দাম্পত্য জীবন সুখের হোক - ইসলামের নির্দেশনা
দাম্পত্য জীবন সুখের হোক - ইসলামের নির্দেশনা। আসসালামু আলাইকুম। আপনি কি দাম্পত্য জীবন নিয়ে ইসলামিক উক্তি, ইসলামের দৃষ্টিতে দাম্পত্য জীবন, দাম্পত্য জীবনে ইসলামিক দোয়া, দাম্পত্য জীবন নিয়ে হাদিস ও কোরআন, দাম্পত্য জীবন সুখের হোক -ইসলামের নির্দেশনা বিষয়ে জানতে চান? তাহলে আজকের ইসলামের দৃষ্টিতে দাম্পত্য জীবন সুখের হোক এই লেখাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন।
![]() |
দাম্পত্য-জীবন-সুখের-হোক। ছবি-এআই |
ইসলাম ধর্ম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। মহান আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর বান্দার জন্য ফরজ ইবাদত কালেমা, নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাত আদায় করার পথ ও পদ্ধতি যেমন জানিয়ে দিয়েছেন ঠিক তেমনি পারিবারিক এবং সামাজিক জীবন পদ্ধতি সম্পর্কেও জানিয়ে দিয়েছেন। আজকে আপনাদের কোরআন ও হাদিসের আলোকে দাম্পত্য জীবন সুখের হোক বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে দেব ইনশাল্লাহ।
দাম্পত্য জীবন সুখের হোক
দাম্পত্য জীবন শুরু হয় মূলত একজন পুরুষ ও একজন নারীর বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে। দাম্পত্য জীবন নারী-পুরুষের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়। সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন যেমন সুখের হয় ঠিক তেমনি সামান্য ভুলের কারণেও জীবন বিষাদময় হতে পারে। তাই দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর, শান্তিময় ও সুখময় করে তুলতে কোরআন এবং হাদিসে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা এসেছে। দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রী উভয় পক্ষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখাটা অত্যন্ত জরুরী। হাস্যরস, সুখ-দুখ, আনন্দ ভাগাভাগি এবং বিভিন্ন সাংসারিক বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার বোঝাপড়া সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় মজবুত করে। তাহলে চলুন দাম্পত্য জীবন সুখের হোক - ইসলামের নির্দেশনায় কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে কোরআনের নির্দেশনা
বিবাহ নারী এবং পুরুষের মধ্যে যেমন পরিবার সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ঠিক তেমনি দাম্পত্য জীবনে একে অপরের মধ্যে প্রেম, ভালবাসা, অনুরাগ সৃষ্টি করে এবং মর্যাদাপূর্ণ সামাজিক জীবন যাপন ও শান্তি সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে। দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সম্পূরক। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনের সূরা বাকারায় এরশাদ করেছেন,
আরবি উচ্চারণ:
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
বাংলা অর্থ:
তারা (স্ত্রীগণ) তোমাদের জন্য পোশাক এবং তোমরা (পুরুষগণ) তাদের জন্য পোশাক। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ১৮৭)
দাম্পত্য জীবন সুখী হতে কোরআনের ১০টি বিশেষ নির্দেশনা
বিবাহের মাধ্যমে দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবন শুরু হয়। বিবাহের মাধ্যমে যে দাম্পত্য জীবনের সূচনা হয় তা অটুট থাকা এবং আজীবন স্থায়িত্ব লাভ করা ইসলামে একান্ত কাম্য। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী কখনো বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করবে না এবং বিবাহ বিচ্ছেদের পরিস্থিতির সৃষ্টিও করবে না। দাম্পত্য জীবন নিয়ে পবিত্র কোরআনের সুস্পষ্ট ১০টি বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হল।
১। দাম্পত্য জীবনে মু'মিনকে বিয়ে করা
দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একে অপরকে মুমিন হওয়া অত্যন্ত জরুরী। কেননা ইসলামের নির্দেশনা হল মু'মিন নারী ও পুরুষ পরস্পরকে বিয়ে করবে। কিন্তু শর্তসাপেক্ষে আহলে কিতাব নারীদের বিয়ে করার অবকাশ শরীয়তে বিধান রয়েছে। প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনের সূরা বাকারায় এরশাদ করেছেন,
আরবি উচ্চারণ:
وَلَا تَنكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّىٰ يُؤْمِنَّ ۚ وَلَأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ ۗ وَلَا تُنكِحُوا الْمُشْرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤْمِنُوا ۚ وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ ۗ أُولَـٰئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ ۖ وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ
বাংলা অর্থ:
