দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার আমল জেনে রাখুন

দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার আমল জেনে রাখুন। আপনি কি দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার আমল, দোয়া কবুলের ইস্তেকফার, দোয়া কবুলের আয়াত, দোয়া কবুল হওয়ার সূরা, দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান? আপনার উত্তর যদি হাঁ হয়, তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।
দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার আমল
দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার আমল। ছবি - এআই
বিভিন্ন কারণে আমরা মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা বা দোয়া করে থাকি। অনেক সময় বালা-মুসিবত বা প্রয়োজনের তাগিদে আমরা মহান আল্লাহর কাছে দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার আশা নিয়ে দোয়া করে থাকি। তবে সেই সকল দোয়া কবুল হবে কিনা, এটা নিয়ে আমরা মোটেই নিশ্চিত নই। তারপরও আমরা এটাও জানি, মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে কখনো নিরাশ করেন না। চলুন জেনে নেওয়া যাক দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার আমল গুলো।

দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার আমল 

আমরা যদি পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে সঠিক নিয়মে, সঠিক সময়ে ও সঠিক পদ্ধতিতে আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা ও আস্থা রেখে মনোযোগ সহকারে দোয়া করি, তাহলে অতি দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পবিত্র কোরআনের সূরা, আয়াত ও রাসূলুল্লাহ সাঃ এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, দোয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। পরম করুণাময় দয়ালু মহান আল্লাহর নিকট দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার জন্য সাধারণত কয়েকটি আমল বা শর্ত রয়েছে।

দোয়া কবুল হওয়ার আমল

দোয়াকে সকল ইবাদতের মূল ধরা হয়। আর মুসলমান হিসেবে আমরা কমবেশি সবাই মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি। তবে তাড়াতাড়ি দোয়া কবুল হওয়ার জন্য দোয়া করার সময় বেশ কয়েকটি বিষয়ের প্রতি গভীরভাবে খেয়াল রাখা উচিত। এগুলোকে বিজ্ঞ আলেমগণ দোয়া কবুলের শর্ত ও আদব হিসেবে উল্লেখ করেন।

দোয়া কবুলের আমলসমূহ

মহান আল্লাহর নিকট দোয়া কবুল হওয়ার জন্য বেশ কিছু আদব-কায়দা ও শর্ত রয়েছে। কেননা এই সকল শর্ত বা আমল পূরণ না করলে দোয়ার সঠিক পদ্ধতি পূর্ণ হয় না। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, দোয়া কবুলের আমল সমূহ সম্পর্কে।
  • পবিত্রতা অর্জন।
  • হালাল রিজিক উপার্জন।
  • আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা।
  • দুই হাত তুলে দোয়া করা।
  • দুরুদ শরীফ পাঠ করা।
  • আল্লাহর গুণাবলীর মাধ্যমে দোয়া করা।
  • তাড়াহুড়া না করা এবং বারবার চাওয়া।

পবিত্রতা অর্জন

আমরা জানি, পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। সঠিকভাবে পাক-পবিত্রতা অর্জনের পর একান্ত ভাবে দোয়া করলে মহান আল্লাহ তা'আলা সেই দোয়া ইনশাআল্লাহ কবুল করবেন। এজন্য দোয়া শুরু করার পূর্বে উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করা উচিত।

হালাল রিজিক উপার্জন

হালাল রিজিক উপার্জন দোয়া কবুলের অন্যতম প্রধান শর্ত। হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
"দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত ও পুরো শরীর ধুলো মলিন। সে আকাশের দিকে হাত প্রশস্ত করে বলে, হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রভু! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হালাল নয় এমনকি তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এমতাবস্থায় তার দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে"? (তিরমিজি: হাদিস নং ২৯৮৯)
দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার আমল
দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার আমল। ছবি - এআই

আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা

দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার আমল হিসেবে আরো একটি অন্যতম শর্ত হচ্ছে মহান আল্লাহ পাকের উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা রাখা। কেননা ঈমানের সহিত মহান আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থা না রাখলে সেই দোয়া আল্লাহর নিকট কবুল হয় না। এই প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
"তোমরা আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে দোয়া কর। জেনে রেখো, আল্লাহ অমনোযোগী ও আসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না"। (তিরমিজি: হাদিস নং ৩৪৭৯)
সুতরাং দোয়া কবুলের জন্য মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা রেখে দোয়া করা উচিত।

দুই হাত তুলে দোয়া করা

মহান আল্লাহর প্রতি নম্রতা, বিনয় ও দাসত্ব প্রকাশ করার জন্য দোয়ার সময় দুহাতের তালু আসমানের দিকে রাখতে হবে এবং হাত সম্পূর্ণ প্রসারিত করে দু হাতের মধ্যে দুই/এক আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁকা রাখতে হবে। দোয়া করার সময় মনে রাখতে হবে, আপনি মহান আল্লাহর দরবারে হাত তুলেছেন, তাই এখানে কোন ধরনের অমনোযোগিতা বা আদবের খেলাপি করা যাবে না। আর দোয়া শেষে দুহাত তুলে দোয়া করে অবশেষে হাত দুটি মুখমণ্ডলে মুছে নিতে হবে। হাদিস শরীফে রয়েছে, 
"যে হাত আল্লাহর দরবারে উত্তোলিত হয়, তা একেবারে শুণ্য অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে তিনি লজ্জাবোধ করেন"।

