টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া - বাথরুম

টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া - বাথরুম। আপনি কি টয়লেটে প্রবেশের দোয়া, টয়লেট থেকে বের হওয়ার দোয়া, বাথরুমে প্রবেশ করার দোয়া আরবি, বাথরুম থেকে বের হওয়ার দোয়া, পায়খানা থেকে বের হওয়ার দোয়া ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চান? আপনার উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া -বাথরুম শিরোনামের লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া
টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া। ছবি-এআই
আমরা অনেকেই টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া, টয়লেটে প্রবেশের দোয়া, টয়লেট থেকে বের হওয়ার দোয়া আরবি, বাথরুম থেকে বের হওয়ার দোয়া ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চাই। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া সম্পর্কে সকলের জানা উচিত। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত।

টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া - বাথরুম

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলামে প্রতিটি কাজের পূর্ণাঙ্গ নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া আছে। জীবনের এমন কোন সেক্টর নাই যে, সেখানে ইসলাম শিখিয়ে দেয়নি। তাই এখানে একজন মুসলিম বাথরুমে কিভাবে প্রবেশ করবে এবং কিভাবে বের হবে- তার সবকিছু দোয়া ও আমল ইসলাম জানিয়ে দিয়েছে। ইসলামী নিয়ম-নীতি মেনে জীবন পরিচালনা করলে তার সবকিছুই ইবাদত বলে গণ্য হয়।

টয়লেটে (বাথরুমে) প্রবেশের দোয়া

এক হাদীস থেকে জানা যায় রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
'আমি তোমাদের জন্য পিতার মত। আমি তোমাদের সবকিছু শিক্ষা দিয়ে থাকি। তোমরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে কেবলাকে সামনে বা পেছনে দিয়ে বসবে না এবং ডান হাত দিয়ে কখনো শৌচ কার্য সম্পাদন করবে না। তিনি তিনটি (মাটির) ঢিলা ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন এবং শুকনা গোবর ও হাড্ডি দিয়ে ঢিলা করা থেকে নিষেধ করতেন'। (আবু দাউদ: হাদিস নং ৭)
টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া
টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া। ছবি-এআই
অন্যান্য পশু-পাখির ন্যায় প্রাকৃতিক প্রয়োজনে মানুষকে টয়লেটে যেতে হয়। ইসলামে প্রস্রাব-পায়খানার নির্দিষ্ট আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। টয়লেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রথমে বাম পা এবং পরে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। টয়লেটে প্রবেশের আগে ও পরে দোয়া পড়ার কথা বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
নোংরা স্থানগুলো জ্বীন ও শয়তানদের থাকার জায়গা। অতএব তোমাদের মধ্যে কেউ যখন প্রস্রাব পায়খানায় প্রবেশ করবে সে যেন নিচের দোয়াটি বলে-

আরবি উচ্চারণ:
اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবাইস।
বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুষ্ট পুরুষ জ্বীন ও দুষ্ট নারী জ্বীনের অনিষ্ট থেকে। (বুখারী: হাদিস নং ১৪২)

টয়লেট থেকে বের হওয়ার দোয়া

টয়লেটের ভেতরে অর্থাৎ বাথরুমের ভেতরে প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদন করার পর বাথরুম থেকে বের হয়ে পড়তে হয়-
'গুফরানাকা' অর্থাৎ 'হে আল্লাহ! আপনার কাছে ক্ষমা চাই'।
অতঃপর প্রথমে ডান পা এবং পরে বাম পা দিয়ে টয়লেট বা বাথরুম বা পায়খানা থেকে বের হতে হয়। তারপর নিচের দোয়াটি পড়তে হয়-

আরবি উচ্চারণ:
 الحمدُ للهِ الذي أَذْهَبَ عَنَّى الأَذَى وعَافَانِي
বাংলা উচ্চারণ:
আলহামদুলিল্লা হিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানি।
বাংলা অর্থ:
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি আমার থেকে কষ্টদায়ক বিষয়সমূহ দূর করেছেন এবং আমাকে নিস্তার দিয়েছেন। (আবু দাউদ: হাদিস নং ৩০; ইবনে মাজাহ: হাদিস নং ৩০১)

টয়লেটে (বাথরুমে) কথা বলা নিষেধ

টয়লেট (বাথরুম) করা অবস্থায় কথা বলা ও জিকির করা নিষেধ। তবে একান্ত প্রয়োজনীয় কথার বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন। টয়লেটের ভেতরে হাঁচি উঠলে হাঁচির জবাব দেওয়া, সালামের উত্তর দেওয়া, মোয়াজ্জিনের আজানের জবাব দেওয়া যাবে না। এগুলো সব মাকরূহে তানজিহি; তবে হারাম নয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, 
'এক ব্যক্তি নবী সাঃ এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি প্রস্রাব করছিলেন। লোকটি নবী সাঃ কে সালাম দিলেন। তবে তিনি (নবী সাঃ) সালামের উত্তর দেননি'। (মুসলিম: হাদিস নং ৩৭০)

টয়লেট করার কিছু করণীয় আদব বা শিষ্টাচার সুন্নত সমূহ-

  • টয়লেট বা বাথরুমে খালি পায়ে না যাওয়া। স্যান্ডেল বা জুতা পায়ে দিয়ে প্রস্রাব-পায়খানায় যাওয়া। (কানযুল উম্মাল)
  • প্রথমে বাম পা এবং পরে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা।
  • টয়লেটে প্রবেশ করার পর উল্লেখিত দোয়া পড়া।
  • কিবলার দিকে মুখ বা পিছন করে না বসা। (বুখারী)
  • টয়লেটে মাথা ঢেকে রাখা। টুপি রুমাল ওড়না বা কাপড় ইত্যাদি দ্বারা মাথা ঢেকে রাখা।
  • পুরোপুরি কাপড় উঠিয়ে উলঙ্গ হয়ে না বসা।
  • প্রস্রাব পায়খানা দাঁড়িয়ে না করা। (বুখারী ও মুসলিম)
  • পানি ব্যবহারের পূর্বে টিস্যু বা মাটির পবিত্র ঢিলা (কুলুখ) ব্যবহার করা।
  • শুকনো গোবর বা হাড় ঢিলা হিসাবে ব্যবহার না করা।
  • অবশ্যই বাম হাত দ্বারা ঢিলা ও পানি ব্যবহার করা। (বুখারী)
  • শৌচকার্য সম্পন্ন হওয়ার পর প্রথমে ডান পা এবং পরে বাম পা টয়লেট থেকে বের করা।
  • সর্বশেষ টয়লেট থেকে বের হওয়ার দোয়া পাঠ করা।
আরো পড়ুন:

সর্বশেষ কথা - টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুষ্ট শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেন যে সব স্থানে মানুষ প্রাকৃতিক প্রয়োজনে যায়, সে সকল স্থানে শয়তান চলাচল করে। কেননা শয়তান সাধারণত নাপাক, নোংরা, ময়লা ও আবর্জনা আমায় জায়গা দিয়ে চলাফেরা করে। মোট কথা- নোংরা, আবর্জনার মধ্যে শয়তান মানুষের স্বাস্থ্য হানি ঘটায়। কোন কোন আলেম এও বলেছেন যে, মানব দেহের রোগ জীবাণু শয়তানের দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। তাই শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে আমাদের টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া নিয়মিত পাঠ করতে হবে। আশা করি আজকের লেখাটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। লেখাটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো যেন আপনার বন্ধু-বান্ধবও উপকৃত হতে পারেন। লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url