আর মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর একজন ঈমানদার দাসী মুশরিকের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদের পছন্দনীয় হয়। আর একজন মুসলিম পুরুষকে বিয়ে করো না যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর একজন ঈমানদার দাসী মুশরিকের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদের পছন্দনীয় হয়। এরা জাহান্নামের দিকে দাওয়াত দেয়; কিন্তু আল্লাহ তার অনুমতিক্রমে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে দাওয়াত দেন। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ২২১)
২। দাম্পত্য সুখী জীবন আল্লাহর অনুগ্রহ
ইসলামী বিধি-বিধান ও নিয়ম পদ্ধতি মেনে বিবাহের মাধ্যমে বর ও নববধূর দাম্পত্য জীবন শুরু হয়। পবিত্র কোরআনে দাম্পত্য জীবনকে মহান আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং বর-বধুর উচিত দাম্পত্য জীবনের ব্যাপারে একে অপরে সতর্ক এবং যত্নবান হওয়া। ফলে পুরুষ তাদের স্ত্রীদের কাছে সুখ, শান্তি এবং ভালোবাসা খুঁজে পাবে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা আর রূম এ এরশাদ করেছেন,
আরবি উচ্চারণ:
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
বাংলা অর্থ:
আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নির্দেশনাবলী রয়েছে। (সূরা আর রূম: আয়াত নং ২১)
আরো পড়ুন: ভ দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম অর্থসহ।
৩। বিয়ে দাম্পত্য জীবনে স্বচ্ছলতা আনে
বিবাহ মানুষের জীবনে স্বচ্ছলতা বয়ে আনে। কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনের সূরা আন নূর এ বিয়ের ব্যাপারে বলেছেন, তিনি বিবাহিতদের অভাবমুক্ত করে দেবেন।
আরবি উচ্চারণ:
وَأَنكِحُوا الْأَيَامَىٰ مِنكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ ۚ إِن يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহ হীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ তাদের। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর জমায়, সর্বজ্ঞ। (সূরা আন নূর: আয়াত নং ৩২)
৪। দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পছন্দের নারী-পুরুষকে বিয়ের প্রস্তাব
দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পছন্দের নারী-পুরুষকে বিয়ের প্রস্তাবকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। কেননা পছন্দ মত বিয়ে হলে তারা দাম্পত্য জীবনে সুখী হবে ইনশাল্লাহ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আল কোরআনের সূরা বাকারায় এরশাদ করেছেন,
আরবি উচ্চারণ:
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُم بِهِ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ أَوْ أَكْنَنتُمْ فِي أَنفُسِكُمْ ۚ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ سَتَذْكُرُونَهُنَّ وَلَـٰكِن لَّا تُوَاعِدُوهُنَّ سِرًّا إِلَّا أَن تَقُولُوا قَوْلًا مَّعْرُوفًا ۚ وَلَا تَعْزِمُوا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتَّىٰ يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي أَنفُسِكُمْ فَاحْذَرُوهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ
![]() |
দাম্পত্য-জীবন-সুখের-হোক। ছবি-এআই |
বাংলা অর্থ:
আর যদি তোমরা আকার-ইঙ্গিতে সে নারীর বিয়ের পয়গম দাও কিংবা নিজেদের মনে গোপন রাখো, তবে তাতেও তোমাদের কোন পাপ নেই। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা অবশ্যই সে নারীদের কথা উল্লেখ করবে। কিন্তু তাদের সাথে বিয়ে করার গোপন প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখো না। অবশ্য শরীয়তের নির্ধারিত প্রথা অনুযায়ী কোন কথা সাব্যস্ত করে নেবে। আর নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্তি পর্যায়ে না যাওয়া অবধি বিয়ে করার কোন ইচ্ছা করো না। আর এ কথা জেনে রাখো যে, তোমাদের মনে যে কথা রয়েছে, আল্লাহর তা জানা আছে। কাজেই তাঁকে ভয় করতে থাকো। আর জেনে রাখো যে আল্লাহ ক্ষমাকরী ও ধৈর্যশীল। সূরা বাকারা আয়াত নং ২৩৫)
৫। দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণ
মহান আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত গুলোর মধ্যে অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত হল নেককার স্ত্রী। আর দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার অন্যতম উপায় হল স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। যেকোনো অবস্থায় স্ত্রীকে সম্মান এবং মর্যাদা দেওয়া। কেননা ইসলামে স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণের কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা আল-কোরআনের সূরা আন নিসা এ এরশাদ করেছেন,
আরবি উচ্চারণ:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا ۖ وَلَا تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُوا بِبَعْضِ مَا آتَيْتُمُوهُنَّ إِلَّا أَن يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ ۚ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا
বাংলা অর্থ:
