
আরেক হাদিস থেকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
সত্যের নিকটবর্তী থাকো এবং সরল, সোজা পথ অবলম্বন করো। মু'মিনের যে কষ্টই হোক না কেন, এমনকি তার গায়ে যদি কোন কাঁটা বেঁধে বা সে কোন বিপদে পতিত হয়-সবকিছুই তার গুনাহের কাফফারা হয়। (তিরমিজি: হাদিস নং ৩০৩৮)
আরো পড়ুন:
সর্বশেষ কথা -রোগ মুক্তির দোয়া বাংলা
সুস্থতা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত। অন্যদিকে অসুস্থতা, রোগ, কষ্ট ইত্যাদিও আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত। এই অসুস্থতা বা রোগের মাধ্যমে মুমিনদের পাপ মোচন হয়। সুতরাং সুস্থতার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ যেমন আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা হয় ঠিক তেমনি অসুস্থতা ও রোগের জন্য মহান আল্লাহর নিকট রোগ মুক্তির জন্য দোয়া করাও অত্যাবশক। অনেক সময় মহান আল্লাহ তায়ালা রোগ, কষ্ট দিয়ে তার বান্দাকে পরীক্ষা করে থাকেন। তার ধৈর্য পরীক্ষা করেন। আর বিপদ-আপদে আমরা মহান আল্লাহকে কতটুকু স্মরণ করি- সেটাও আল্লাহ দেখেন। সুতরাং যেকোনো রোগের দ্বারা আক্রান্ত হলে মহান আল্লাহর নিকট রোগ মুক্তির দোয়া করা উচিত। আশা করি লেখাটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। লেখাটি পড়ে আপনি প্রকৃত হয়ে থাকলে আপনার বন্ধু বান্ধব দের কাছে শেয়ার করার অনুরোধ রইল। লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url