মুখের ব্রণ দূর করার ৭টি কার্যকর ঘরোয়া উপায় - স্থায়ী সমাধান ঘরে বসেই!

মুখের ব্রণ দূর করার ৭টি কার্যকর ঘরোয়া উপায় - স্থায়ী সমাধান ঘরে বসেই!প্রিয় পাঠক আপনি কি মুখের ব্রাণ দূর করার কার্যকর ঘরোয়া উপায় নিয়ে ভাবছেন? মুখের ব্রণ নিয়ে দুশ্চিন্তার আর কোন কারণ নেই। স্থায়ী সমাধান ঘরে বসেই পেয়ে যাবেন। তাই আজকের "মুখের ব্রণ দূর করার ৭টি কার্যকর ঘরোয়া উপায় - স্থায়ী সমাধান ঘরে বসেই" শিরোনামের নামের লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
মুখের-ব্রণ-দূর-করার-৭টি-কার্যকর-ঘরোয়া-উপায়
মুখের-ব্রণ-দূর-করার-৭টি-কার্যকর-ঘরোয়া-উপায়। ছবি - এআই
মুখের ব্রণ দাগ নেই এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর এই ব্রণ দূর করার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি এবং প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি। অনেক অনেক সময় ভুল পদ্ধতি এবং ক্ষতিকর প্রসাধনী ব্যবহার করার কারণে মুখের ব্রণ দূর করতে গিয়ে আরো ক্ষতির সম্মুখীন হই। তাই আজকে আপনাদের জন্য সঠিক পদ্ধতি এবং মুখের ব্রণ দূর করার ৭টি কার্যকর ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

মুখের ব্রণ দূর করার ৭টি কার্যকর ঘরোয়া উপায়

মুখের ব্রণ দূর করার ৭টি প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় জানুন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই নিরাপদে ব্রণ কমান এবং পান স্থায়ী সমাধান আজই। ব্রণ আমাদের ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিতে পারে। বাজারে প্রচলিত নানা ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী পাওয়া গেলেও ঘরোয়া উপায়ে মুখের ব্রণ দাগ দূর করা অনেক বেশি নিরাপদ ও কার্যকর। আজকে জেনে নিন ৭ (সাত)টি কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি, যা দিয়ে আপনি সহজেই প্রাকৃতিকভাবে ব্রণের সমাধান করতে পারবেন। নিচে আপনাদের জন্য মুখের ব্রণ দূর করার ৭টি কার্যকার ঘরোয়া উপায় উল্লেখ করা হলো।

মুখের ব্রণ দূর করতে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার

মুখের ব্রণ দূর করতে অ্যালোভেরা জেলের তুলনা নেই। অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। এটি ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে এবং ব্রণের লালচে ভাব কমায়। এজন্য প্রতিদিন রাতে অ্যালোভেরা জেল নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। তাই অ্যালোভেরা মুখের ব্রণ দূর করার একটি কার্যকর ঘরোয়া উপায়। নিচে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করার ব্যবহারবিধি উল্লেখ করা হলো-
ব্যবহার বিধি:
- ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল নিয়ে মুখে লাগান।
- ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- প্রতিদিন রাতে ব্যবহার করুন।

মুখের ব্রণ দূর করতে হলুদ ও মধুর প্যাক ব্যবহার

মুখের ব্রণ দূর করতে হলুদ ও মধুর প্যাক ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী। কেননা হলুদে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান এবং মধু স্কিন ময়েশ্চারাইজ করে। এই দুটি প্রাকৃতিক উপাদান একসাথে ব্যবহার করলে ব্রণের জীবাণু ধ্বংস হয়। তাই মুখের ব্রণ দূর করতে হলুদ ও মধুর প্যাক ব্যবহার একটি কার্যকর ঘরোয়া উপায় বলতেই পারেন। নিচে ব্রণ দূর করতে হলুদ ও মধুর প্যাক ব্যবহার বিধি উল্লেখ করা হলো।
ব্যবহার পদ্ধতি:
- এক চা চামচ হলুদ+ এক চা চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
- মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট ধরে।
- শেষে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করুন।

মুখের ব্রণ দূরীকরণে লেবুর রস

মুখের ব্রণ দূর করতে লেবুর রস কার্যকরী একটি ঘরোয়া উপায়। কেননা লেবুর রস ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং ব্রণের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। ফলে ত্বক দেখাবে উজ্জ্বল এবং মসৃণ। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। নিচে লেবুর রস ব্যবহার সম্পর্কে সতর্কতা উল্লেখ করা হলো।
সতর্কতা:
- সংবেদনশীল ত্বকে সরাসরি লেবু ব্যবহার না করাই ভালো।
- পানির সঙ্গে লেবুর রস হালকা মিশিয়ে ব্যবহার করুন।

