মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার জানেন কি?
মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার জানেন কি?আসসালামু আলাইকুম। আপনারা অনেকেই বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম, বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়, কি খেলে বুকের দুধ আসে, কি খেলে বুকের দুধ শুকিয়ে যায় এবং বুকের দুধ বৃদ্ধির দোয়া ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চান। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা যারা আজকে জানতে চাইছেন মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। প্রতিটি মা ই চায় তার বাচ্চা যেন সুস্থ, সবল ও ভালো থাকে কিন্তু যেসব মায়েরা প্রথমবার মা হয়েছেন এবং সহযোগিতা করার মতো পরিবেশ পান নাই তারা বুকের দুধ খাওয়াতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন ফলে বুকের দুধের পরিমাণ কমে যায়।
সদ্যজাত শিশুর জন্য একমাত্র উপকারই খাদ্য হলো তার মায়ের বুকের দুধ। তবে অনেক সময় বাচ্চাদের চাহিদা অনুযায়ী দুধ পায় না। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায় ১০ - ১৫ % সদ্য মা হওয়া নারী দুধ উৎপাদনের হার কম থাকে। ফলে বাচ্চার চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়ে। সেজন্য আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে।
মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার
মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার জানেন কি? জেনে নিন মায়ের বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ার কারণ, বুকের দুধ বৃদ্ধি করার ঘরোয়া উপায়, বুকে দুধ বৃদ্ধির ওষুধের নাম ইত্যাদি। মায়ের বুকের দুধ কমে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে যেমন, বাচ্চাকে সময় মত খেতে না দেওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টির অভাবে ইত্যাদি।
আরো পড়ুন: কালোজিরা উপকারিতা ও অপকারিতা
আরও বিভিন্ন কারণে বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ কম পায়। এজন্য মায়েদেরকে পানি পান করতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে তাহলে বাচ্চারা পরিমাণ মতো দুধ পান করতে পারবে।
মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার কারণঃ
সদ্য জাত শিশুর জন্য একমাত্র উপকারই খাদ্য হলো তার মায়ের দুধ। সেখানে যদি শিশুরা মায়ের দুধ না খেতে পাই অথবা দুধ কম পায় সেক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার নানা রকম কারণ থাকতে পারে। আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার কারণগুলো-
১। মা যদি কোন সমস্যার কারণে চিন্তিত থাকে তবে মায়ের বুকের দুধ কমে যাবে। সেজন্য প্রতিটি মাকে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খেতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। এতে করে দেখবেন আপনার মা ও শিশু দুটোই ভালো থাকবে।
২। বাচ্চা প্রসবের পরে খুব তাড়াতাড়ি শ্রবণ করার ফলে মায়ের বুকের দুধ কমে যায়। সে ক্ষেত্রে আপনাকে জন্মের অন্তত ছয় থেকে সাত মাস পরে থেকে শুধু বিল শ্রবণ করা যায়। এক্ষেত্রে যদি আপনি উপকার না পান তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
৩। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে বাচ্চা সঠিক পরিমাণে দুধ পায় না। আবার পচাত্ত পরিমাণে পানি শরীরের জন্য খুবই উপকারী আপনার শরীরে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না থাকে তবে আপনার প্রস্রাবে নানা রকম সমস্যা হতে পারে।