হে ঈমানদারগণ! জোরপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকার এ গ্রহণ করা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং তাদেরকে আটকে রেখো না যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছো তার কিছু অংশ নিয়ে নাও। কিন্তু তারা যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতা করে! নারীদের সাথে সদভাবে জীবন যাপন করো। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়তো তোমরা এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন। (সূরা আন নিসা: আয়াত নং ১৯)
আরো পড়ুন: হযরত মুহাম্মদ সঃ এর জীবনী রচনা।
৬। দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর মোহর প্রধান
নারীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সময় স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করতে হয়, নতুবা স্ত্রী হালাল হিসেবে গণ্য হয় না। কেননা ইসলাম পুরুষকে স্ত্রীর প্রাপ্য এবং নির্ধারিত দেনমোহর যথাযথভাবে প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনের সূরা আন নিসা এ এরশাদ করেছেন,
আরবি উচ্চারণ:
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
বাংলা অর্থ:
আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো। (সূরা আন নিসা: আয়াত নং ৪)
৭। পক্ষপাতীত্বের ভয় থাকলে অধিক বিয়ে নয়
ইসলাম সর্বদাই ইনসাফ ও সুবিচারের শর্তে পুরুষকে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছে। আর যে স্ত্রীগনের সাথে সুবিচার নিশ্চিত করতে পারবে না, তার জন্য একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি নেই। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনের সূরা আন নিসা উল্লেখ করেছেন,
আরবি উচ্চারণ:
وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَلَّا تَعُولُوا
বাংলা অর্থ:
আর যদি তোমরা ভয় করো যে, ইয়াতিম মেয়েদের হক যথাযথ ভাবে পূরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভালো লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা করো যে, তাদের মধ্যে নেই সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবেনা, তবে একটি অথবা তোমাদের অধিকারভক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিতে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা। (সূরা আন নিসা: আয়াত নং ৩)
৮। দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে ১৪ শ্রেণীর নারীকে বিয়ে নয়
দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে হলে নেককার স্ত্রী বিয়ে করা হালাল। তবে ইসলাম পুরুষের জন্য ১৪ শ্রেণির নারীকে বিয়ে করা নিষিদ্ধ করেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা'আলা সূরা আল নিসা এ বলেন,
আরবি উচ্চারণ:
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِي فِي حُجُورِكُم مِّن نِّسَائِكُمُ اللَّاتِي دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُوا دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ وَأَن تَجْمَعُوا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۖ كِتَابَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ ۚ وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَاءَ ذَٰلِكُمْ أَن تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُم مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ ۚ فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
বাংলা অর্থ:
তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, কন্যা, বোন, ফুফু, খালা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, দুধ মা, দুধ ভাগ্নি, শাশুড়ি ও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সঙ্গে সঙ্গত হয়েছে তার পূর্ব স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত কন্যা, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে। যদি তাদের সঙ্গে সঙ্গত না হয়ে থাকো, তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নেই। এবং তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ তোমাদের ঔরস জাত ছেলের স্ত্রী ও দুই বোনকে একত্র করা, অতীতে যা হয়েছে, হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। এবং নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ছাড়া সব সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, তোমাদের জন্য এটা আল্লাহর বিধান। উল্লিখিত নারীরা ছাড়া অন্য নারীকে অর্থভে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে যাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো, অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ (সূরা আন নিসা: আয়াত নং ২৩-২৪)
৯। স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ চাওয়া