মুখের ব্রণ দূর করতে টি ট্রি ওয়েল (Tea Tree Oil)

মুখের ব্রণ দূর করতে টি ট্রি ওয়েল (Tea Tree Oil) তুলনাহীন। কারণ মুখের ব্রণ দূর করতে টি ট্রি ওয়েল (Tea Tree Oil) এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুে ভরপুর, যা ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে নিমিষেই। সুতরাং মুখের ব্রণ দূর করতে টি ট্রি ওয়েল (Tea Tree Oil) একটি ঘরোয়া উপায় বলতে পারেন। নিচে টি ট্রি ওয়েল (Tea Tree Oil) এর ব্যবহার পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো-
ব্যবহার পদ্ধতি:
- ১ ফোঁটা টি ট্রি ওয়েল+ ১ চা চামচ পানি মিশিয়ে লাগান।
- দিনে ১ থেকে ২ বার ব্যবহার করুন।

টমেটো মাস্ক

মুখের ব্রণ দূর করতে টমেটো মাস্ক একটি কার্যকরী ঘরোয়া উপায়। কেননা টমেটোতে রয়েছে লাইকোপিন, যা ব্রণ কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখে। নিচে টমেটো মাস্ক এর ব্যবহার বিধি উল্লেখ করা হলো।
ব্যবহার বিধি:
- টমেটো ব্লেন্ড করে রস বের করে নিন।
- তুলা দিয়ে মুখে লাগান।
- ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন।

মুখের ব্রণ দূরীকরণে বেসন ও দুধের প্যাক

মুখের ব্রণ দূরীকরণে বেসন এবং দুধের ত্যাগ ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী একটি ঘরোয়া উপায়। কারণ বেসন ত্বক পরিষ্কার রাখে এবং দুধ প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। ফলে বেসন ও দুধের প্যাক মুখের ব্রণ দূর করে ত্বককে রাখে উজ্জ্বল এবং হেলদি। চলুন মুখের ব্রণ দূরীকরণে বেসন এবং দুধের প্যাকের ব্যবহার বিধি সম্পর্কে জেনে নিই।
ব্যবহার পদ্ধতি:
- ১ চা চামচ বেসন+ ১ চা চামচ কাঁচা দুধ একসঙ্গে পেস্ট করুন।
- বেসন ও দুধের পেস্ট মুখে লাগান।
- ২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ফেলুন।

মুখের ব্রণ দূর করতে বরফ লাগানো (Ice Therapy)

মুখে ব্রণ হলে ত্বক ফুলে যায় এবং লালচে ভাব হয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে। কিন্তু বরফ ত্বকের ফোলাভাব ও লালচে ভাব কমাতে সাহায্য করে। মুখের ব্রণ দূর করতে আপনি ঘরোয়া উপায় হিসেবে নিয়মিত বরফ লাগাতে পারেন। নিচে বরফ লাগানো ব্যবহারবিধি উল্লেখ করা হলো।
ব্যবহার পদ্ধতি:
- একটি কাপড়ে বরফ পেঁচিয়ে মুখে ১ থেকে ২ মিনিট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লাগান।
- দিনে ২বার ব্যবহার করতে পারেন।

মুখের ব্রণ দূর করতে অতিরিক্ত টিপস (Bonus Tips)

  • প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন।
  • ফাস্টফুড এবং চিনি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • পিলো কভার ও তোয়ালে নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
  • হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে মোবাইল স্ক্রিন পরিষ্কার রাখুন।
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত সময় ঘুমান।
তৈলাক্ত=ত্বকের-ব্রণ-দূর-করার-উপায়
তৈলাক্ত=ত্বকের-ব্রণ-দূর-করার-উপায়। ছবি - এআই

তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করার উপায়

তৈলাক্ত ত্বক বা অয়েলি স্কিন হলে ব্রণের সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ছেলেদের এবং মেয়েদের তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ বেশি লক্ষ্য করা যায়। অতিরিক্ত তেল, ধুলোবালি এবং মৃত কোষ ত্বকে জমে গিয়ে পোরস বন্ধ করে দেয়, যার ফলে তৈরি হয় ব্রণ। তবে সঠিক সময়ে সঠিক যত্ন এবং নিয়মিত ঘরোয়া উপায় মেনে চললে খুব সহজেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করার উপায় সমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
  • দিনে অন্তত ২ বার মুখ ধোয়া।
  • লেবু এবং মধুর মিশ্রণ ব্যবহার করা।
  • টমেটো মাস্ক ব্যবহার করা।
  • বরফের টুকরা ঘষে নেওয়া।
  • অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা।
  • অতিরিক্ত প্রসাধনী এড়িয়ে চলা।
  • টি ট্রি ওয়েল ব্যবহার করা।
  • হলুদ এবং ব্যাসন প্যাক ব্যবহার করা।
  • পর্যাপ্ত ঘুম এবং খাদ্যাভাস মেনে চলা।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করা।
ছেলেদের ও মেয়েদের তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি সেখানকার ব্যবহার বিধি ও নিয়ম-নীতি মেনে চললে তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করা অনেকটাই সম্ভব। আশা করি ছেলেদের ও মেয়েদের ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন।

যে ভুলগুলো করবেন না

  • বারবার মুখে হাত দেয়া যাবে না।
  • নিজে থেকে ব্রণ ফাটানো যাবে না।
  • ত্বক অপরিষ্কার রাখা যাবে না।
  • হার্ড স্ক্রাব বা সাবান ব্যবহার করা অনুচিত।

FAQ: কিছু প্রশ্ন ও উত্তর - মুখের ব্রণ দূর করার ৭টি কার্যকর ঘরোয়া উপায়

১। প্রশ্ন: কোন হরমোনের কারণে ব্রণ হয়?
উত্তর: সাধারণত হরমোনের উঠানামার কারণে ব্রণ হয়। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে আ্যান্ড্রোজেন (যেমন টেস্টোস্টেরন) হরমোন এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ব্রণ হয়।

২। প্রশ্ন: মুখে কি দিলে ব্রণ দূর হয়?
উত্তর: মুখের ব্রণ দূর করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় এবং কার্যকরী উপাদান মেনে চললে ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। ব্রণ দূর করতে বেঞ্জয়াইল পারক্সাইড এবং আ্যাডাপালিন ব্যবহার করা যেতে পারে। ওমেগা - ৩, জিংক, প্রোবায়োটিক, ফাইবার এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যেতে পারে। মুখের ত্বক পরিষ্কার রাখা এবং ব্রণ হলে তা খোঁটা কিংবা ফাটানো থেকে বিরত থাকা উচিত। মানসিক চাপ কমাতে পারলে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমে। সঠিক ভাবে পর্যাপ্ত ঘুম এবং পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।

৪। প্রশ্ন: ব্রণে লেবুর রস দিলে কি হয়?
উত্তর: ব্রণে লেবুর রস সরাসরি ব্যবহার করা উচিত নয়। লেবুর রস এ থাকা সাইট্রিক এসিড ব্রণের জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং ব্রণের দাগ হালকা করতে পারে। তবে লেবুর রস সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করলে কিছু সমস্যা হতে পারে। যদি আপনার ব্রণের সমস্যা থাকে তাহলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৫। প্রশ্ন: প্রতিদিন মুখে মধু দিলে কি হয়?
উত্তর: প্রতিদিন মুখে মধু দিলে ত্বক উজ্জ্বল হয়, ত্বক ময়শ্চারাইজড থাকে এবং ব্রণের সমস্যা কমে যায়। মধু ত্বককে নরম এবং কোমল করে ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে।

সর্বশেষ কথা - মুখের ব্রণ দূর করার ৭টি কার্যকর ঘরোয়া উপায়

মুখের ব্রণ দূর করতে বাজারের কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় বেছে নিন। উপরের যে কোন একটি বা একাধিক পদ্ধতি নিয়মিত অনুসরণ করলে আপনি ত্বকে স্পষ্ট পরিবর্তন দেখতে পাবেন। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার, তবে নিয়মিত ত্বকের যত্ন এবং প্রাকৃতিক উপায় অনুসরণ করলে আপনি পেতে পারেন পরিষ্কার, ব্রণ মুক্ত সুন্দর সতেজ ত্বক। তাই ঘরোয়া উপায় গুলো নিয়মিত চর্চা করুন এবং প্রয়োজন হলে ডারমাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নিন। আজকের পোস্টটি যদি পড়ে আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করুন এবং কমেন্টে জানান আপনি কোন উপায়টি অনুসরণ করেন। আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url