৪। মা যদি বাচ্চাকে ঘনঘন সময় মতো দুধ পান না করায় তবে মায়ের বুকের দুধ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে ঘনঘন বাচ্চাকে দুধ পান করাতে হবে। এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। তবেই বাচ্চা পরিমাণ মতো দুধ খেতে পাবে।
৫। বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ভুল পদ্ধতি কারণেও বাচ্চারা মায়ের দুধ কম পায়। দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর মাথা ও কাধ সমান্তরাল থাকবে। শিশুর মুখে বড় করে হা করিয়ে তারপর দুধ খাওয়াতে হবে যাতে করে নিচের দিকে ঠোঁটা উল্টিয়ে থাকে মায়ের দুধের স্তনের কালো অংশ যাতে শিশুর মুখের নিচের চেয়ে উপরের অংশ বেশি দেখা যায়।
৬। আপনার বাচ্চাকে যদি ফিডারের দুধ খাওয়ান তবে মায়ের বুকের দুধের চাহিদা কমে যাবে। ফিডারের নিপিল এবং স্তন চোষার মধ্যে মধ্যে পার্থক্য আছে। ফিডারের দুধ চোষা এবং স্তনের দুধ চোষা নিয়ে শিশু যদি বিভ্রান্তিতে থাকে তবে মায়ের বুকের দুধ কম খাবে এবং সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে মায়ের বুকের দুধ কমে যাবে।
আরো পড়ুন: গর্ভের সন্তান ফর্সা করার আমল ও উপায়
৭। মায়ের বুকের দুধ তৈরি হওয়া একটা "ডিমান্ড এন্ড সাপ্লাই সিস্টেম" অনুসরণ করে। অর্থাৎ বাচ্চা যত মায়ের দুধ টানবে তত মায়ের মস্তিষ্কের পিটুটটারি গ্রন্থি উদ্যোক্ত হয়ে বেশি বেশি প্রটেক্টলি হরমোন তৈরি হবে এবং স্তনে দুধ বৃদ্ধি পাবে এবং বাচ্চা পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পাবে।
৮। অপরদিকে বাচ্চাকে যদি ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ না পান করান তবে মায়ের বুকের দুধ কমে আসবে এবং বাচ্চা পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পাবে না।
৯। আবার এমনটা হয় সবগুলো ঠিক আছে বাচ্চাকে ঘন ঘন দুধ পান করানো, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলেও অনেক মায়েদের দুধের পরিমাণ বিদ্যু পায় না। বাচ্চা পরিমাণ মতো দুধ পায় না সে ক্ষেত্রে আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।
১০। গর্ভকালীন সময় হতে বাচ্চা জন্মদানের সময় কাল মায়ের স্তনের গ্রন্থি ও কোষের বিকাশের ভূমিকা রাখে। কিন্তু যদি প্রি ম্যাচুর বাচ্চা হয় তবে মায়ের বিকাশে বাধা দেয় এবং দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে মা সে ক্ষেত্রে বাচ্চা দুধ কম পায়।
১১। মায়ের দুধ কম হওয়ার পিছনে নানা রকম ওষুধের ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন-আপনি যদি দীর্ঘকাল যাবত অসুখে ভোগেন এবং নিয়মিত সেই ওষুধ শ্রবণ করেন এবং সে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তে মায়ের বুকের দুধ কম হতে পারে।
১২। অনেক মায়েদের অতিরিক্ত ওজনের ফলে বুকের দুধ কম হতে পারে আবার যেসব মায়েরা অ্যালকোহল, সিগারেট ইত্যাদি এবং অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করেন তাদেরও দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার চিকিৎসাঃ
মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে হলে প্রথমে আপনাকে দৈনিক খাবারের সাথে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের ব্যবস্থা করতে হবে। কালিজিরা এবং লাউ এর তরকারি খেতে পারেন এতে ভালো উপকার পাবেন। আপনি নিম্নের ঔষধ গুলো কিনে খেতে পারেন যে কোন ফার্মেসির দোকান থেকে। তবে হ্যাঁ অবশ্যই যে কোন ওষুধ শ্রবণের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর শ্রবণ করবেন।