দুরুদ শরীফ পাঠ করা

দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার আমল এর পূর্বশর্ত মধ্যে আরেকটি শর্ত হলো দুরুদ শরীফ পাঠ করা। আল্লাহর প্রশংসা করা ও দুরুদ শরীফ পাঠ করার পর দোয়া করলে সেই দোয়া কবুল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মহান আল্লাহর প্রশংসা যেমন, 'আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন' বলে দোয়া শুরু করা। হযরত আসমা বিনতে ইয়াজীদ রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
"যে ব্যক্তি দোয়া করার পূর্বে দুরুদ শরীফ পড়ে, তার দোয়া অবশ্যই কবুল হয়। মহান আল্লাহ তা'আলা অসীম দয়ালু, দোয়ার কিছু অংশ কবুল করে অপর অংশ কবুল না করা তার স্বভাব নয়"।

এই হাদিসের সারমর্ম এই যে, দুরুদ শরীফ কবুল করে দোয়ার অবশিষ্ট অংশ অর্থাৎ প্রার্থনীয় বিষয় অগ্রাহ্য করেন না। শেষ পর্যন্ত উভয় অংশই আল্লাহ কবুল করে থাকেন।
ওপরে এক হাদিস থেকে জানা যায় হযরত আবু সোলায়মান দারানী রাঃ বলেন,
"যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কোন দোয়া করে, তার উচিত প্রথমে দরুদ শরীফ পড়া এবং দুরুদ শরীফ পড়ে দোয়া শেষ করা। কেননা আল্লাহ উভয় দুরুদ কবুল করেন। (- কিমিয়ায়ে সাআদাত)

আল্লাহর গুণাবলীর মাধ্যমে দোয়া করা

যেইসব নাম দিয়ে আল্লাহর বড়ত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশিত হয় সেগুলোকেই ইসমে আজম বলে। আল্লাহর গুণাবলী সমৃদ্ধ সুন্দর নাম বা আসমাউল হুসনা দিয়ে তাঁকে ডেকে দোয়া করা উত্তম। মহান আল্লাহ তা'আলা কুরআনে ইরশাদ করেন,
"আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নামে ডাকো, আর যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করো"। (সূরা আরাফ: আয়াত নং ১৮০)

হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, আমি একদিন রাসূলুল্লাহ সঃ এর নিকট বসেছিলাম। একজন লোক সেখানে নামাজ পড়ছিল। সে তার দোয়ার মধ্যে আরজ করল, হে আমার আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আমার প্রয়োজন প্রার্থনা করছি এই উসিলায় যে, প্রশংসা ও কোন কীর্তন আপনার জন্যই উপযুক্ত। আপনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আপনি বরং দয়ালু ও অসীম অনুগ্রহ তথা এবং পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলের স্রষ্টা। আমি আপনার কাছেই আপনার অনুগ্রহ চাই। ইয়া হাইয়্যু, ইয়া কাইয়্যু! ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম!
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, 'এই বান্দা আল্লাহর ইসমে আজমের উসিলায় দোয়া করেছে। এ উসিলায় আল্লাহর কাছে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয় এবং আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইলে, মহান আল্লাহ তা'আলা দান করেন'। (তিরমিজি)

অন্য এক হাদিস হতে জানা যায়, হযরত ফুজালা ইবনে উবায়দা রাঃ বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দোয়া করতে শুনলেন। সে দোয়ায় মহান আল্লাহ পাকের প্রশংসা করলো না এবং রাসূলুল্লাহ সাঃ এর ওপর দুরুদও পাঠ করল না। এতে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, লোকটি তড়িঘড়ি করে দোয়া করেছে। তিনি লোকটিকে ডেকে আনলেন এবং তাকে উপস্থিত লোকদের লক্ষ্য করে বললেন, 'যখন তোমাদের কেউ নামাজ পড়ে, দোয়া করার পূর্বে তার উচিত মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করে নেওয়া এবং রাসূলের সাঃ প্রতি দরুদ শরীফ পাঠ করা। এরপর যা ইচ্ছা তা চাওয়া'। (তিরমিজি ও আবু দাউদ)

তাড়াহুড়া না করা এবং বারবার চাওয়া

তাড়াতাড়ি দোয়া কবুল হওয়ার আমল হিসেবে আল্লাহ তাআলার কাছে বারবার চাওয়া এবং তাড়াহুড়া না করা উচিত। দুনিয়া এবং আখেরাতের কল্যাণকর যা ইচ্ছা তাই চাওয়া যাবে, তবে দোয়ার ফলাফলের জন্য তাড়াহুড়া করা ঠিক হবে না। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
"বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে। বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করে"।
জিজ্ঞেস করা হলো, "ইয়া রাসূলুল্লাহ সাঃ! আপনি তাড়াহুড়া বলতে কি বুঝাচ্ছেন? তিনি বললেন, বলে যে, আমি দোয়া করেছি, আমি দোয়া করেছি কিন্তু আমার দোয়া কবুল হতে দেখিনি। তখন সে ব্যক্তি উদ্যম হারিয়ে ফেলে এবং দোয়া ছেড়ে দেয়"। (সহিহ বুখারী: হাদিস নং ৬৩৪০)
আরো পড়ুন:

সর্বশেষ কথা -দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার আমল

দোয়া হল সকল ইবাদতের মূল ইবাদত। দোয়া ছাড়া আর কোন কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না। আর সৎ কাজ ছাড়া অন্য কোন কিছুই হায়াত বাড়াতে পারে না। (তিরমিজি ২১৩৯) দোয়ার কিছু আদব-কায়দা আছে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পবিত্রতা অর্জনের পর মহান আল্লাহর তালার কাছে দোয়া করলে সেই দোয়া আল্লাহ কবুল করবেন। তাই আমাদের উচিত বিনয়ের সাথে দুই হাত তুলে দোয়া করা এবং মিনতি ভরা কন্ঠে দোয়া করা। মিনতি ও নম্রতার সঙ্গে দোয়া করলে তা ইবাদত হিসেবে মহান আল্লাহর নিকট গণ্য করা হয়। আশা করি, দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার আমল শিরোনামের লেখাটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url