সর্দি-কাশি দ্রুত সারানোর প্রাকৃতিক উপায় জেনে নিন
সর্দি-কাশি দ্রুত সারানোর প্রাকৃতিক উপায় জেনে নিন।আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক আপনি কি নাকের সর্দি কমানোর উপায়, অতিরিক্ত কাশি কমানোর ঘরোয়া উপায়, ঘন ঘন সর্দি লাগা কিসের লক্ষণ, সর্দি-কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আজকের সর্দি কাশি দ্রুত সারানোর প্রাকৃতিক উপায় লেখাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
সর্দি-কাশি-দ্রুত-সারানোর-ঘরোয়া-উপায়। ছবি - এআই
সর্দি-কাশি সাধারণত একটি সাধারণ অসুখ। কিন্তু এই সর্দি-কাশি হলে খুব অস্বস্তি এবং বিরক্তি লাগে। তাই অনেকেই সর্দি-কাশি দ্রুত সারানোর জন্য বিভিন্ন রকম ঘরোয়া উপায় হিসেবে প্রাকৃতিক সমাধান জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু সঠিকভাবে প্রাকৃতিক সমাধান না জানার কারণে দ্রুত সর্দি-কাশি সারানো সম্ভব হয় না। তাই আজকের লেখায় তাদের জন্য খুব সহজেই যেন সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তার সমাধান নিয়ে হাজির হয়েছে।
সর্দি-কাশি দ্রুত সারানোর প্রাকৃতিক উপায়
সর্দি-কাশি দ্রুত সারানোর প্রাকৃতিক সমাধান খুঁজছেন? তাহলে জেনে নিন ঠান্ডা-কাশির কারণ, লক্ষণ ও সর্দি-কাশি থেকে মুক্তির সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ঘরোয়া সমাধান। ঋতু পরিবর্তনের সময় ভাইরাস এবং বিভিন্ন প্রকার অণুজীব সক্রিয় থাকে। এ সময় ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা বাড়তে পারে। এ সকল সমস্যা সমাধানে হুট করেই এন্টিবায়োটিক ওষুধ না খেয়ে কিছু প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাহলে চলুন সর্দি কাশি দ্রুত সারানোর প্রাকৃতিক উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
সর্দি-কাশি দূর করতে তুলসী পাতা
সর্দি-কাশি দূর করতে বহু প্রাচীনকাল থেকেই তুলসী পাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তুলসী পাতার বহু প্রাকৃতিক গুনাগুনের কারণে আজও অনেকের বাড়িতেই তুলসী গাছ দেখতে পাওয়া যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে তুলসী পাতার রস বাচ্চাদের খাওয়ালে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আবার বড়দের জন্য তুলসী পাতার চা বা তুলসী পাতা সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে খেলেও সর্দি, কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আরো পড়ুন: খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়
প্রথমে কয়েকটি তুলসী পাতা থেঁতো করে এর সাথে কয়েক ফোটা খাঁটি মধু মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার খেলে সর্দি-কাশি ভালো হয়ে যাবে।
সর্দি-কাশি সমাধানে মধু
ঠান্ডা-কাশি উপশমে মধু ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মধু সর্দি-কাশি কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান। আপনার যদি গ্যাস-এসিডিটির সমস্যা না থাকে তাহলে সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা কুসুম গরম পানির সঙ্গে মধু এবং লেবু মিশিয়ে খেতে পারেন।
![]() |
সর্দি-কাশি-দ্রুত-সারানোর-প্রাকৃতিক-উপায়। ছবি - এআই |
এতে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং ঠান্ডা, কফ থেকে অনেকটা মুক্তি পাবেন। আবার আপনি যদি ১ গ্লাস হালকা গরম পানিতে ২ টেবিল চামচ মধুর সাথে ১/২ লেবুর রস এবং আদার রস মিশ্রণ করে প্রতিদিন ১ থেকে ২ বার খান তাহলেও আপনার গলা ব্যথা এবং কাশি দূর হয়ে যাবে। তাছাড়া ১ টেবিল চামচ মধু দিনে ৩ বার করে খেলেও আপনার কফ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তবে এখানে উল্লেখ্য যে ১ বছর বয়সের নিচে শিশুদের জন্য মধু খাওয়ানো উচিত নয়।
আরো পড়ুন: বাচ্চাদের সর্দি কাশি সারানোর ঘরোয়া উপায়
সর্দি-কফ উপশমে আদা
