দোয়া কুনুত আরবি, বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ ফজিলত জেনে নিন

দোয়া কুনুত আরবি, বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ ফজিলত জেনে নিন।আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আপনি কি দোয়া কুনুত আরবি, দোয়া কুনুত বাংলা অর্থসহ, দোয়া কুনুত ছবি ও দোয়া কুনুত এর ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান? তাহলে আজকের দোয়া কুনুত আরবি, বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ ফজিলত লেখাটি শুধু আপনার জন্য।
দোয়া-কুনুত-আরবি-বাংলা-উচ্চারণ-অর্থসহ-ফজিলত
দোয়া কুনুত আরবি, বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ ফজিলত।
দোয়া কুনুত হলো মূল্যবান দোয়া গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দোয়া। সুতরাং আপনি যদি দোয়া কুনুত আরবি, বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে লেখাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ রইল। আশা করছি, আপনি আমাদের সাথেই থাকবেন। তাহলে চলুন দোয়া কুনুত আরবি, বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

দোয়া কুনুত আরবি, বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ ফজিলত

অন্যতম ফরজ ইবাদত দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সর্বশেষ ওয়াক্ত এশার নামাজের পর থেকে শেষ রাতের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় বিতর নামাজ পড়া যায়। আর বিতর নামাজ পড়ার তৃতীয় বা শেষ রাকাতে (বিজোড় রাকাত) রুকুতে যাওয়ার আগে বা রুকু থেকে উঠে দুই হাত তুলে বা বেঁধে দোয়া কুনুত পড়তে হয়। তবে যতদূর জানা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর সালাতে দোয়া কুনুত মাঝে মাঝে পাঠ করতেন।

দোয়া কুনুত আরবি

দোয়া কুনুত আরবি বিতর নামাজের শেষ বিজোড় রাকাতে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য সূরা মেলানোর পর রুকুতে যাওয়ার আগে বা রুকু থেকে ওঠার পরে দুই হাত তুলে বা বুকে হাত বেঁধে দোয়া কুনুত পাঠ করতে হয়। দোয়া কুনুত মুলত প্রার্থনা স্বরূপ। এই দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে বান্দা তার গুরুত্বপূর্ণ আবেদন গুলো তুলে ধরেন। এই দোয়ার আবেদনে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি খুশি হয়ে তার সকল চাওয়া-পাওয়া পূর্ণ করে দেন। দুনিয়ার সকল বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত করে দেন এবং তার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, দোয়া কুনুত আরবি সম্পর্কে।

দোয়া কুনুত আরবি উচ্চারণ

দোয়া কুনুত আরবি উচ্চারণ আপনাদের সুবিধার জন্য আরবিতে নিচে উল্লেখ করা হলো। আশা করি আপনারা নিচের দোয়া কুনুত আরবি উচ্চারণ খুব সহজেই শিখে নিতে পারবেন। তাহলে চলুন দোয়া কুনুতের আরবি উচ্চারণ সম্পর্কে জেনে নিই ।

দোয়া কুনুতের আরবি উচ্চারণ-

اللّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِيْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ، اللّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ
وَلَكَ نُصَلِّيْ وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعٰى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشٰى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ

দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ

দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ আপনাদের সুবিধার জন্য বাংলায় নিচে উল্লেখ করা হলো। আশা করি আপনারা নিচের দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ অর্থ সহ খুব সহজেই জেনে নিতে পারবেন। তাহলে চলুন দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ জেনে নিই।

বাংলা উচ্চারণ:

আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাইনুকা ওয়া নাস্তাগফিরুকা, ওয়ানু মিনু বিকা ওয়া নাতা ওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুসনি আলাইকুম খাইর। ওয়া নাস কুরুকা ওয়ালা নাক ফুরুকা, ওয়া নাখলাউ উয়ানাত রুকু মাইয়্যাফ যুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়া কানা'বুদু ওয়ালাকা নুছল্লি, ওয়ানাস জুদু ওয়া ইলাইকা নাসআ, ওয়া নাহ্ ফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আজা-বাকা, ইন্না আজা-বাকা বিল কুফফারি মূলহিক্।

