মধু পূর্ণিমা কবে - মধু পূর্ণিমা পালন করার কারণ ২০২৫

মধু পূর্ণিমা কবে - মধু পূর্ণিমা পালন করার কারণ ২০২৫।প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আপনারা যারা আজকে জানতে চেয়েছেন মধু পূর্ণিমা কবে - মধু পূর্ণিমা পালন করার কারণ ২০২৫ সম্পর্কে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো মধু পূর্ণিমা কবে - মধু পূর্ণিমা পালন করার কারণ ২০২৫। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে নিম্নে জেনে নেওয়া যাক, মধু পূর্ণিমা কবে - মধু পূর্ণিমা পালন করার কারণ ২০২৫। 
মধু-পূর্ণিমা-কবে - মধু-পূর্ণিমা-পালন-করার-কারণ
মধু-পূর্ণিমা-কবে - মধু-পূর্ণিমা-পালন-করার-কারণ
মধু পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই দিনটি বৌদ্ধ ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক এবং তাৎপর্যপূর্ণময় দিন। প্রতিবছর ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই মধু পূর্ণিমা উৎসব পালন করা হয়। তাই মধু পূর্ণিমার অন্য নাম ভাদ্র পূর্ণিমাও বলা যেতে পারে। তাহলে মধু পূর্ণিমা কবে - মধু পূর্ণিমা পালন করার কারণ ২০২৫ চলুন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

মধু পূর্ণিমা কবে - মধু পূর্ণিমা পালন করার কারণ ২০২৫

বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো সাধারণত পূর্ণিমা তিথিতেই হয়ে থাকে। কেননা, তথাগত বুদ্ধের উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলি পূর্ণিমাতে সংঘটিত হয়েছিল। এবছর ২০২৫ সালের মধু পূর্ণিমা হবে ৬ই সেপ্টেম্বর রোজ শনিবার। অষ্টমী, অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে বৌদ্ধরা উপোসথ পালন করেন। বৌদ্ধ ধর্মের ভিক্ষুসংঘরা নির্দিষ্ট বিহারে আষাঢ়ে পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত অবস্থান করার নিয়ম রয়েছে। এই তিন মাস বৌদ্ধ উপাসক-উপাসিকারা উপোসথ শীল গ্রহণ করেন। কারণ ধর্মীয়ও নৈতিক জীবন গঠনে উপোসথ শীল পালন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

মধু পূর্ণিমা তারিখ কত ২০২৫

বৌদ্ধ ধর্ম মতে, মধু পূর্ণিমা সাধারণত ভাদ্র মাসেই বেশ অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকে। তাই মধু পূর্ণিমার অপর নাম ভাদ্র পূর্ণিমা বলা হয়ে থাকে। এই দিনটি উপলক্ষ্যে বৌদ্ধ সম্প্রদায় বুদ্ধ পূজা, বাতি প্রজ্জ্বলন, সীবলী পূজা, শীল গ্রহণ, মধু ও ভেষজদান, সংঘদান, ভিক্ষুসংঘকে পিণ্ডদান সহ নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সুসম্পন্ন করে থাকে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক মধু পূর্ণিমার বাংলা ও ইংরেজি তারিখ কত?

বাংলা তারিখ: ১৪৩২ বঙ্গাব্দের ২২শে ভাদ্র, রোজ শনিবার।
ইংরেজি তারিখ: ২০২৫ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর, রোজ শনিবার।
চন্দ্র বছর তারিখ: ১৪৪৭ হিজরীর ১৩ই রবিউল আউয়াল, রোজ শনিবার।

