থানকুনি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

থানকুনি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম জেনে রাখুন।আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আজকে আপনাদের জানাবো থানকুনি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। শুধু পেটই নয়, আলসার, একজিমা, হাঁপানি সহ নানা চর্মরোগ সেরে যায় থানকুনি পাতা খেলে। থানকুনি পাতার আরো অনেক উপকারিতা গুণ রয়েছে যা আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না। চলুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক থানকুনি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
থানকুনি-পাতার-উপকারিতা-অপকারিতা-ও-খাওয়ার-নিয়ম
থানকুনি-পাতার-উপকারিতা-অপকারিতা-ও-খাওয়ার-নিয়ম
প্রতিদিন থানকুনি পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে বড় বড় রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। থানকুনি পাতা নিয়মিত খেলে ত্বকের ও জেল্লা বাড়ে। তাই আজকে আপনাদের জানাবো থানকুনি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা - থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। নিম্নে থানকুনি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা - থানকুনি পাতার ঔষধি গুণ ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

থানকুনি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

থানকুনি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম জানেন কি? জেনে নিন এর গুণাগুণ, পুষ্টিমান, ব্যবহার, উপকারিতা, ক্ষতিকর দিক ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। এক প্রাকৃতিক উপাদান মহৌষধ থানকুনি পাতা আপনার জীবন বদলে দিতে পারে। ছোট ছোট গোল গোল সবুজ পাতা থানকুনি ঔষধি গুণে ভরপুর কতই না আমাদের কাজে লাগে! আমাদের দেশে অত্যন্ত সহজলভ্য এবং সুলভ ভেষজ থানকুনি পাতা প্রাচীনকাল থেকেই লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই থানকুনি আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম ভিটামিন ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে নানা রকম অসুখ-বিসুখ সারিয়ে সৌন্দর্য চর্চা পর্যন্তও করে থাকে। 
থানকুনি পাতা আমাদের পেটের অসুখ, ক্ষত নিরাময়, ত্বকের যত্নে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু এর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তাহলে চলুন থানকুনি পাতার বিভিন্ন রকম উপকারিতা, ক্ষতিকর দিক এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

থানকুনি পাতার উপকারিতা

আমাদের দেশের খুব পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ হল থানকুনি পাতা। গ্রাম অঞ্চলে থানকুনি পাতার ব্যবহার আদিকাল থেকেই হয়ে আসছে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যদি কেউ নিয়মিত থানকুনি পাতা খান তবে মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। চলুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে।

থানকুনি ক্ষত নিরাময় করে

খেলতে গিয়ে পড়ে গিয়ে বা অন্য কোন কারণে হাত-পা কেটে গেলে দ্রুত রক্তপাত বন্ধ করার জন্য থানকুনি পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। থানকুনি পাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগালে ব্যথা কমবে এবং রক্ত পড়া বন্ধ হবে। এমনকি ক্ষতস্থানে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায়। সুতরাং থানকুনি পাতা ক্ষত নিরাময় করে খুব সহজভাবে।

বিশুদ্ধ রক্ত রাখে থানকুনি

থানকুনি পাতার রস পান করলে রক্ত পরিষ্কার থাকে। অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত আমাদের শরীরের সমস্ত কোষে যায় ফলে অন্যান্য অনেক সমস্যার সমাধান হয়। আমাদের হাত এবং পায়ের ফোলা কমাতেও থানকুনি পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। সুতরাং আপনার রক্ত বিশুদ্ধ ও পরিষ্কার রাখতে আপনি নিয়মিত থানকুনি পাতা বা পাতার রস খেতে পারেন।

প্রদাহ কমাবে থানকুনি

শরীরের অভ্যন্তরে কোন ক্ষত থাকলে তা জ্বর, ক্লান্তি, ক্ষুধা হ্রাস এবং পেশীতে ব্যথাসহ নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। থানকুনি পাতায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ফলে ব্যথা, জ্বালা, ক্লান্তি খুব দ্রুত চলে যায়। এছাড়াও থানকুনি পাতা অনেক ধরনের সংক্রমণ করতেও বাধা দেয়।