দোয়া কুনুত বাংলা অর্থ

দোয়া কুনুত আরবি, বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ ফজিলত অনেকেই জানেন না। তাই তাদেরকে দোয়া কুনুতের বাংলা অর্থ জানানোর জন্য এই লেখাটি তুলে ধরা হলো। কেননা দোয়া কুনুত আরবি উচ্চারণের পাশাপাশি বাংলা অর্থ সকলেরই জানা উচিত। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক দোয়া কুনুতের বাংলা অর্থ।

দোয়া কুনুতের বাংলা অর্থ:

হে আল্লাহ! আমরা আপনারই সাহায্য চাই। আপনারই নিকট ক্ষমা চাই। আপনার এই প্রতি ঈমান রাখি, আপনার ওই ওপর ভরসা করি এবং সকল কল্যাণ আপনারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা আপনার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না এবং যারা আপনার অবাধ্য হয় তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদেরকে পরিত্যাগ করি। হে আল্লাহ! আপনার ওই দাসত্ব করি,, আপনারই জন্য নামাজ পড়ে এবং আপনাকেই সেজদা করি।। আমরা আপনার এদিকে দৌড়াই এবং এগিয়ে চলি। আমরা আপনারই রহমত আশা করি এবং আপনার অজাবকে ভয় করি। আর আপনার আজাব তো কাফেরদের জন্যই নির্ধারিত!
দোয়া-কুনুত-ছবি
দোয়া-কুনুত-ছবি

দোয়া কুনুত এর ফজিলত

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য দোয়া কুনুত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। প্রত্যেক ঈমানদার মুসলিমেরই বিতর সালাতে এই দোয়া পড়তে হয়। দোয়া কুনুত হলো গভীর রাতে মহান আল্লাহর সঙ্গে বান্দার একান্তই আলাপন। এই দোয়া কুনতের ফলে মহান আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দার উপর খুশি হোন। এই দোয়া কুনুত পাঠের মাধ্যমে ওয়াজিব পালন হওয়ার সাওয়াব পাওয়া যায়। তবে বিতর নামাজে দোয়ায়ে কুন ুত হুবহু রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ণিত শব্দে হওয়া ওয়াজিব নয়। বরং মুসল্লিগণ কোরআনের যেসব সূরা বা আয়াতে দোয়া আছে এমন কিছু সূরা বা আয়াত সম্পর্কিত অন্য যে কোন দোয়াও পড়তে পারেন। কেননা মাযহাব মতে, কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই। যে কোন দোয়া পড়লে সেটা দোয়া কুনুত হয়ে যাবে। তবে দোয়া কুনুতের কিছু ফজিলত রয়েছে যেমন-
আরো পড়ুন: 
মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার নামাজের অভ্যন্তরে যেকোনো দোয়া কবুল করে থাকেন। সুতরাং দোয়া কুনুতের মাধ্যমে আমরা নামাজের অভ্যন্তরে আল্লাহতালার কাছে চাইতে পারি। যেহেতু দোয়া কুনুত নির্ধারিত এবং সীমাবদ্ধ দোয়া নয়, তাই মহান আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনের কথা ব্যক্ত করে তাঁর কাছে সবকিছু মন খুলে চাওয়া যায়। আর বান্দা যখন মন খুলে মহান আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবেসে সালাতে দাঁড়িয়ে দোয়া কুনুত পড়ে তখন দয়ালু মহান আল্লাহ তা'আলা তা কবুল করে নেন। যখন মুসলিমদের উপর কোন বিপদ-আপদ আসতো তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া কুনুত পড়তেন। সুতরাং মুসলিম হিসেবে আমাদেরও দোয়া কুনুত নিয়মিত পাঠ করা উচিত। আশা করি, দোয়া কুনুত আরবি, বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন।

