বিকাশ লোন সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও পাওয়ার উপায় ২০২৫
বিকাশ লোন সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও পাওয়ার উপায় ২০২৫।আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আপনি কি বিকাশ লোন কিভাবে পাওয়া যাবে, বিকাশ থেকে লোন পাওয়ার যোগ্যতা, বিকাশ লোন ইন্টারেস্ট, বিকাশ লোন সার্ভিস, বিকাশ লোন লিমিট, বিকাশ লোন পরিশোধ না করলে কি হবে, সিটি ব্যাংক বিকাশ লোন অ্যাপ্লাই অনলাইন (City Bank bKash Loan Apply Online) ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আজকের লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল, আশা করি সাথেই থাকবেন।
![]() |
বিকাশ-লোন |
বিকাশ লিমিটেড বর্তমানে মোবাইল অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেম গুলোর মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে। বিকাশের যুগান্তকারী আর্থিক পরিষেবার কারণে এটি এখন বাংলাদেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। আজকে আপনাদের জানাবো বিকাশ লোন কিভাবে পাওয়া যাবে, বিকাশ লোন পরিশোধের সীমা এবং লোন ইন্টারেস্ট কত ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত।
বিকাশ লোন সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও পাওয়ার উপায় - Bkash Loan
বিকাশ লোন সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও পাওয়ার উপায়? বিকাশ অ্যাপ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ২০১৮ সালে চালু হওয়ার পর থেকেই ব্যবহারসহজ যোগ্যতা, নিরাপত্তা এবং নিয়ন্ত্রিত লেনদেনের কারণে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। হঠাৎ প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক লোন পাবার জন্য বিকাশ অ্যাপ দেশের প্রথম ডিজিটাল 'ইনস্ট্যান্ট লোন' সার্ভিস নিয়ে এসেছে। যখন-তখন টাকার প্রয়োজন হতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় লোন সেবা নিয়ে সবসময় আপনার পাশে রয়েছে বিকাশ। এটি মূলত সিটি ব্যাংক অনুমোদিত ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বিকাশ অ্যাপ এ আপনার লেনদেনের ভিত্তিতে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত আপনার অ্যাপে নির্ধারিত লোন এর লিমিট অনুযায়ী বিকাশ লোন দেওয়া হয়। কোনরকম ব্যাংক একাউন্ট ও কাগজপত্র এবং জামানত ছাড়াই ৩টি বা ৬টি মাসিক কিস্তিতে লোন পরিশোধ করা যাবে। তাহলে চলুন দেখা যাক, আপনার লোনের লিমিট অনুযায়ী একসাথে পুরোটা বা ধাপে ধাপে লোন নিন - যখন আপনার মন চায়।
আরো পড়ুন: ৫০ হাজার টাকা লোন নিতে চাই।
বিকাশ লোন পেতে কি কি লাগবে?
বিকাশ লোন পেতে আপনার কি কি করা লাগবে সেটা আপনার প্রথমে ভালোভাবে জানতে হবে। সঠিক পদ্ধতির মাধ্যমে বিকাশ লোনের জন্য আবেদন না করলে আপনি বিকাশ ঋণ না পেতেও পারেন। তাহলে চলুন বিকাশ লোন পেতে কি কি লাগবে এ সম্পর্কে আমরা নিচে বিস্তারিত জেনে নিই।
- আপনার বিকাশ একাউন্ট অবশ্যই আপনার সচল পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট হতে হবে।
- আপনার বিকাশ অ্যাপ থাকতে হবে।
- বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে নিয়মিত লেনদেন থাকতে হবে; যেমন - ইন ক্যাশ, সেন্ড মানি, পে-বিল, এ্যাড মানি ইত্যাদি।
- আপনার বিকাশ একাউন্ট ভালো কেওয়াইসি (KYC) অর্থাৎ ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট হতে হবে।
- নির্ধারিত ইন্টারেস্ট (সুদ) ও সময় অনুযায়ী ফেরতের সক্ষমতা থাকতে হবে।
বিকাশ লোন পেতে কিভাবে আবেদন করবেন?