মধু পূর্ণিমা পালন করার কারণ

বৌদ্ধ ধর্মের ভগবান বুদ্ধ সর্বমোট ৪৫ বর্ষাব্রত পালন করেন। তিনি এই ৪৫ বর্ষাব্রতের দশম বর্ষাবাস যাপন করেন পারলেয়্য গভীর অরণ্যে। এ সময় ভগবান বুদ্ধের মৈত্রী প্রভাবের কারণে অনেক বন্য পশু-প্রাণী তাঁর পোষ মানে। পারিলেয়্য বনে বর্ষা যাপন কালে একটি একা চারি হাতি প্রতিদিন বুদ্ধের সেবা যত্ন করতো। বনের সুমিষ্ট ফল-মূল সংগ্রহ করে বুদ্ধকে সেবা যত্ন করত। এভাবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে হাতিটি বুদ্ধের সেবা ও পূজা করতে লাগলো।
মধু-পূর্ণিমা-কবে - মধু-পূর্ণিমা-পালন-করার-কারণ
মধু-পূর্ণিমা-কবে - মধু-পূর্ণিমা-পালন-করার-কারণ
সেই একই পারিলেয়্য বোনের এক বানর ওই হাতিটির এই সেবা, পূজা ও দানের দৃশ্য গাছের মগডাল থেকে বসে বসে দেখতো। বানরের মনেও হাতির এই দৃশ্য দেখে ভগবান বুদ্ধকে কিছু দান ও পূজা করার বাসনা জাগ্রত হল। সেই বানর হাতিটির চেয়েও উত্তম কিছু করার চিন্তাভাবনা করল। পরে তার মনে জাগ্রত হল যে তার পাশে হঠাৎ দেখতে পাওয়া একটি মৌচাক ওই ভগবান বুদ্ধকে দান করবেন। সেই মোতাবেক বানর ভগবান বুদ্ধকে মধু সমৃদ্ধ মৌচাক দ্বারা সেবা করলেন এবং বুদ্ধ তা থেকে তৃপ্তি সহকারে মধু পান করলেন। 

ভগবান বুদ্ধের এই মধু পান করা দেখে বানর অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে গাছের ডাল ও ডাল লাফাতে লাগলো। সেই সময়টি ছিল বাংলা ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথি। পারিলেয়্য বনে হস্তিরাজ কর্তৃক ভগবান বুদ্ধের সেবা প্রাপ্তি ও বানরের মধুদানের কারণে এই দিনটি বৌদ্ধদের কাছে স্মরণীয় এবং আনন্দ উৎসবমুখর পূণ্যময় একটি দিন। ভগবান বুদ্ধকে পূর্ণিমাতে মধু পান করানোর কারণে একে মধু পূর্ণিমা বা ভাদ্র পূর্ণিমা বলে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন মধু পূর্ণিমা কে কেন্দ্র করে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে। বানরের মধুদানের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে পূর্ণিমাটি মধু পূর্ণিমা বলে বিখ্যাত হয়।

মধু পূর্ণিমা পালন করার ইতিহাস

বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ তখন কোশাম্বিতে ভিক্ষু-সংঘ সহ অবস্থান করার সময় বিনয়ধরপন্থী ভিক্ষু এবং সূত্রধরপন্থী ভিক্ষুর মধ্যে বিনয় সম্পর্কিত একটি বিষয় নিয়ে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। এই নিয়ে উভয়পন্থী ভিক্ষুদের মধ্যে মত দ্বৈততা চরম আকার ধারণ করলে ভগবান বুদ্ধ তাদের বিবাদ মীমাংসা করার প্রচেষ্টা করেন। কিন্তু উভয়পক্ষ তাদের স্ব স্ব মতের পক্ষে অনড় অবস্থান গ্রহণ করেন। ফলে বিবাদ মীমাংসা করা সম্ভব না হওয়ায় তথাগত বুদ্ধ তখন কোশাম্বি ত্যাগ করে পারলেয়্য নামক গভীর অরণ্য বা বনে গমন করেন। সেখানে তিনি দশম বর্ষাবাস পালন করেন।