দোয়া কুনুত পড়ার নিয়ম

দোয়া কুনুত এশার নামাজের পর বিতর নামাজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝেমধ্যে পাঠ করতেন। বিতর নামাজ সাধারণত বিজোড় সংখ্যা হয়ে থাকে। সুতরাং এক/তিন/পাঁচ/সাত/এগারো রাকাত বিতর নামাজের শেষ রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করে অন্য সূরা মিলানোর পর রুকুতে যাওয়ার আগে বা রুকু থেকে উঠে দুই হাত তুলে বা দুই হাত বেঁধে দোয়া কুনুত পাঠ করতে হয়। তবে বেশিরভাগ তিন রাকাতই বিতর নামাজ পড়া হয়।

দোয়া কুনুত পাঠ সম্পর্কিত হাদিস

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে ছিলাম। তিনি রাতে শয্যা ত্যাগ করলেন এবং দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। এরপর উঠে বিতর সালাত পড়লেন। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা আ'লা পাঠ করলেন। এরপর রুকু ও সিজদা করলেন। দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও সূরা কাফিরুন পাঠ করলেন এবং রুকু-সিজদা করলেন। তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও সূরা ইখলাস পাঠ করলেন। এরপর রুকুর আগে দোয়া কুনুত পড়লেন। (কিতাবুল হুজ্জাহ: ১/২০১; নাসবুর রায়াহ: ২/১২৪)

আল্লাহর রাসূল সাঃ বিতর নামাজ পড়তেন। বিতর নামাজ পড়ার জন্য স্ত্রীকেও মাঝেমধ্যে জাগিয়ে তুলতেন। প্রথম রাকাতে সূরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। আবার কখনো কখনো সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পড়তেন। (বুখারী: হাদিস নং ৫১২, ৯৯৭; মুসলিম: হাদিস নং ৭৪৪; মুসনাদে আহমদ: হাদিস নং ২৭২০; তিরমিজি: হাদিস নং ৪৬২)

হযরত আসিমুল আহওয়াল রহঃ বলেন, আমি হযরত আনাস রাঃ কে নামাজে দোয়া কুনুত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, হ্যাঁ, নামাযে দোয়া কুনুত পড়বে। আমি বললাম, রুকুর আগে না পরে? তিনি বললেন, রুকুর আগে। আমি বললাম, অমুক ব্যক্তি আমাকে আপনার সম্পর্কে খবর দিয়েছে যে, আপনি বলেছেন রুকুর পরে। তিনি বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। রাসূলুল্লাহ সাঃ রুকুর পরে মাত্র একমাস দোয়া কুনুত পড়েছেন। (বুখারী: হাদিস নং ৩৭৯৬)
আশা করি, দোয়া কুনুত আরবি, বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন।
আরো পড়ুন:

সর্বশেষ কথা -দোয়া কুনুত আরবি, বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ ফজিলত

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজে সূরা ফাতিহা, অন্য সূরা মিলানো, দরুদ শরীফ, তাশাহুদ, দোয়া মাসুরা সহ বিভিন্ন দোয়া পড়তে হয়। এসব দোয়ার মধ্যে অন্যতম একটি আমল হল-দোয়া কুনুত। দোয়া কুনুতকে অন্যান্য মূল্যবান দোয়া গুলোর মধ্যে থেকে অন্যতম মনে করা হয়। এটি সাধারণত বিতর নামাজের তৃতীয় রাখাতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা মিলানোর পরে রুকুতে যাওয়ার আগে বা পরে দুই হাত তুলে বা বেঁধে পাঠ করা হয়। আশা করি, দোয়া কুনুত আরবি, বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন। আপনি যদি লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে লেখাটি শেয়ার করুন যেন তারাও উপকৃত হতে পারেন। লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url