বিকাশ লোন পেতে কিভাবে আবেদন করবেন? বিকাশ লোন পাবার জন্য আপনাকে অবশ্যই সঠিকভাবে আবেদন করতে হবে। কেননা আপনি যদি সঠিক পদ্ধতিতে আবেদন না করেন তাহলে বিকাশ লোন পাবেন না। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, কিভাবে বিকাশ লোন পেতে আবেদন করবেন।
- ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে সব প্রথমেই বিকাশ অ্যাপ ওপেন করুন।
- হোম স্ক্রিন থেকে 'লোন' অপশনে ক্লিক করে সিলেক্ট করুন করুন।
- 'লোন' অপশন খুঁজে না পেলে 'পে-লেটার' (Pay Later) অথবা 'ডিজিটাল লোন' (Digital Loan) অপশনটি দেখতে পাবেন এবং সিলেক্ট করুন।
- আপনার লোন যোগ্যতা দেখাবে (ইলিজিবল - Eligible হলে টাকার পরিমাণসহ)।
- আপনার লোনের লিমিট দেখে 'লোন নিন' এ ট্যাপ করুন।
- লোনের অ্যামাউন্ট বা পরিমাণ দিয়ে পরের ধাপে যেতে হবে।
- তারপর স্ক্রিনে দেওয়া সকল তথ্য পূরণ করে পরের ধাপে প্রবেশ করুন।
- সবশেষে আপনার গোপন পিন নাম্বার দিয়ে নিচের অংশ ট্যাপ করে ধরে রাখলেই আপনার কাঙ্খিত লোন নেওয়া হয়ে যাবে।
- লোন পেয়ে গেলে সরাসরি আপনার অ্যাকাউন্টে লোনের এমাউন্ট বা পরিমাণ দেখা যাবে।
আরো পড়ুন: ১ লক্ষ টাকা লোন নিতে চাই।
বিকাশ অ্যাপ থেকে লোন নিতে নীচের চিত্রে দেখানো পদ্ধতিটি অনুসরণ করতে পারেন। এখানে ধাপে ধাপে সব দেখানো হয়েছে।
![]() |
বিকাশ-লোন |
মনে রাখবেন, বিকাশ অ্যাপ এ সাধারণত শুরুতে ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়া যায়। তারপর বিকাশ অ্যাপ লোন নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার বিকাশ অ্যাপ ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে পরবর্তীতে লোনের পরিমাণ বাড়তে থাকবে। দেখুন আমার নিচের বিকাশ অ্যাপ একাউন্টে লোন পাবার যোগ্যতা দেখা যাচ্ছে অর্থাৎ আমি লোন নিতে পারব।
![]() |
বিকাশ-লোন |
বিকাশ লোনের ইন্টারেস্ট বা সুদ কত ও ফেরতের নিয়ম
বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে লোন নিতে হলে আপনাকে লোনের সুদ এবং লোন ফেরত এর নিয়ম সম্পর্কে অবশ্যই বিস্তারিত জেনে রাখতে হবে। কেননা, এ সম্পর্কে জানা না থাকলে আপনি সন্দেহের মধ্যে থাকবেন অথবা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাই বিকাশ অ্যাপ এর মাধ্যমে লোন নিতে হলে আপনাকে অবশ্যই লোনের সুদ এবং ফেরত এর নিয়ম জেনে রাখা উচিত। তাহলে চলুন বিকাশ অ্যাপ এর মাধ্যমে লোনের ইন্টারেস্ট (সুদ) কত ও ফেরতের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
- বিকাশ লোন ফেরত দিতে হয় ৭ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে, সর্বোচ্চ ৬ মাস (শর্ত প্রযোজ্য) ।
- বিকাশ অ্যাপ থেকেই রি-পেমেন্ট (repayment) করতে হয়।
- বিকাশ লোনের প্রতি ১ হাজার টাকায় সুদ হতে পারে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত (শর্ত ভেদে)।
- বিকাশ লোনের বার্ষিক সুদের হার ৯%।
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ বিকাশ লোন পেতে কি কি লাগবে এবং বিকাশ লোন পেতে কিভাবে আবেদন করবেন এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি, বিকাশ লোন সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও পাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন।
বিকাশ লোনের সুবিধা এবং অসুবিধা
বিকাশ লোনের সুবিধা এবং অসুবিধা দুটোই রয়েছে। তাৎক্ষণিক আপনার প্রয়োজনে আপনি হয়তো আপনার পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের কাছে লোন না পেতেও পারেন। সে ক্ষেত্রে বিকাশ আপনার জন্য ইনস্ট্যান্ট লোনের ব্যবস্থা করেছে। তাহলে চলুন বিকাশ লোনের সুবিধা গুলো সম্পর্কে প্রথমে জেনে নিই।
বিকাশ লোনের সুবিধা:
- বিকাশ লোন ইনস্ট্যান্ট অর্থাৎ যখন প্রয়োজন তখনই পাওয়া যায়।
- বিকাশে লোন পেতে কোন জামানত লাগে না।
- বিকাশ ঋণ বাড়ি থেকে বের না হয়ে পাওয়া যায়।
- বিকাশের লোন সময় মত পরিশোধ করলে ভবিষ্যতে বেশি লোন পাওয়া যায়।
বিকাশ লোনের অসুবিধা:
বিকাশ লোনের যেমন সুবিধা রয়েছে, ঠিক তেমনি অসুবিধা রয়েছে। তাহলে চলুন বিকাশের লোন পাবার অসুবিধা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
- বিকাশের সকল গ্রাহক এই লোন পাবেন না।
- বিকাশ লোন পেতে হলে অবশ্যই বিকাশ অ্যাপ থাকতে হবে।
- বিকাশের অ্যাপ পরিচালনার জন্য ইন্টারনেট সুবিধা থাকতে হবে।
- সময়মতো বিকাশের লোন পরিশোধ না করলে অতিরিক্ত লেট ফি দেওয়া লাগতে পারে।
- অন্যান্য ব্যাংকের ইন্টারেস্ট বা সুদের তুলনায় বিকাশ লোনের সুদ একটু বেশি হতে পারে।
কারা বিকাশ অ্যাপ লোন পাবেন না?
