চোখ উঠলে করণীয় কি? জানুন কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা

চোখ উঠলে করণীয় কি? জানুন কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা।আস সালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আপনি কি চোখ উঠার কারণ, লক্ষণ ও চোখ উঠার ঘরোয়া চিকিৎসা, বাচ্চাদের চোখ উঠলে করণীয় কী, চোখ উঠার ড্রপের নাম ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চান? তাহলে আজকের চোখ উঠলে করণীয় কি? জানুন কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো।
চোখ-উঠার-ঘরোয়া-চিকিৎসা
চোখ-উঠার-ঘরোয়া-চিকিৎসা। ছবি - এআই
আমাদের দেশে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে চোখ উঠার প্রবণতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে বর্ষার শেষে এই প্রকোপ বেশি লক্ষ্য করা যায়। চোখ উঠার পর চোখে ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ খচখচ করা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। চোখ উঠলে অনেকেই উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিন্তু চোখ উঠলে আতঙ্কিত না হয়ে চোখ উঠলে করণীয় কি? জেনে নিন - চোখ উঠার কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে।

চোখ উঠলে করণীয় কি?

চোখ উঠলে করণীয় কি? উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত না হয়ে জেনে নিন চোখ ওঠার কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে। দিন দিন চোখ উঠা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। আমাদের চোখের সাদা অংশের 'কনজাংটিভা' নামক চোখের পর্দার প্রদাহকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় কনজাংটিভাইটিস (Conjunctivitis) বা চোখ উঠা রোগ বলে। চোখ উঠা রোগটি মূলত ভাইরাস জনিত একটি ছোঁয়াচে রোগ। অনেক সময় ভাইরাসের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণেও চোখ ওঠা রোগ হতে পারে। এ সময় আতঙ্কিত না হয়ে চোখ উঠলে কী কী করণীয় হতে পারে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
  1. হ্যান্ড ওয়াস বা সাবান পানি দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর হাত পরিষ্কার রাখতে হবে।
  2. বারবার সাবান পানি ব্যবহার না করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেও হাত জীবাণু মুক্ত রাখতে হবে।
  3. আক্রান্ত চোখ ভেজা থাকলে তা পরিষ্কার টিস্যু পেপার বা সুতি কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে।
  4. ব্যবহৃত টিস্যু পেপার বা সুতি কাপড় অবশ্যই ঢাকনাযুক্ত ময়লা ঝুড়িতে ফেলতে হবে। কেননা উক্ত টিস্যু পেপার বা সুতি কাপড় থেকে সংক্রমণ সহজেই ছড়াতে পারে।
  5. আ্যালার্জি জনিত কারণে চোখ চুলকালে চোখ ঘষা বা রগড়ানো যাবেনা।
  6. কোনভাবেই খালি হাতে চোখে হাত দেওয়া যাবে না।
  7. অন্য কারো ব্যবহৃত আই ড্রপ বা চোখের ড্রপ কখনোই ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এতে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।
  8. চোখ উঠলে অবশ্যই কালো চশমা ব্যবহার করুন। কেননা কালো চশমা আলোর অস্বস্তি কমাবে এবং ধুলোবালি, ধোঁয়া, ময়লা ইত্যাদি থেকে চোখ মুক্তি পাবে।
  9. চোখ উঠা রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় রোগের ব্যবহৃত কাপড়-চোপড়, দৈনন্দিন ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও প্রসাধনী সামগ্রী অন্যদের মোটেই ব্যবহার করা যাবে না। কারণ অন্যরা এর ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে।
  10. একই কারণে অন্যদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত জিনিসপত্র, কাপড়-চোপড়, প্রসাধনী সামগ্রীও ব্যবহার করা যাবে না।
  11. সংক্রমণ এড়াতে চোখ উঠা রোগীকে অবশ্যই আলাদা ঘর ও বিছানায় অবস্থান করতে হবে।
  12. ভিটামিন সি যুক্ত খাবারের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খান।
  13. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন এবং বিশ্রাম নিন।
  14. চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিঅ্যালার্জিক ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।
  15. রেজিস্টার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন।

বিশেষ সতর্কতা:

চোখ উঠা রোগে আক্রান্ত হলে কখনোই নিজে নিজে ওষুধের দোকান থেকে স্টেরয়েড জাতীয় চোখের ড্রপ চোখে ব্যবহার করবেন না। এতে আপনার চোখের গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে এবং চোখ সারা জীবনের জন্য অন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই চোখ উঠলে অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
চোখ-উঠলে-করণীয়-কি
চোখ-উঠলে-করণীয়-কি। ছবি - এআই

চোখ উঠার কারণ কি?

