পিত্তথলিতে পাথর কেন হয় - পিত্তথলিতে পাথর হলে করনীয় কি

পিত্তথলিতে পাথর কেন হয় - পিত্তথলিতে পাথর হলে করনীয় কি।আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজকে আমরা আপনাদের জানাবো পিত্তথলিতে পাথর কেন হয় - পিত্তথলিতে পাথর হলে করণীয় কি এটা সম্পর্কে। শরীরে চর্বি বেশি জমলে পানি কম খেলে রক্ত বেশি ভাঙ্গলে এরকম পাথর জমতে পারে আপনার শরীরে। আমরা অনেকেই জানিনা পিত্তথলিতে পাথর কেন হয় - পিত্তথলিতে পাথর হলে করণীয় কি। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক পিত্তথলিতে পাথর কেন হয় - পিত্তথলিতে পাথর হলে করণীয় কি।
পিত্ত থলিতে পাথর কেন হয় - পিত্তথলিতে পাথর হলে করণীয় কি
পিত্তথলিতে পাথর কেন হয় - পিত্তথলিতে পাথর হলে করনীয় কি
অনেকেই পিত্তথলির পাথরের সমস্যায় ভুগছেন। জীবন যাপন ও খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এনে আপনি পিত্তথলিতে পাথর হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। আজ আমারা জানবো পিত্তথলিতে পাথর কেন হয় - পিত্তথলিতে পাথর হলে করণীয় কি।

ভূমিকাঃ

পিত্তথলিতে পাথর হলে পিত্তাশয় এর এমন একটি রোগ যাতে মানুষের পিত্তাশয় পাথর জমা হয়। এটি কোললিথিয়াসিস নামে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পরিচিত। উন্নত দেশে প্রায় ১০ থেকে ২০% প্রাপ্তবয়স্ক লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যক্তির পিত্তথলিতে পাথর পাওয়া যায়, যার মোট জন হতে পারে প্রায় ২০ থেকে ৫০টন।

পিত্তথলিতে পাথর হওয়া খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। একটু থলিতে পাথর হয়েছে কথাটি এখন প্রায় শোনা যাচ্ছে এবং এমন রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পিত্তথলিতে পাথরের সমস্যা আমাদের অনেকেরই হয়ে থাকে কিন্তু অনেকের পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে এমনটি বুঝতে পারেনা। এমনকি তার লক্ষণ ও প্রকাশ পায় না। দেহে নিরবে এর প্রতিক্রিয়া নানারকম বিপদ ডেকে আনতে পারে আপনার।


সুতরাং আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে যাতে রোগ সৃষ্টির শুরুতেই আপনি চিকিৎসা করাতে পারেন। আপনার অবহেলা বা অযত্নে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। আপনার শরীরে কিন্তু এ পাথর কি সত্যি সত্যি রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া নূড়ী পাথরের মতন না অন্য কিছু। আর কিভাবে বা জানতে পারবো যে আপনার পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক পিত্তথলিতে পাথর কেন হয় - পিত্তথলিতে পাথর হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে।

পিত্তথলিতে পাথর কেন হয়

লিভার থেকে তৈরি পিত্ত রস বা বায়ল পিত্তথলি জমা রাখে এবং চর্বি জাতীয় খাবার খেলে হজমের জন্য পিত্তথলি থেকে বেরিয়ে আমাদের খাদ্যনালীতে আসে এবং হজমের সহায়তা করে। থাকার সময়কালে পিত্তরস তথা বাইরের কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়। হলুদ রঙের তরল পদার্থ এতে থাকে কোলেস্টেরল, ক্যালসিয়াম, লবন, এসিড ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান। পিত্তরসের বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি হয় পিত্তথলির পাথর।

পিত্ত একটি তরল পদার্থ, যার মধ্যে কিছু কঠিন পদার্থ থাকে। তরল পদার্থের পরিমাণ কমে গেলে কঠিন পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে পাথর হতে পারে। আর কোন কারনে যদি পিত্তথলির সংকোচন ও প্রসারণ এর ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে আপনার। তাছাড়া চিকিৎসক ও গবেষকদের মধ্যে যারা চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খায়, ভেজাল খাবার খান, ডায়াবেটিস আছে, লিভারের রোগ আক্রান্ত সেসব নারী বারবার গর্ভবতী হোন, যারা মোটা ও ওজন বেশি তাদের পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

পিত্তথলিতে পাথর আসলে কি

পিত্তথলির পাথর আসলে ছোট ছোট বালুর দানার মত থেকে শুরু করে মটরের দানা বা তার চেয়েও বড় শক্ত দানাদার বস্তু যা বিভিন্ন রঙের ও আকৃতির হতে পারে এটা নির্ভর করে কি পদার্থ দিয়ে পাথরটা তৈরি তার ওপর। কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন বা ক্যালসিয়াম ইত্যাদি পদার্থের তৈরি পাথরগুলো পিত্তরসের সঙ্গে মেশানো অবস্থায় থাকে এবং হালকা বাদামি ময়লাটে সাদা বা কুচকুচে কালো রঙেরও হতে পারে। বিশেষ করে চর্বি জাতীয় খাবার হজম করতে পিত্তরস দরকার হয়। নানা কারণে এই থলিতে বিভিন্ন পদার্থ অতিরিক্ত জমে গিয়ে পাথরের সৃষ্টি করে।