বিকাশের একাউন্ট থাকলেই যে সবাই বিকাশের লোন পাবেন তেমনটি নয়। বিকাশের লোন পেতে হলে আপনাকে একজন বিশ্বস্ত বিকাশ অ্যাপ ব্যবহারকারী হতে হবে। তারপর আপনার দৈনন্দিন লেনদেন বিবেচনা করে বিকাশ অ্যাপ লোনের যোগ্য হতে হবে। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক কারা বিকাশ অ্যাপ লোন পাবেন না।
- যাদের বিকাশ একাউন্ট নতুন।
- যারা বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করেন না।
- যাদের বিরুদ্ধে ট্রানজাকশন ফ্রাউড (Transaction Fraud) রিপোর্ট রয়েছে।
- যারা নিয়মিত লেনদেন (মোবাইল রিচার্জ, সেন্ড মানি, পেমেন্ট, এ্যাড মানি ইত্যাদি) করেন না।
আরো পড়ুন: বিকাশ, নগদ ও রকেট একাউন্ট খোলার নিয়ম।
FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)
১। প্রশ্ন: বিকাশ থেকে লোন পাওয়া যায় কি?
উত্তর: হ্যাঁ, বিকাশ থেকে লোন পাওয়া যায়।
২। প্রশ্ন: বিকাশ থেকে সর্বোচ্চ কত টাকা লোন পাওয়া যায়?
উত্তর: বিকাশ থেকে ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়া যায়।
৩। প্রশ্ন: বিকাশ লোনের সুদের হার কত?
উত্তর: বিকাশ লোনের সুদের হার ৯%। তার সাথে লোন প্রসেসিং ফি ও সরকারী ভ্যাট ০.৫৭৫% কেটে নেওয়া হয়।
৪। প্রশ্ন: কোন আ্যাপ থেকে টাকা লোন নেওয়া যায়?
উত্তর: বিকাশ অ্যাপ থেকে টাকা লোন নেওয়া যায়।
৫। প্রশ্ন: বিকাশে পে লেটার কী?
উত্তর: বিকাশে পে লেটার হলো কেনাকাটার জন্য লোন, যা পেমেন্টের জন্য ৭ দিনের মধ্যে বিনা সুদে পরিশোধ করা যায়। অথবা ৬টি সহজ মাসিক কিস্তিতে আপনার বিকাশ পেমেন্টে সহজে পরিশোধ করতে পারবেন।
সতর্কতা:
১। আমার লেখা তথ্যে আপনার বিকাশ লোন পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করে না।
২। বিকাশ লোনের মেয়াদ, সুদের হার, ভ্যাট ও সার্ভিস চার্জ যে কোন সময় পরিবর্তনশীল।
৩। বিকাশ থেকে লোন পাওয়ার ব্যাপারে প্রতারিত হওয়া থেকে সাবধান থাকুন।
৪। বিকাশ থেকে লোন নেওয়ার আগে আপনার নিকটস্থ বিকাশ কাস্টমার কেয়ারের সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জেনে নিন।
সর্বশেষ কথা - বিকাশ লোন সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও পাওয়ার উপায়
বিকাশ থেকে লোন পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই প্রথমে গুগল প্লে-স্টোর থেকে বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড এবং ইনস্টল করতে হবে। তারপর আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন আপনার নাম, আপনার সচল মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি আপলোড, আপনার ছবি আপলোড এবং সম্পূর্ণ ঠিকানা সহ বিস্তারিত তথ্য দিয়ে বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড সম্পন্ন করতে হবে। তারপর আপনার মোবাইলে ফিরতি এসএমএস যাচাই-বাছাই করে গোপন পিন নম্বর সেট করতে হবে। আপনার বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে নিয়মিত লেনদেন, মোবাইল রিচার্জ, সেন্ড মানি, অ্যাড মানি, বিভিন্ন ফি প্রদান ও বিভিন্ন পেমেন্ট এর ডকুমেন্টস থাকতে হবে। এরপর আপনার বিকাশ একাউন্টে লগইন করে 'লোন' অপশনটি বেছে নিয়ে বিকাশ লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে আবেদন করার পর বিকাশ আপনার তথ্য সমূহ যাচাই-বাছাই করে লোন পাবার যোগ্য হলে অনুমোদন করলে আপনি আপনার একাউন্টে কাঙ্খিত লোনের টাকা পাবেন।
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমরা বিকাশ লোন সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও পাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি বিকাশের লোন পাওয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন। তার পরেও যদি কোন প্রয়োজন হয় তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানালে উপকৃত হতাম। লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকলে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল যেন তারাও উপকৃত হতে পারেন। আজকের লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url