পারিলেয়্য নামক গভীর বনে বর্ষাযাপন কালে একটি একাচারী হস্তীরাজ প্রতিদিন ভগবান বুদ্ধের সেবা যত্ন করতো। অরণ্যের সুমিষ্ট ফলমূল সংগ্রহ করে বুদ্ধকে সেবা ও পূজা করত। হস্তীরাজ কর্তৃক ভগবান বুদ্ধকে এরকম সেবা করতে দেখে একই বনের একটি বানর তারও মনে বুদ্ধকে পূজা করার ইচ্ছা হল। বানরটি হস্তীরাজের চেয়েও অধিক ও আকর্ষণীয় সেবা ও পূজা করার লক্ষ্যে চিন্তা-ভাবনা করতে লাগলো। এই সব ভাবনা করতে করতে সে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম থেকে জেগে হঠাৎ সে তার পাশে একটি মধু সমৃদ্ধ মৌমাছি বিহীন মৌচাক দেখতে পেল। 

বাংলা ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বানরটি সেই মৌচাক সংগ্রহ করে ভগবান বুদ্ধ কে উপহার দিলেন। মৌচাকে মৌমাছির ছানা ও ডিম থাকার কারণে ভগবান বুদ্ধ প্রথমে মধু পান করতে পারলেন না। বানর তা বুঝতে পেরে মৌচাকটি নিয়ে ছানা ও ডিম পরিষ্কার করে পুনরায় বুদ্ধকে উপহার করলে এবার ভগবান বুদ্ধ তৃপ্তি সহকারে মধু পান করেন। ভগবান বুদ্ধের তৃপ্তি সহকারে মধু পান করতে দেখে বানরটি খুশিতে ও আনন্দে আত্মহারা হয়ে গাছের এক ডাল থেকে আরেক ডালে লাফালাফি করতে লাগলো। হঠাৎ অসাবধানতাবশতঃ গাছের ডালটি ভেঙ্গে বানর মাটিতে পড়ে গাছের গোড়ায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করল।

পূর্ণিমা তিথিতে ভগবান বুদ্ধকে মধুদান এবং বুদ্ধের প্রতি প্রসন্ন চিত্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার পর বানর তাবোতিংস স্বর্গে ত্রিশ যোজন বিস্তৃত কনক বিমান ও সহস্র অপ্সরা লাভ করল। এই ঘটনার স্মরণে বৌদ্ধ সম্প্রদায় পূর্ণিমা তিথিতে মধু, বিভিন্ন ফলমূল এবং ভেষজ সহ বুদ্ধদেবের পূজা করে। গভীর পারিলেয়্য অরণ্যে ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে হস্তীরাজ কর্তৃক ভগবান গৌতম বুদ্ধের সেবা প্রাপ্তি এবং বানরের মধুদানের কারণে এ দিনটি বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের কাছে স্মরণীয় এবং আনন্দ-উৎসবমুখর-পূণ্যময় একটি দিন।

কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ):

১। প্রশ্ন: ২০২৫ সালে মধু পূর্ণিমা কখন?
উত্তর: ২০২৫ সালে মধু পূর্ণিমা ৬ সেপ্টেম্বর (ভাদ্র মাস), শনিবার।
২। প্রশ্ন: মধু পূর্ণিমা কেন পালন করা হয়?
উত্তর: বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা অধিক পূ্ণ্য লাভের আশায় মধু পূর্ণিমা উৎসব পালন করে।
৩। প্রশ্ন: মধু পূর্ণিমার অপর নাম কি?
উত্তর: মধু পূর্ণিমার অপর নাম ভাদ্র পূর্ণিমা, পূর্ণিমা অর্ঘ্য উৎসব, মধুপুরিমা।

সর্বশেষ কথা: মধু পূর্ণিমা কবে - মধু পূর্ণিমা পালন করার কারণ ২০২৫

মধু পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পারিলেয়্য নামক গভীর অরণ্যের হস্তীরাজ ও বানর কর্তৃক ভগবান বুদ্ধের সেবা যত্ন ও পূজা করার মাধ্যমে এই দিনটির আবির্ভাব হয়। পূর্ণিমা তিথিতে ভগবান বুদ্ধকে বানর কর্তৃক মধু দান করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধু পূর্ণিমা বা ভাদ্র পূর্ণিমা নামটি বিখ্যাত হয়। আশা করি আপনারা মধু পূর্ণিমা কবে - মধু পূর্ণিমা পালন করার কারণ ২০২৫ শিরোনামের লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়েছে। লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url