সর্দি-কাশি দূর করতে আদা বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এজন্য প্রথমে আদা কেটে ছোট ছোট টুকরো করে নিন। তারপর সেই ছোট আদা টুকরো সাথে সামান্য লবন মিশিয়ে কিছুক্ষণ পরপর চিবিয়ে খান। এতে আপনার সর্দি কাশি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তাছাড়া লাল চা এর সাথে আদা মিশিয়ে খেলেও আপনি কাশিতে বেশ উপকার পাবেন। সুতরাং যাদের সর্দি-কাশির সমস্যা, গলা ব্যথা, নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় তারা আদার রস বা আদা চা খেলে খুব ভালো উপকার পাবেন। সুতরাং সর্দি-কাশি দূর করতে ঘরোয়া উপায় হিসেবে আপনি আদা ব্যবহার করতে পারেন।
সর্দি-কাশি নিয়ন্ত্রণে বাসক পাতা
সর্দি-কাশি দ্রুত সারানোর প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে আপনি বাসক পাতা বেছে নিতে পারেন। কেননা বাসক পাতার প্রাকৃতিক গুনাগুন সর্দি কফ নিরাময় অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য প্রথমে কয়েকটি বাসক পাতা পানিতে সেদ্ধ করে নিন। তারপর সেই পানি ভালোভাবে ছেঁকে নিয়ে কুসুম গরম অবস্থায় খেলে আপনার সর্দি কাশি উপশম হবে। প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় বাসক পাতার রস খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। অবশ্য বাসক পাতার তেতো স্বাদ কমাতে আপনি বাসক পাতার রসের সাথে সামান্য পরিমাণে চিনি মিশিয়ে সেবন করতে পারেন। সুতরাং সর্দি-কাশি দ্রুত সারানোর প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় হিসেবে বাসক পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
সর্দি-কাশি দূরীকরণে লবঙ্গ
প্রাকৃতিক উপাদান লবঙ্গ আমরা সাধারণত মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। এই লবঙ্গের জীবাণু নাশক গুণের কারণে সর্দি-কাশিতে লবঙ্গ প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আপনার সর্দি জনিত কারণে খুসখুসে কাশি হতেই থাকলে আপনি একটা লবঙ্গ মুখে রেখে দিন। তারপর মাঝেমধ্যে একটু চাপ দিয়ে লবঙ্গ থেকে রস বের করে নিন এবং সেই রস গিলে ফেলুন। দেখবেন এই লবঙ্গ রস আপনার গলায় বেশ আরাম দেবে এবং কাশি দূর হয়ে যাবে। অনেক সময় লাল রঙের চায়ের সাথে ২/১ টি লবঙ্গ মিশিয়ে খেলে সর্দি, কাশিতে উপকার পাওয়া যায়। সুতরাং সর্দি কাশি দ্রুত সারানোর প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় হিসেবে আপনি লবঙ্গ নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন।
সর্দি-কাশি দূর করতে দুধ ও হলুদের মিশ্রণ
হলুদের ঔষধি গুনাগুন সর্দি কাশি দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য প্রথমে দুধ কে গরম করে নিন। এরপর অল্প পরিমাণ হলুদ দুধের সাথে মিশিয়ে নিন। তারপর হলুদ মিশ্রিত দুধ পান করুন। এতে আপনার ঠান্ডা কাশি অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। সুতরাং সর্দি কাশি দ্রুত সারানোর প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে আপনি হলুদ ও দুধের মিশ্রণ পান করতে পারেন।
সর্দি কাশি সারাতে খাদ্য তালিকা
সর্দি কাশি দ্রুত সারাতে খাদ্য তালিকা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা কথায় আছে- 'যা না করে বৈদে, তা করে পথ্যে'। তাই আপনার খাবার তালিকায় সরিষা ও কালোজিরা রাখতে পারেন। কালোজিরার ভর্তা বেশ উপকারী এবং এটি সর্দি কাশি সহ নানা রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। তাছাড়া সর্দি কাশি উপশমের জন্য আপনি সরিষার তেল দিয়ে টমেটোর ভর্তা, আলুর ভর্তা ইত্যাদি তৈরি করে খেতে পারেন। অন্যদিকে সরিষার শাক এমন কি সরিষার ভর্তা ঠান্ডা কাশিতে বেশ উপকার করে থাকে। কেননা সরিষা আমাদের ফুসফুসের স্বাভাবিক কাজে সহায়তা করে থাকে।
আরো পড়ুন: নাকের সর্দি দূর করার ট্যাবলেট এর নাম কি