- Tab. PontopPrazole 20 mg (1+o+1) - ২১ দিন খাবার আধাঘন্টা আগে।
- Tab. Domperidon 10 mg (3+3+3) - ২১ দিন খাবার আধা ঘন্টা আগে।
- জিংক সিরাপ দিনে ২ চামচ করে খাবার আধা ঘন্টা আগে।
- ক্যালসিয়াম ডি৩ (০+1+০) - ২১ দিন।
- Tab. Momvit plus (1+0+1) - ২১ দিন।
আপনি যদি নিয়মিত এই মেডিসিন গুলো খেতে পারেন তবে আপনার বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ এসে যাবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে। যে কোন ঔষধ শ্রবণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর শ্রবণ করুন।
আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় পা ফুলে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার
আপনি যদি আপনার বুকের দুধ ওষুধের শ্রবণের ফলে বৃদ্ধি করতে চান তবে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়ে কথা বলে তারপর ওষুধ সেবন করুন।
মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার প্রতিকারঃ
তার জন্মের প্রথম ৬ মাস শুধু মাত্র মায়ের বুকের দুধেই খাওয়াতে হবে। কারণ মায়ের বুকের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে অনেক সময় নানা করনে মায়ের বুকের দুধ কম হতে পারে সে ক্ষেত্রে শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ পান করানো যায়। সাম্প্রতিক মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার সমস্যাটা অনেক বেড়ে গেছে।
সেজন্য আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার প্রতিকারগুলো যেগুলো মেনে চললে এই সমস্যা এড়ানো অনেকটাই সম্ভব।
ঘনঘন স্তন্যপানঃ
আপনার শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ পান করান। কারণ শিশু যত বেশি দুধ পান করবে ততই দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এবং শিশুকে প্রতিটি পাশে কমপক্ষে ১০ মিনিট করে দুধ খাওয়ান।
পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করাঃ
মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার অন্যতম আরেকটি কারণ হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ জল না পান করা। সেজন্য আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করেন তবে এ সমস্যাটা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়। মায়ের দুধের প্রায় ৯০% জলের ভাগ। সেজন্য আপনাকে প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ক্লাস পানি পান করতে হবে। ছাড়াও অন্যান্য তরল খাবার যেমন দুধ চুস স্যুপ পান করা জরুরি এই পানিগুলো শরীরকে হাইডেড রাখতে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়াঃ
বাচ্চা যখন মায়ের দুধ পান করে তখন শরীর ক্লান্ত হয়ে যায় সেজন্য মাতৃকালীন অবস্থায় দুধ উৎপাদনের হারও কমে যেতে পারে। অত্যন্ত স্বাভাবিক তাই সংসারের যাবতীয় কাজ সামলানোর পাশাপাশি সময় বার করে বিশ্রাম নিন। পর্যাপ্ত ঘুম হলে বাচ্চা পর্যাপ্ত দুধ পাবে।
ব্রেস্ট পাম্পঃ
ব্রেস্ট পাম্প দুধ উৎপাদনের হার বাড়িয়ে দেয়। প্রত্যেকবার স্তন্যপান করানো হয়ে গেলে দুই থেকে তিনবার ব্রেস্ট পাম্প করান। তবে যেকোন ওষুধ বা চিকিৎসা গ্রহণের আগে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপরে কাজ করা উচিত।
অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ডায়েটঃ