চোখ উঠার কারণ কি - এ বিষয়ে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। অত্যন্ত ছোঁয়াচে এই রোগটি হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ দেখা গেছে। তাই চোখ উঠার কারণ গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
  • সাধারণত যেই আবহাওয়ায় বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে সে সময়টাই চোখ উঠা রোগ বেশি লক্ষ্য করা যায়।
  • চোখ উঠার আরো একটি কারণ হলো আ্যালার্জি এবং ধুলোবালি-ময়লা।
  • সাধারণত ভাইরাসের আক্রমণেই চোখ উঠা রোগটি বেশি হয়ে থাকে। তবে ভাইরাসের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারণেও কারো কারো চোখ উঠে।
  • চোখ উঠা রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় সতর্কতার অভাবেও চোখ উঠতে পারে।
  • অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং অপরিচ্ছন্ন জীবন যাপনও চোখ উঠা রোগের অন্যতম একটি কারণ।

চোখ উঠার লক্ষণ

চোখ উঠার লক্ষণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
  • চোখের সাদা অংশ বা কনজাংটিভা লাল বা রক্ত লাল বর্ণ ধারণ করতে পারে।
  • আক্রান্ত চোখে পানি ঝরে, চোখ ব্যথা করে এবং চোখ ফুলে যেতে পারে।
  • প্রথমে এক চোখ আক্রান্ত হয় এবং পরে অন্য চোখেও তা ছড়িয়ে পড়ে।
  • চোখ জ্বালাপোড়া করে এবং খচখচে অস্বস্তি ভাব দেখা দেয়।
  • কারো কারো চোখে আলো একেবারেই সহ্য হয় না।
  • চোখ উঠলে চোখে পিচুটি (ময়লা) জমতে পারে।
  • অনেক সময় সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার পর চোখের পাতা লেগে যায়।
  • চোখের কর্নিয়া আক্রান্ত হলে অনেক সময় চোখে ঝাপসা দেখা যায়।
  • অনেক সময় চোখ চুলকাতে পারে।

চোখ উঠার ঘরোয়া চিকিৎসা

চোখ উঠা রোগটি মূলত ভাইরাসজনিত দ্রুত সংক্রমিত একটি মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ। পরিবারের একজন এ রোগে আক্রান্ত হলে সবাই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু এ রোগে আক্রান্ত হলে বিভ্রান্ত বা আতঙ্কিত না হয়ে ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা করলেই এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক চোখ উঠার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে:
  • চোখ উঠা আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও কাপড়-চোপড় অন্য কেউ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • প্রথমেই একটি সাদা পরিস্কার নরম সুতির কাপড় বা কিছু পরিষ্কার তুলা নিন।
  • একটি পাত্রে কিছু পরিমাণ গরম পানি নিন।
  • এরপর সেই সাদা পরিষ্কার কাপড় বা তোলা সেই গরম পানিতে ডুবিয়ে চেপে নিন।
  • তারপর সেই ভেজা কাপড় আক্রান্ত চোখের পাতা এবং চোখের পাপড়ির আলতো করে ঘষে পরিষ্কার করে নিন।
  • দুটি চোখের জন্য আলাদা আলাদা পাত্র ও কাপড় বা তুলা ব্যবহার করুন।
  • দিনে কয়েকবার এই পদ্ধতিটি করলে চোখ উঠা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সুফল পাবেন।
  • চোখে গরম সেঁক দেওয়ার কয়েক মিনিট পর একইভাবে বরফ বা ঠান্ডা পানিতে পরিষ্কার তোলা বা কাপড় ভিজিয়ে চেপে চোখের পাতা ও পাপড়ি হালকা ভাবে ঘষে নিন। এতেও উপকার পাবেন।
  • চোখ উঠলে এ সময় বেশিক্ষণ মোবাইল দেখা, কম্পিউটার স্ক্রিনে থাকা কিংবা ছোট ছোট লেখাপড়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা এগুলো চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  • সূর্যের আলো ও ধুলোবালি থেকে মুক্তি পেতে কালো চশমা ব্যবহার করুন।
প্রিয় পাঠক, সাধারণত চোখ ওঠা রোগ ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। আপনি যদি উপরে উল্লেখিত চোখ উঠার ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করেন তাহলে দ্রুতই চোখ উঠা রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। বিশেষ প্রয়োজনে রেজিস্টার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