এ সময় বন্ধ নাক খুলে দিতে পারে এই সরিষার শাক বা ভর্তা। তাছাড়া ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার আমাদের নাক ও ফুসফুসের সংক্রমণ থেকে মুক্তি দিতে পারে। তাই এক্ষেত্রে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন মিষ্টি কুমড়ার বিচি, মিষ্টি আলু ইত্যাদি খেলে সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সাথে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ রসুনের সঙ্গে খেলে কিম্বা বিভিন্ন খাবারে খেলেও সর্দি, কাশি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
সর্দি-কাশি সারাতে লবণ পানি গড়গড়া
লবণ পানি গড়গড়া করলে গলা ব্যথা এবং কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এজন্য প্রথমে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি নিন। এরপর এর সাথে ১/২ চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। এরপর মিশ্রণটি ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে গলায় গড়গড়া করতে থাকুন। এই পুরনো ও ঘরোয়া পদ্ধতিটি সর্দি-কাশি কমাতে ও গলা ব্যথা দূর করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
সর্দি-কাশির কারণ
সর্দি-কাশির অন্যতম প্রধান কারণ হলো ভাইরাসের সংক্রমণ। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে সাত ধরনের ভাইরাসের কারণে সর্দি হয়ে থাকে। সাধারণত শীতের সময় এ ভাইরাসগুলো অতি দ্রুত সংক্রমিত হয়। তাই এ সময় মানুষের সর্দি কাশি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। ভাইরাস সংক্রমণের ফলে আমাদের নাসারন্ধ্রের ভেতর অতিরিক্ত শ্লেষ্মা জমা হয়, সেটিকে আমরা সর্দি হিসেবে জানি। ডাক্তারী ভাষায় একে 'রাইনোরিয়া' বলা হয়।
সর্দি কাশির লক্ষণ
সর্দি কাশির সাধারণ লক্ষণ গুলো হল-
- নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
- নাক দিয়ে শ্লেষ্মা বের হওয়া
- গলার স্বরভঙ্গ হওয়া
- কাশি হওয়া
- গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা হওয়া
- মন-মেজাজ খিটখিটে হওয়া
- শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া
- শরীরে হালকা ব্যথা হওয়া ইত্যাদি।
FAQ: প্রশ্নোত্তর - সর্দি-কাশি দ্রুত সারানোর প্রাকৃতিক উপায়
১। প্রশ্ন: ঘন ঘন সর্দি হওয়ার কারণ কি?
উত্তর: ঘন ঘন সর্দি হওয়ার কারণ হলো ভাইরাসের সংক্রমণ, এলার্জি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি।
২। প্রশ্ন: কাশি কত দিনে ভালো হয়?
উত্তর: কাশি সাধারণত ১৪ দিন থেকে ২২ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
আরো পড়ুন: শিশুর শ্বাসকষ্ট দূর করার ঘরোয়া উপায়
৩। প্রশ্ন: কোন খাবার খেলে সর্দি কমে?
উত্তর: সাধারণত আদা, মধু, গরম পানি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে সর্দি কমে।
৪। প্রশ্ন: কি খেলে কাশি ভালো হয়?
উত্তর: সাধারণত মধু, তুলসীপাতা, আদা ও লবণ. দুধ ও হলুদ মিশ্রিত তরল খেলে কাশি ভালো হয়।
সর্বশেষ কথা - সর্দি-কাশি দ্রুত সারানোর প্রাকৃতিক উপায়
সর্দি-কাশি দ্রুত সারানোর প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় হিসেবে আপনি মধু, তুলসী পাতা, আদার রস, রসুন, দুধ ও হলুদের মিশ্রণ, লবণ পানির গড়গড়া ইত্যাদি করতে পারেন। প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা সর্দি কাশি তাড়াতাড়ি করার জন্য বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করি ব্যাপারটি আপনি ভালোভাবে বসতে এবং জানতে পেরেছেন। লেখাটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে থাকলে আপনার বন্ধুবান্ধবদের সাথেও শেয়ার করুন যেন তারা উপকৃত হতে পারেন। লেখার মধ্যে কোন ভুল ত্রুটি থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আজকের লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক আন্তরিক ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url