কোন স্ত্রী তার ভরণ পোষণ না পেলে কিংবা মনোমালিন্য দেখা দিলে স্ত্রীগণ স্বামীর কাছে বা আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা'আলা আল কুরআনের সূরা আর নিসা এ বলেছেন,
আরবি উচ্চারণ:
وَإِنِ امْرَأَةٌ خَافَتْ مِن بَعْلِهَا نُشُوزًا أَوْ إِعْرَاضًا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يُصْلِحَا بَيْنَهُمَا صُلْحًا ۚ وَالصُّلْحُ خَيْرٌ ۗ وَأُحْضِرَتِ الْأَنفُسُ الشُّحَّ ۚ وَإِن تُحْسِنُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًاا
বাংলা অর্থ:
যদি কোন নারী স্বীয় স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরণ কিংবা অপেক্ষার আশঙ্কা করে, তবে পরস্পর কোন মীমাংসা করে নিলে তাদের উভয়ের কোন গুনাহ নেই। মীমাংসা উত্তম। মনের সামনে লোভ বিদ্যমান আছে। যদি তোমরা উত্তম কাজ করো এবং খোদাভেড়ু হও, তবে আল্লাহ তোমাদের সব কাজের খবর রাখেন। (সূরা আন নিসা: আয়াত নং ১২৮)
১০। দাম্পত্য জীবনে গভীর সম্পর্ক
স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক এবং গভীর হওয়া উচিত। যে সম্পর্কের মধ্যে কোন পর্দা বা বাধা থাকবে না। মহান আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনের সূরা বাকারায় উল্লেখ করেছেন,
আরবি উচ্চারণ:
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
বাংলা অর্থ:
তারা (স্ত্রীগণ) তোমাদের জন্য পোশাক এবং তোমরা (পুরুষগণ) তাদের জন্য পোশাক। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ১৮৭)
আশা করি দাম্পত্য জীবন সুখের হোক - ইসলামের নির্দেশনা লেখাটি পড়ে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন।
দাম্পত্য জীবন সুখী হতে আল হাদিসের নির্দেশনা
দাম্পত্য জীবন সুখী ও মধুময় করে তোলার জন্য হাদিসে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একজন দায়িত্ববান ও সফল স্বামী রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
১। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর স্ত্রীদের মধ্যে থেকে খাদিজার রাঃ চেয়ে অন্য কোন স্ত্রীর প্রতি বেশি ইচ্ছা পোষণ করিনি। কারণ, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাঃ) প্রায়ই তার (খাদিজা রাঃ) কথা স্মরণ করতেন এবং তার প্রশংসা করতেন। (বুখারী: হাদিস নং ৫২২৯)
২। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, কেয়ামতের দিন সে হবে আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট পর্যায়ের যে তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সঙ্গে মিলিত হয়; অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়। (মুসলিম: হাদিস নং ৩৪৩৪)
৩। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, আমি আমার স্ত্রীদের জন্য এমনই পরিপাটি থাকা পছন্দ করি, যেমন আমি তাদের ক্ষেত্রে সাজগোজ করে থাকতে পছন্দ করি। (বায়হাকি: ১৪৭২৮)
৪। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, সওয়াবের আশায় কোন মুসলিম যখন তার পরিবার পরিজনের প্রতি ব্যয় করে, তা তার সদকা হিসেবে গণ্য হয়। (বুখারী: হাদিস নং ৫৩৫১)
৫। আসওয়াদ রহঃ বলেন, আমি হযরত আয়েশাকে রাঃ জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাঃ ঘরে থাকা অবস্থায় কী করতেন? তিনি বললেন, ঘরের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থাৎ পরিজনের সহায়তা করতেন। আর সালাতের সময় সালাতে চলে যেতেন। (বুখারী: হাদিস নং ৬৭৬)
৬। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ ভালবেসে কখনো কখনো আমার নাম হুমায়রা বা লাল গোলাপ বলে ডাকতেন। (ইবনে মাজাহ: হাদিস নং ২৪৭৪)
৭। আব্দুল্লাহ ইবনে যামআ রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদের গোলামের মত প্রহার করো না। কেননা দিনের শেষে তার সঙ্গে তো মিলিত হবে। (বুখারী: হাদিস নং ৫২০৪)
৮। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাঃ থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজান মাসের রোজা রাখে, লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং স্বামীর অনুগত থাকে তাকে বলা হবে- তুমি যে দরজা দিয়ে চাও জান্নাতে প্রবেশ করো। (মুসনাদে আহমদ: হাদিস নং ১৬৬১)
আরো পড়ুন: সন্তান লাভের দোয়া ও আমল।
সর্বশেষ কথা -দাম্পত্য জীবন সুখের হোক
প্রিয় পাঠক, আমরা এতক্ষন দাম্পত্য জীবন সুখের হোক এ বিষয়ে ইসলামের দিক নির্দেশনা মূলক কোরআন ও হাদিস থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছি। আশা করি আপনারা দাম্পত্য জীবন সুখের হোক - ইসলামের নির্দেশনা শিরোনামের লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন। লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকলে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো যেন আপনার বন্ধু-বান্ধব ও উপকৃত হতে পারেন। লেখার মাধ্যমে কোন ভুল ত্রুটি হলে কমেন্টের মাধ্যমে জানানোর জন্য অনুরোধ করছি। লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url