তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া, আরবি উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া, আরবি উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত। ঘুম মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত। ইসলামী শরীয়ত সম্মত ঘুম ইবাদতের শামিল। কিন্তু তাড়াতাড়ি ঘুমানোর জন্য আমরা অনেকেই চেষ্টা করে থাকি কিন্তু ঘুম সঠিক সময় আসতে চায় না। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া, আরবি উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত সম্পর্কে আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
![]() |
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া |
ঘুম মানুষের দৈনন্দিন জীবনে একটি অপরিহার্য অংশ। এই ঘুমের মাধ্যমে মানুষ মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা লাভ করে থাকে। ইসলামে ঘুমানোর ব্যাপারে কিছু দোয়া এবং আমল করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যেকেরই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো উচিত। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক, তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া, আরবি উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত সম্পর্কে।
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া
ঘুম মানুষের জন্য এক বিশেষ নেয়ামত এবং ইসলামী বিধি-বিধান ও আমল অনুযায়ী ঘুম ইবাদতের সমতুল্য। কোরআন ও হাদিসের আলোকে ঘুম মানুষের শান্তি, নিরাপত্তা ও মহান আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়া যায়। তাই আমাদের তাড়াতাড়ি ঘুমানোর পূর্বে ঘুমানোর দোয়া ও আমল সমূহ মেনে চলা উচিত। চলুন তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া আরবি উচ্চারণ:
اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া বাংলা উচ্চারণ:
'আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া'।
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া বাংলা অর্থ:
'হে আল্লাহ! আমি তোমারই নামে ঘুমাই এবং তোমারই নামে জাগ্রত হই'।
ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর দোয়া
আরবি উচ্চারণ:
لْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
বাংলা উচ্চারণ:
'আলহামদুলিল্লা হিল্লাজি আহইয়া না বা'দা মা আমা তানা ওয়া ইলাইহিন নুসূর'।
বাংলা অর্থ:
'সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর! যিনি ঘুমের পর আমাদের জাগ্রত করেছেন এবং আমাদের তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে'।
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া সম্পর্কে আল কোরআন
পবিত্র আল কোরআনের সূরা কাহাফ - এ ৫ জন মতান্তরে ৭ জন যুবক ও তাদের সঙ্গী একটি কুকুর বিধর্মীদের দ্বারা তাড়না খেয়ে এক গুহার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। সেখানে তারা মহান আল্লাহ তায়ালার সহায়তায় ৩০০ বছরের অধিক সময় ঘুমিয়ে থেকে জেগে ওঠেন। তখন তারা একে অপরকে প্রশ্ন করে জানতে চান এখানে তারা কতক্ষণ বা কতদিন যাবত ঘুমিয়ে ছিলেন। তারা কেউ কেউ বলতে থাকলো একদিন বা একদিনের কিছু অংশ তারা ঘুমিয়ে ছিলেন। আবার কেউ বললেন, এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। তারপর তারা তাদের মধ্য থেকে একজনকে পকেটে থাকা মুদ্রা নিয়ে বাজারে গিয়ে খাবার সংগ্রহ করতে বললেন। খাবার কিনতে গেলে বিক্রেতা বুঝলেন এই মুদ্রা গুলো অনেক দিন আগের যা বর্তমানে অচল। তারপর তারা পুনরায় মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশে ঘুমিয়ে পড়লেন।
অনেকের দুশ্চিন্তার কারণে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে পারেন না। তাই ইসলাম আমাদের বাস্তবধর্মী ঘুমের দোয়া শিক্ষা দিয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
'আর তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণ, নিদ্রাকে করেছেন আরামপ্রদ আর দিনকে করেছেন (নিদ্রারুপী সাময়িক মৃত্যুর পর) আবার জীবন্ত হয়ে ওঠার সময়'। (সুরা ফোরকান: আয়াত নং ৪৭)
সৃষ্টির সেরা মাখলুকাত মানুষ সহ প্রত্যেক সৃষ্টি তার নির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদনের পর মহান আল্লাহর দেওয়া ব্যবস্থাপনায় ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমকে প্রত্যেক জীবের জন্য প্রশান্তির মাধ্যম হিসেবে মহান আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'আলা আরো বলেছেন,
'তোমাদের ঘুমকে শান্তির উপকরণ বানিয়েছি আর রাতকে আবরণ করে দিয়েছি'। (সূরা নাবা: আয়াত নং ৯-১০)
![]() |
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া |
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া সম্পর্কে হাদিস