আলসার ও পেটের সমস্যা নিরাময়

পেটের যে কোন সমস্যায় থানকুনি গাছের পাতা খুবই উপকারী। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ আলসার এবং ডায়রিয়ার চিকিৎসার জন্য এই পাতা ব্যবহার করে আসছে। থানকুনি পাতার আ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি পেটের এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ দূর করতে সহায়তা করে। যাদের প্রায় ডায়রিয়া হয় তাদের জন্য থানকুনি পাতা দারুন উপকারী। এই পাতায় থাকা বিশেষ ধরনের ফাইবার এবং ভেষজ উপাদান আপনার হজমতন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলে। সুতরাং আলসার এবং মূত্রনালীর সংক্রমণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে সকালে সেদ্ধ থানকুনি পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে পান করতে হবে তাহলেই আপনি এর উপকারিতা পাবেন।
এর ফলে আপনার পেটের গ্যাস, এসিডিটি এবং ডায়রিয়ার মত অসুখ সহজেই দূর হয়ে যায়। এছাড়াও অজীর্ণতা, খাওয়ার অরুচি ইত্যাদি সমস্যা কমাতে কুনি পাতার রস বিশেষভাবে উপকারী। সুতরাং পেটের যেকোনো সমস্যার সমাধান দেবে থানকুনি পাতা।

মানসিক অবসাদ কমায়

যাদের মানসিক সমস্যা আছে তাদের জন্য থানকুনি পাতার রস বিস্ময়কর ভাবে কাজ করে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, থানকুনি পাতার রস মনকে শান্ত এবং স্থির রাখতে সহায়তা করে। থানকুনি স্ট্রেস হরমোন তৈরি নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মানসিক চাপ অস্থিরতা ও উদ্বিগ্নতার সম্ভাবনা কমে যায়। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, এর পাতাতে থাকা জাদুকরি ভেষজ উপাদান আমাদের স্নায়ুতন্ত্র কে প্রশমিত করে। এর ফলে থানকুনি পাতা মানসিক চাপ এবং অনিদ্রা দূর করতে সহায়তা করে থাকে।

মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়

গবেষকরা থানকুনি পাতাকে অনেক সময় 'মস্তিষ্কের খাবার' বা 'ব্রেইন ফুড' বলে থাকেন। গবেষণায় দেখা গেছে, থানকুনি মানুষের মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে স্নায়ু কোষকে সক্রিয় রাখে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। থানকুনি পাতা নিয়মিত খাওয়া হলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এক ধরনের রাসায়নিকের পরিমাণ বাড়ে, যা মস্তিষ্কে ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এতে স্মৃতিশক্তি যেমন ভালো হয় তেমনি বুদ্ধিও প্রখর হয়। সুতরাং থানকুনি পাতা বয়স্ক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে।

টক্সিন থেকে মুক্তি

থানকুনি পাতা আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর বর্জ্য বা টক্সিন জাতীয় উপাদান গুলি বের করে শরীর পরিষ্কার রাখে। আর অনবরত এই কাজটি করে থাকে আমাদের লিভার। দেখা গেছে, বিশেষ করে অনিয়মিত খাদ্যাভাস, ধূমপান, অ্যালকোহল পান এবং অতিরিক্ত ঔষধ সেবনে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। কিন্তু থানকুনি পাতা লিভারের কর্মক্ষমতাকে উন্নত করতে এবং টক্সিন উপাদান দূর করতে সক্ষম। নিয়মিত থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে শরীর থেকে সব খারাপ জিনিস বা টক্সিন বেরিয়ে যায়।

থানকুনি ত্বকের যত্নে

থানকুনিতে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে। এই ভিটামিন সি আমাদের ত্বকের বিভিন্ন উপকার সাধন করে থাকে। ফলে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমিয়ে ব্রণ নিরাময় করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। 
বিশেষ করে যাদের ত্বক শুষ্ক এবং এলার্জি প্রবণতা রয়েছে তাদের জন্য থানকুনি পাতা হতে পারে একটি বিশেষ ভাবে কার্যকরী ভেষজ উপাদান। সুতরাং চকচকে উজ্জ্বল ত্বক পেতে নিয়মিত থানকুনি পাতা খেতে পারেন।

চুলের যত্নে থানকুনি

দেখা যায় আমরা অনেকেই মাথার ত্বক এবং চুল পড়া সমস্যা নিয়ে প্রায় দুশ্চিন্তায় থাকে। এর সহজ সমাধান এনে দিতে পারে আপনার আশেপাশে থাকা সহজলভ্য থানকুনি। কেননা চুল পড়া কমাতে এবং মাথার ত্বক সুস্থ রাখতে থানকুনি পাতা বিশেষভাবে উপকারী। এই পাতায় থাকা আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। এর ফলে মাথায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। সুতরাং শক্তিশালী ঘন কালো চুল এবং ঝলমলে চুল পেতে থানকুনি পাতা নিয়মিত খেতে পারেন।

থানকুনি হৃদরোগ প্রতিরোধ করে

থানকুনি পাতার ভেষজ উপাদান আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। থানকুনিতে বিদ্যমান পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম। সুতরাং নিয়মিত থানকুনি গ্রহণ করলে আমাদের হার্ট সুস্থ থাকে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে পারে। (তথ্যসূত্র: পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল এন্ড কার্ডিয়াক সেন্টার, ঢাকা, বাংলাদেশ)