চোখ উঠার ড্রপ এর নাম - চোখ উঠলে কি ড্রপ দিতে হয়

চোখ মানব দেহের একটি স্পর্শকাতর অঙ্গ। তাই এই সেনসিটিভ অঙ্গে চোখ উঠা রোগ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিচের চোখের ড্রপগুলো ব্যবহার করতে পারেন:
  • Cloram Eye Drop
  • Afenicol Eye Drop
  • Eyemox Eye drop
  • Iventi Eye Drop
  • Floromox Eye Drop
  • Optimox Eye Drop
  • Moxquin Eye Drop
  • Moxibac Eye drop ইত্যাদি।

FAQ: প্রশ্নোত্তর - চোখ উঠলে করণীয় কি

১। প্রশ্ন: চোখ ওঠা কতদিন থাকে?
উত্তর: চোখ ওঠা রোগটি সাধারণত ৭ - ১০ দিন স্থায়ী থাকতে পারে। তবে ৮ দিন পর চোখ উঠারক ভালো হতে শুরু করে।
২। প্রশ্ন: শিশুদের চোখ উঠলে কি করণীয়?
উত্তর: শিশুদের চোখ উঠলে পরিষ্কার সাদা কাপড় উষ্ণ গরম পানিতে ডুবিয়ে পড়ে তার চেপে শিশুর চোখ ভালোভাবে মুছে দিন। শিশুর হাত পরিষ্কার রাখুন। অবশ্যই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
৩। প্রশ্ন: চোখ ভালো রাখার জন্য কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত?
চোখ ভালো রাখার জন্য ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন- পালং শাক, গাজর, সবুজ শাকসবজি, মিষ্টি কুমড়া, দুধ, ডিম; ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- লেবু, কমলা লেবু; ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ যেমন- সামুদ্রিক মাছ, স্যামন মাছ, ছোট মাছ, টুনা মাছ ইত্যাদিসহ পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।
৪। প্রশ্ন:? চোখের জন্য ক্ষতিকর কোনটি
উত্তর: সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি, অতিরিক্ত ডিভাইসে স্ক্রিন টাইম, প্রচুর চিনিযুক্ত খাবার, অপর্যাপ্ত পানি পান এবং অপর্যাপ্ত ঘুম চোখের জন্য ক্ষতিকর।
৫। প্রশ্ন: চোখ উঠার ড্রপ এর নাম কি?
উত্তর: চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে চোখ উঠার ড্রপ Floromox Eye Drop, Iventi Eye Drop ইত্যাদি ২ ফোটা করে দৈনিক ২ থেকে ৩ বার নিরাপদে ব্যবহার করতে পারেন। এই ড্রপ গুলো ১ দিনের শিশু থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক লোক ব্যবহার করতে পারবেন।

সর্বশেষ কথা - চোখ উঠলে করণীয় কি? জানুন কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা

চোখ উঠা রোগ হল মূলত ভাইরাস জনিত ইনফেকশন যা দ্রুত ছড়ায় এবং অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে কনজাংটি ভাইটিস বলে। অনেক সময় এই রোগটি ভাইরাসের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমেও ছাড়াতে পারে। এটি একটি চোখের সাধারণ রোগ যা ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে এ সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম সহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা খুবই জরুরী। যেহেতু এটি ছোঁয়াচে তাই অন্যদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে এবং নিজেকে দূরে রাখতে হবে। চোখ উঠা মারাত্মক আকার ধারণ করলে অবশ্যই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ রেজিস্টার ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা চোখ উঠলে করণীয় কি? জানুন কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি লেখাটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। লেখাটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো যেন অন্যেরাও উপকৃত হতে পারেন। এ বিষয়ে কোনো পরামর্শ থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। আজকের লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পরের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url