আপনার বুকের দুধ বাড়াতে চাইলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় টাটকা শাকসবজি পেয়াজ চিকেন ডিম দুধ রসুন ইত্যাদি খাবার রাখুন। এছাড়া মৌসুমী ফল ওমেগা ত্রিশাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার দানকারী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত ভালো। এছাড়াও আপনার বুকের দুধ যদি বৃদ্ধি করতে চান তবে মেথি , ওটমিল, মৌরি ইত্যাদি খেতে পারেন।
ত্বকের সাথে ত্বকের যোগাযোগঃ
মা ও শিশুকে একই বিছানায় শুতে দিন সে ক্ষেত্রে মা ও শিশুর ত্বকের সাথে ত্বকের সংস্পর্শ তৈরি হবে এবং এটি দুধের উৎপাদনকে উৎসাহিত করবে। এটি অনেক নতুন মাকে আরো দুধের ক্ষেত্রে দ্রুত সাহায্য করেছে।
স্তন ম্যাসাজঃ
আপনার বাচ্চা যদি দুধ কম পায় অথবা স্তনে কোন দুধ না আসে তবে স্তন ম্যাসাজ করতে পারেন। আপনার স্তনকে একটি বৃত্তাকার হালকা ম্যাসাজ করুন। চাপটি আপনার বুকের দুধকে দ্রুত আনতে সাহায্য করবে।
বুকের দুধ বাড়ানোর ৯টি ঘরোয়া উপায় ও কৌশল জেনে রাখুন
আজকাল মায়েরা তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন। কিন্তু কোন দুশ্চিন্তা না করে আপনি শান্ত মেজাজে আপনার সন্তানকে ঘরোয়া উপায়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বুকের দুধ বাড়িয়ে খাওয়াতে পারেন। তাহলে চলুন বুকের দুধ বাড়ানোর ৯টি ঘরোয়া উপায় ও কৌশল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
- আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পূর্বে প্রথমেই স্থানকে সম্পূর্ণরূপে নাড়াচাড়া করুন। এভাবে ঘন ঘন নার্সিং করলে আপনার শরীরকে বেশি বেশি জন্য হরমোন সংকেত দিতে থাকবে।
- আপনার শিশুকে দুধ পান করানোর সময় বা মাঝে মাঝে স্তনে পাম্প করুন। এতে করে এ সংকেতটি আপনার শরীরকে বেশি বেশি দুধ তৈরি করার নির্দেশ দিতে থাকবে এবং পাম্প করার পূর্বে সহজেই কম্প্রেশন করলে দুধ বের হতে থাকবে।
- আপনি নিশ্চিত করুন যে আপনার শিশুটি দুধ খাওয়ার সময় গভীরভাবে মনোযোগ দিয়ে আটকে আছে এবং উভয় দিক থেকে সমান পরিমাণে বুকের দুধ টানছে। প্রয়োজন হলে খাওয়ানোর সময় শিশুকে এদিক-ওদিক নাড়াচাড়া বা দিক পরিবর্তন করুন।
- আপনি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন এবং শেষ সময় খাবার খান। এই ধরুন যেমন টাটকা শাকসবজি, ফলমূল, পুরো শস্য, আমিষ এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার চালিয়ে যেতে পারেন। এতে করে আপনার বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ উৎপন্ন হতে থাকবে।
- স্পেশাল ভাবে বুকের দুধ বাড়ানোর কিছু উপাদান যেমন বার্লি, ওটস, রসুন, কালোজিরা এবং মেথির মতো কিছু খাবার মেনুতে সংযুক্ত রাখুন যা বুকের দুধ উৎপাদনে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা রাখে।
- দুশ্চিন্তা এবং স্ট্রেস একেবারেই ঝেড়ে ফেলুন। কারণ এগুলো নেতিবাচক আবেগ আপনার বুকের দুধ যেকোনো সময় কমিয়ে দিতে পারে। তাই উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, উত্তেজনা, ক্লান্তি, বিব্রত এবং ডিপ্রেশন একেবারেই ঝেড়ে ফেলুন।
- আপনার শিশু যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন আপনিও একটু ঘুমিয়ে নিন। এতে করে আপনার সঠিক বিশ্রাম শরীরকে দুধ উৎপাদনে শক্তি যোগাবে এবং সন্তান পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পাবে।
- বুকের দুধ চলাকালীন সময়ে জন্মবিরতিকরণ পিল এবং অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কেননা এগুলো আপনার বুকের দুধ সিক্রেশন কমিয়ে দিতে পারে।
- আপনি আপনার জীবন যাত্রার মান স্বাভাবিক রাখুন। অ্যালকোহল ও ধূমপান এড়িয়ে চলুন। বিশেষ প্রয়োজনে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
কি খেলে বুকের দুধ শুকিয়ে যায়?
বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক না থাকলে কিংবা হরমোনের কোন গন্ডগোল হলে বুকের দুধ শুকিয়ে যেতে পারে। তাহলে চলুন কি খেলে বুকের দুধ শুকিয়ে যায় এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
- শিশুকে দেরিতে বুকের দুধ খাওয়াতে শুরু করলে বুকের দুধ শুকিয়ে যেতে পারে। কমপক্ষে ১ ঘন্টার মধ্যে নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়াতে শুরু করতে হবে।
- বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করার আগেই অন্য কিছু খাওয়ানো যাবে না। এতে করে বাচ্চার ক্ষুধা কমে যেতে পারে এবং বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অনেক মায়েরা বিশেষ করে প্রথম সন্তান দানকারী নতুন মায়েরা অনেকেই দ্বিধা দ্বন্দ্ব এবং সন্ধ্যের মধ্যে থাকেন। তারা প্রায় দুশ্চিন্তায় থাকেন যে বাচ্চাকে সঠিকভাবে দুধ খাওয়াতে হয়তো পারবেন না। এর ফলে 'প্রোল্যাকটিন' এবং 'অক্সিটোশিন' হরমোন সঠিকভাবে কিংবা পরিমাণ মতো তৈরি না হতে পারলে বুকের দুধ তৈরি হতে সমস্যা হয়। এর ফলে বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল জাতীয় খাবার কম খেলে বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- সুষম খাবার যেমন ওটস, বার্লি, কালোজিরা, টাটকা শাক-সবজি, ফলমূল ও মাছ মাংস না খেলে বুকের দুধ কমে যেতে পারে।
- অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ ও জন্মবিরতিকরণ পিল খেলে বুকের দুধ শুকিয়ে যেতে পারে।
- শরীরে হরমোন জনিত সমস্যার কারণেও বুকের দুধ শুকিয়ে যেতে পারে।
FAQ: প্রশ্নোত্তর - মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। প্রশ্ন: মায়ের বুকের দুধ কেন কমে যায়?
উত্তর: মায়ের বুকের দুধ কমে যাওয়ার কারণ হলো ঘুমের অভাব, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, মানসিক চাপ, পর্যাপ্ত পানি পান না করা এবং পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া।
২। প্রশ্ন: কোন ঔষধ খেলে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি পায়?
উত্তর: ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ডমপেরিডন জেনেরিক গ্রুপের ঔষধ খেলে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি পেতে পারে।
৩। প্রশ্ন: কোন খাবার খেলে বুকের দুধ বাড়ে?
উত্তর: বার্লি, ওটস, রসুন, মেথি, কালোজিরা, পর্যাপ্ত পানি, ফলমূল, টাটকা শাকসবজি ও মাছ খেলে বুকের দুধ বাড়ে।
৪। প্রশ্ন: অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কি বুকের দুধ কমে যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ খেলে মায়ের বুকের দুধ কমে যেতে পারে।
৫। প্রশ্ন:? কলমি শাক খেলে কি বুকের দুধ বাড়ে?
উত্তর: হ্যাঁ, কলমি শাক খেলে বুকের দুধ বাড়তে পারে।
উপসংহারঃ মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, নবজাতক ও তার মাকে একই রুমে এবং সম্ভব হলে একই বিছানায় রাখতে হবে এর ফলে মা নবজাতকের স্পর্শ পাবে ফলে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি পাবে। এবং দুগ্ধ দানকারী মাকে ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম খেতে হবে। সন্তান প্রসবের ৪২ দিন পর ভিটামিন এ এবং তিন মাস পর থেকে আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
লেখক পরিচিতি:
মোহাঃ গোলাম কবির
বি.এস-সি (অনার্স), এম.এস-সি
পরিসংখ্যান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।
(বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত নিয়মিত ব্লগ লেখক)



এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url