থানকুনি পাতার অপকারিতা

থানকুনি পাতার অনেক উপকারিতা গুণ থাকলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খেলে কিছু কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাহলে চলুন থানকুনি পাতার অপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক।
  1. থানকুনি পাতা অধিক ব্যবহারে মাথা ব্যথা বমি ভাব, মাথা ঘোরা এবং ঘুম ঘুম ভাব করতে পারে।
  2. বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় এই মেসেজটি কতটা নিরাপদ সেই সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য নেই তাই মায়েদের থানকুনি পাতা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  3. অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খেলে পেট খারাপ বা পেট ব্যথা হতে পারে।
  4. যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা থানকুনি পাতা গ্রহণ করলে শরীরে লাল লাল চোখ বা দাগ সৃষ্টি হতে পারে।
  5. থানকুনি পাতা দীর্ঘদিন একটানা খেলে লিভারের ওপর চাপ পড়তে পারে।
  6. স্তন্য দায়ী নারী এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া থানকুনি গ্রহণ না করায় উত্তম।

থানকুনি পাতার ব্যবহার

  1. চুল পড়ার হার কমায়।
  2. শরীর থেকে টক্সিন উপাদান বের করে দেয়।
  3. শরীরের ক্ষত নিরাময়ে উপকারী।
  4. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়।
  5. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
  6. চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে।
  7. আমাশয়ের মত সমস্যা দূর করে।
  8. কাশির প্রকোপ কমায়।
  9. গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে।
  10. রক্তস্বল্পতা দূর করে।
  11. হাড় এবং দাঁতের গঠন শক্তিশালী করে।
  12. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

থানকুনি পাতার পুষ্টিগুণ

আমাদের দেশে থানকুনি পাতা অবহেলিতভাবে যেখানে সেখানে পাওয়া যায়। আকারে ছোট হলেও এতে রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। যা আপনি শুনলে অবাক না হয়ে পারবেন না। তাহলে চলুন থানকুনি পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। প্রতি ১০০ গ্রাম থানকুনি পাতায় যতটা পুষ্টিগুণ থাকে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো।
ক্রমিক নাম্বার
উপাদান
পরিমাণ
        ক্যালসিয়াম
১৭১ মিলিগ্রাম
       পটাশিয়াম
৩৯১ মিলিগ্রাম
       আয়রন
৫.৬ মিলিগ্রাম
       ভিটামিন এ
৪৪২ মাইক্রোগ্রাম
       ভিটামিন বি২
০.১৯ মিলিগ্রাম
       ভিটামিন সি
৪৮.৫ মিলিগ্রাম

থানকুনি পাতার ঔষধি গুণ ও খাওয়ার নিয়ম

থানকুনি একটি ভেষজ উদ্ভিদ। ছোট ছোট পাতার এই গাছ শরীরের জন্য অনেক উপকারী। ইংরেজিতে এর নাম Indian Pennywort. বহুবিধ উপকারিতার কারণেই থানকুনি একটি পরিচিত নাম। এর কোন স্বাদ নেই। থানকুনি অনেক রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আসুন জেনে নেই এই পাতার ঔষধি গুণ ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-
  1. পেঁপের সাথে থানকুনি পাতা মিশে রান্না করে একমাস খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  2. থানকুনি পাতার রস এক চা চামচ ও শিউলি পাতার রস এক চা চামচ মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে জ্বর প্রতিরোধ করবে।
  3. অল্প পরিমাণ আম গাছের ছাল, আনারসের কচি পাতা একটি, কাঁচা হলুদের রস, চার-পাঁচটি থানকুনি গাছের শিকড়সহ ভালো করে ধুয়ে একত্রে পেটে রস করে খালি পেটে খেলে পেটের অসুখ ভালো হয়। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা বেশি কার্যকর।
  4. আধা কেজি দুধে ২৫০ গ্রাম মিশ্রি ও ১৭৫ গ্রাম থানকুনি পাতার রস একত্রে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে এক সপ্তা খেলে গ্যাস্ট্রিক ভালো হয়।
  5. দুই চামচ থানকুনি রস সামান্য চিনিসহ খেলে সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসে কাশিতে উপকার পাওয়া যায়। এক সপ্তাহ খেলে পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবে।
  6. সকালে খালি পেটে চার চামচ থানকুনি পাতার রস ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে সাত দিন খেলে রক্ত দূষণ দূর হয়।
  7. যেসব বাচ্চা কথা বলতে দেরি করে এক চা চামচ করে থানকুনি পাতার রস গরম করে ঠান্ডা হলে কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে ঠান্ডা দুধের সাথে কিছুদিন খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।
  8. প্রতিদিন সকালে ৫ থেকে ৭ টি থানকুনি পাতা চিবিয়ে সাত দিন খেলে আমাশয় ভালো হয়। থানকুনি পাতা পেটে পাতার রসের সাথে চিনি মিশিয়ে দুই চা চামচ দিনে দুইবার খেলে আমাশয় ভালো হয়।
  9. থানকুনি পাতা বেটে গরম ভাতের সাথে খেলে পেট ব্যথা ভালো হয়।
  10. প্রতিদিন সকালে থানকুনির রস এক চা চামচ পাঁচ-ছয় ফোঁটা হলুদের রস সামান্য চিনি ও মধুসহ একমাস খেলে লিভারের সমস্যা ভালো হয়।
  11. যদি মুখ মলিন হয় লাবণ্যটা কমে যায় তবে পাঁচ ছয় চা চামচ থানকুনি পাতার রস দুধ দিয়ে খেতে হবে। নিয়মিত করলে উপকার পাবে।
  12. কোথাও থেতলে গেলে থানকুনি গাছ বেটে অল্প গরম করে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে প্রলেপ দিয়ে রাখলে সেটা খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।
  13. অপুষ্টি ও ভিটামিনের অভাবে চুল পড়ে গেলে পুষ্টিকর ও ভিটামিন সম্পৃক্ত খাবারের পাশাপাশি ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। এতে করে আপনার চুল ওঠার প্রতিরোধ করবে।
  14. মল পরিষ্কারভাবে না হলে, পেটে গ্যাস হলে কোন কোন সময় মাথা ধরায় সব ক্ষেত্রে ৩-৪ চামচ থানকুনি রস গরম করে ও সমপরিমাণ গরম দুধ মিশিয়ে খেতে হবে। নিয়মিত খেলে উপকার পাবেন।
  15. ঠান্ডায় নাক বন্ধ হলে অথবা সর্দি হলে থানকুনি শিকড় ও ডাটার মিহি গুঁড়ার নিশি নিলে উপকার পাওয়া যায়।