পিক্তথলিতে পাথর কাদের বেশি হয়

যাদের ওজন বেশি তাদের পিত্থলিতে পাথর বেশি দেখা যায়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের এই প্রবণতা বেশি। এছাড়া চল্লিশোর্দ্ধ বয়স, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ার অভ্যাস, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। পিত্তথলিতে পাথর কেন হয় - পিত্তথলিতে পাথর হলে করনীয় কি।

পিত্তথলিতে পাথরের উপসর্গ

পিত্তথলিতে পাথর এর উপসর্গ গুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-
  • পিত্তথলিতে পাথর হলে এতে প্রদাহ হয় যাকে কোলেস্টেরলাইসিস বলা হয়। তখন পেটের ডান দিকের তীব্র ব্যথা হতে পারে এ ব্যথা মিনিট খানেক থেকে ঘন্টাখানেক স্থায়ী হতে পারে।
  • পেটের পেছনদিকে কাঁধে পেটের মাঝ বরাবর এমনকি বুকের ভেতরেও ধীরে ধীরে ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেই সঙ্গে বমি ভাব বা বমি হালকা জ্বর দেখা দিতে পারে।
  • অনেক সময় পিত্তথলি থেকে পাথর বের হতে গিয়ে বিদ্রোণালী আটকে যায় এবং তখন বেলুরুবিনের পো-পাক নালী বন্ধ হয়ে যাওয়ার দারুন জন্ডিস হতে পারে।
  • রোগ নির্ণয়ের জন্য এই উপসর্গের পাশাপাশি পেটের আলট্রাসনোগ্রাম যথেষ্ট পাথরের অবস্থান জানতে বা প্রয়োজনে বের করতে ইআরসিপি জাতীয় পরীক্ষা করা যেতে পারে।
  • আলসার চক্রের কোন সমস্যা এমনকি হৃদরোগেও এই উপসর্গের কাছাকাছি ধরনের ব্যথা হতে পারে বলে সেগুলোর অবস্থাও নির্ণয় করে নেওয়া খুবই প্রয়োজন।
  • বাম থেকে ব্যথা শুরু হয়ে ডান কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছায় এরকম হলে অতি অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে আপনাকে।

পিত্তথলিতে পাথর হলে চিকিৎসা

তীব্র ব্যথার সময় কোন অস্ত্রপচার করা হয় না এই অবস্থায় সাধারণত কয়েক দিনের জন্য মুখে খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দিয়ে স্যালাইন, এন্টিবায়োটিক ও ব্যথা নাশক ঔষধ দিয়ে প্রাথমিক উপশমের চেষ্টা করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে পিত্তথলির পাথরের চিকিৎসার প্রধান সমাধান হলো অপারেশন। অপারেশন দুই ভাবে করা যায় -
১. সরাসরি পেট কেটে। 
২. লেপারেসকিপির মেশিনের সাহায্যে।

আধুনিক চিকিৎসা জগতে লেপারাসকিপিক পদ্ধতি খুবই সুবিধা জনক। লেপারাসকপির অর্থ হল ক্যামেরা দিয়ে দেখা। পেটের যে অংশে পিত্তথলে অবস্থিত সেখানে ছোট ছোট ছিদ্র করে শুকনো সরু যন্ত্র দিয়ে পিত্তথলির পাথর অপসারণ করা হয়। রোগী দুই একদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।

অপারেশন না করলে  পিত্তথলিতে পাথর নিশ্চিত হওয়ার পর তা অপারেশন করে নেওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে খুবই প্রয়োজন। অবহেলায় বসে থাকেন তবে আপনার বিপদ থেকে আনতে পারে শরীরে। বেশি দেরি না করে অপারেশন করে ফেলা ভালো তা নাহলে জটিল রোগের সৃষ্টি করতে পারে। অনেকদিন পাথর নিয়ে থাকলে শরীরের জন্ডিস হয়ে প্রদাহ সৃষ্টি এমন দেখা দিতে পারে আপনার।

উপসংহার - পিত্তথলিতে পাথর কেন হয় - পিত্তথলিতে পাথর হলে করণীয় কি

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, আপনারা যারা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন পিত্তথলিতে পাথর কেন হয় - পিত্তথলিতে পাথর হলে করণীয় কি। সেজন্য আপনার শরীরের যে কোন রোগের জন্য কোন ওষুধ নিজে নিজে খাবেন না। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতে ওষুধের মাত্রা বুঝে সময় মত ওষুধ খাবেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ মত চলবেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এরকম আরো আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url