মানুষের জীবনে আল্লাহর প্রদত্ত সবচেয়ে প্রধান এবং বড় নেয়ামত হল সুস্থতা। আর এই সুস্থতা অর্জনের প্রধান মাধ্যম হল সঠিক বা পর্যাপ্ত ঘুম। কোন ব্যক্তি ইসলামের নির্দেশিত পদ্ধতিতে পর্যাপ্ত ঘুমালে তার ঘুমও ইবাদতে পরিণত হয়। এজন্য আমাদের জানা প্রয়োজন মহানবী সাঃ এর ঘুমের আগে কি কি আমল করতেন এবং দোয়া পড়তেন। ঘুমানোর দোয়া সম্পর্কে হাদিসে অনেক। বর্ণনা করা হয়েছে। নিচে কিছু হাদিস উল্লেখ করা হলো।
১। হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ ঘুমানোর আগে এই দোয়া পড়তেন-
'আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া'।
বাংলা অর্থ:
'হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে মৃত্যুবরণ (ঘুম) করি এবং তোমার নামেই আমি জীবিত হই'। (সহিহ বুখারী: ৩৩১৪)
২। আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
যখন তুমি ঘুমানোর জন্য বিছানায় যাবে তখন ডান কাঁধ হয়ে এই দোয়া পড়বে-
'বিসমিকা রাব্বি ওয়াদাতু জানবি ওয়া বিয়াকা আরফাউহু, ফাইন আমসাতা নাফসি ফারহামহা, ওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাজহা বিমা তাহফাজু বিহি ইবাদাকাস সলিহিন'।
ছোট বাচ্চাদের ঘুমানোর দোয়া
পরিবারে ছোট বাচ্চাদের ঘুমানোর আগে সহজ ও সংক্ষিপ্ত দোয়া শেখানো সুন্নাত এবং এটি তাদের জন্য বরকতময়। ছোট বাচ্চারা বিশেষ করে শিশুরা ছোটকাল থেকেই ইসলামী বিধি-নিষেধ ও আদেশ মেনে চললে ইসলামী পথ চলা তাদের জন্য অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। তাই প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ ছোট বাচ্চাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন ব্যবহৃত দোয়া শেখানো উচিত। নিচে ঘুমানোর ছোট দোয়া উল্লেখ করা হলো যেন শিশুরা বা ছোট বাচ্চারা খুব সহজেই মুখস্ত করতে পারে।
বাংলা উচ্চারণ:
'আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া'।
বাংলা অর্থ:
'হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে মৃত্যুবরণ (ঘুম) করি এবং তোমার নামেই আমি জীবিত হই'।
শান্তিতে ঘুমানোর দোয়া
আমরা অনেকেই পারিবারিক অশান্তি ও বিভিন্ন দুশ্চিন্তার কারণে শান্তিতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। তখন মনে হয় যে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারলে অনেক ভালো হতো। তাই ইসলামে শান্তিতে ও নিরাপদে ঘুমানোর জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু দোয়া শিখিয়েছেন। শান্তিতে ঘুমানোর দোয়া নিচে উল্লেখ করা হলো।
বাংলা উচ্চারণ:
'আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া'।
বাংলা অর্থ:
'হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে মৃত্যুবরণ (ঘুম) করি এবং তোমার নামেই আমি জাগ্রত হই'।
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়ার ফজিলত
ঘুমানোর দোয়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া পড়লে আল্লাহর রহমত, বরকত এবং হেফাজত লাভ করা যায়। নিচে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়ার ফজিলত উল্লেখ করা হলো।
১। ঘুমানোর দোয়া পড়লে শয়তানের অনিষ্ঠ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
২। ঘুমানোর এই দোয়াটি পড়লে মানসিক শান্তি ও প্রশান্তি লাভ করা যায়।
৩। তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া পড়ে ঘুমালে মহান আল্লাহর হেফাজতে থাকা যায়।
৪। ঘুমানোর দোয়া পড়ে ঘুমালে মহান আল্লাহর কাছে ইবাদতের সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়।
৫। আমাদের সকলের মৃত্যু ও জীবন - দুটিই আল্লাহর হাতে, এ দোয়া সে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়।
৬। এটি রাসুলুল্লাহ সাঃএর প্রিয় আমল ছিল, যা তিনি নিজের জন্য এবং তাঁর সাহাবীদের জন্য শিখিয়েছেন।
রাতে ঘুমানোর আগে আমল বা রাতে কি কি সুরা পড়তে হয়?
রাতে ঘুমানোর পূর্বে নির্দিষ্ট কিছু সূরা পড়া সুন্নত যা আমলের মধ্যে পড়ে। এতে আমাদের নিরাপত্তা, মানসিক শান্তি ও আল্লাহর বরকত লাভ করা যায়। মহানবী রাতে ঘুমানোর পূর্বে কিছু আমল করতেন অর্থাৎ বিশেষ কিছু সূরা ও দোয়া পড়তেন এবং তাঁর উম্মতদেরকে পড়তে বলেছেন।
১। আয়াতুল কুরসি - একবার
২। সূরা আল মূলক - একবার।
৩। সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস - তিনবার করে।
৪। সূরা আল কাফিরুন - একবার।
৫। সূরা আল বাকারার শেষ দুই আয়াত- একবার।
৬। সূরা আদ-দুখান (সুযোগ থাকলে)।
আরো পড়ুন:
সর্বশেষ কথা - তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া, আরবি উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। এই ঘুম আমাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত ও হেফাযত লাভের মাধ্যম করে দেয়। এই দোয়া পড়লে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায়। তাই আমাদের সকলের উচিত নিয়মিত এই দোয়া পড়া এবং অন্যান্য আমল গুলো মেনে চলা। আশা করি আজকের তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া শিরোনামের লেখাটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এ বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url