FAQ: প্রশ্নোত্তর - থানকুনি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

১। প্রশ্ন: থানকুনি পাতার অপর নাম কি?
উত্তর: থানকুনি পাতার অপর নাম মানকচু পাতা, ব্রাহ্মণী শাক, আদামণি ইত্যাদি।
২। প্রশ্ন: থানকুনি পাতার ইংরেজি নাম কি?
উত্তর: থানকুনি পাতার ইংরেজি নাম হল Gotu Kola বা Indian Pennywort. 
৩। প্রশ্ন: থানকুনি গাছ কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর: থানকুনি গাছ মাঠে, পুকুর পাড়ে, সাঁতসাতে খালি জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়।
৪। প্রশ্ন: থানকুনি পাতার রস মুখে দিলে কি হয়?
উত্তর: থানকুনি পাতা রস মুখে দিলে ফুসকুড়ি, ব্রণ এবং ত্বকের অন্যান্য সমস্যা দূর করে ত্বককে কোমল ও উজ্জ্বল করে তোলে।
৫। প্রশ্ন: থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম কি?
উত্তর: থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম পদ্ধতি হলো-
  • থানকুনি পাতা কাঁচা অথবা শাক ভাজি হিসেবে খাওয়া যায়।
  • থানকুনি পাতার রস বের করে অল্প পরিমাণে মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া বেশ জনপ্রিয়।
  • ভর্তা, চাটনি কিংবা সালাদ হিসেবে থানকুনি খাওয়া যায়।
  • ওষুধ তৈরিতে থানকুনির পাতা অনেক ভাবে ব্যবহৃত হয়।

উপসংহারঃ থানকুনি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, থানকুনি পাতা বেটে পাতার রসের সাথে চিনি মিশিয়ে ২ চা চামচ দিনে খেলে পেটের আমাশয় ভালো হয়। থানকুনি পাতার অনেক উপকারিতা, অপকারিতা, পুষ্টিগুণ, ব্যবহার এবং খাওয়ার নিয়ম পদ্ধতি রয়েছে যা আমরা বিস্তারিত ভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আপনারা যদি মনোযোগ সহকারে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়েন তবে বুঝতে পারবেন থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - থানকুনি পাতার ঔষধি গুণ সম্পর্কে। আজকের লেখায় কোন ভুল ত্রুটি থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন আমরা যত দ্রুত সম্ভব যোগাযোগ করব। লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকলে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো যেন অন্যরাও উপকৃত হতে পারেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে ধৈর্য সহকারে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
লেখক পরিচিতি:
মোহাঃ গোলাম কবির
বি.এস-সি (অনার্স), এম.এস-সি
পরিসংখ্যান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।
(বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত নিয়মিত ব্লগ লেখক)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url