ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখ জানা গেল

ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখ জানা গেল।আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আমরা আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে আজকের পর্বে আপনাদের জানাবো ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখ। আপনারা যারা গুগলের সার্চ দিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখ সম্পর্কে জানতে চান আমাদের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। চলুন নিম্নে জেনে নিই- ঈদে মিলাদুন্নবী কত তারিখ ২০২৫।
ঈদে-মিলাদুন্নবী-২০২৫-কত-তারিখ
ঈদে-মিলাদুন্নবী-২০২৫-কত-তারিখ
তার সাথে আল কুরআন ও হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা জায়েজ আছে কিনা সেটা সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে সেটিও আপনি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আমরা ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখ সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখ

২০২৫ সালের ঈদে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ই সেপ্টেম্বর পবিত্র শুক্রবার। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী ঈদে মিলাদুন্নবী একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই ঈদে মিলাদুন্নবীতে ইসলামের সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ ও মৃত্যুবরণ (ওফাত) করেছিলেন। এইজন্য এই দিনটিকে মুসলমান সম্প্রদায় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিশেষ ভাবে পালন করে থাকেন।

ঈদে মিলাদুন্নবীর আরবি, বাংলা ও ইংরেজি তারিখ

প্রতিবছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় সমূহ, আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে, আরবি হিজরী বর্ষের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল এর ১২ তারিখে রোজ সোমবার মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৌদি আরবের মক্কায় পবিত্র কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশী মুসলমানগন এই দিনটিকে 'ঈদে মিলাদুন্নবী' নামে অভিহিত করেন। আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানগন এই দিনটিকে 'নবী দিবস' হিসেবে পালন করেন। এ বছর ২০২৫ সালের ঈদে মিলাদুন্নবীর তারিখ নিচে উল্লেখ করা হলো-

আরবি তারিখ: ১৪৪৭ হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল, রোজ শুক্রবার।
বাংলা তারিখ: ১৪৩২ বঙ্গাব্দের ২১শে ভাদ্র, রোজ শুক্রবার।
ইংরেজি তারিখ: ২০২৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ই সেপ্টেম্বর, রোজ শুক্রবার।

ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস

আরবি হিজরী বর্ষের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল এর ১২ তারিখে সর্বশেষ নবী ও রাসূল সাঃ জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামের প্রথম দিকে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মকে একটি পবিত্র দিন হিসেবে সাধারণত ব্যক্তিগতভাবে পালন করা হতো। পরবর্তীতে এই দিনটিকে প্রতিবছর সারাদিনের জন্য বিশেষভাবে ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করার রীতি প্রচলিত হয়। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর সরকারি ছুটি নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন

বিশ্বের প্রায় সকল ইসলামী দেশ এবং উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যা আছে এমন দেশেও ঈদে মিলাদুন্নবী যথাযথ ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যের মাধ্যমে পালিত হয়। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, ইথিওপিয়া, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, নাইজেরিয়া, ইরান, ইরাক, মালদ্বীপ, মরক্কো,  জর্ডান, লিবিয়া, রাশিয়া, কানাডা, তিউনিসিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি। একমাত্র ব্যতিক্রম হল সৌদি আরব এবং কাতার, যেখানে এটি সরকারি ছুটির দিন নয় এবং ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা নিষিদ্ধ। তবে বিংশ শতকের শেষের দশকে সালাফি বাদের উত্থানের কারণে ঈদে মিলাদুন্নবীকে নিষিদ্ধ এবং না-জায়েজ করার একটি প্রবণতা দেখা দিয়েছে।

পাকিস্তানের ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের সময় দেশটির কেন্দ্রীয় রাজধানীতে ৩১ বন্দুকের স্যালুট এবং প্রাদেশিক রাজধানীতে ২১ বন্দুকের স্যালুটের মাধ্যমে দিবস টি শুরু হয় এবং দিনের বেলা ধর্মীয় স্তব গাওয়া হয়। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ায় ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের গুরুত্ব, জাঁকজমকতা ও প্রাণবন্ততা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দুটি সরকারি ইসলামের ছুটির দিনকে ছাড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনে কুরআন তেলাওয়াত, বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ, খুতবা, পশু জবাই, মশাল মিছিল, গণধর্মীয় সভা ও ভোজ উৎসব পালনের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়।

তুরস্কের ঈদে মিলাদুন্নবী ব্যাপকভাবে ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যের মাধ্যমে পালিত হয়। কিছু কিছু দেশে সুফি তরিকা দ্বারা ঈদে মিলাদুন্নবী আয়োজিত হয়। রাস্তায় বড় শোভাযাত্রা, বাড়ি বা মসজিদ সজ্জিত করা হয়। দাতব্য ও খাবার বিতরণ করা হয় এবং শিশুদের কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবন সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়। যা হোক, এই সকল উৎসব গুলোর মূল তাৎপর্য হলো মহানবী সঃ এর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ। আশা করি ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখ  সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন।

ঈদে মিলাদুন্নবী পালন কোরআন হাদিসের আলোকে

কোরআন হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের পক্ষে দলিল হল-
মহান আল্লাহ তা'আলা আল কোরআনে এরশাদ করেছেন,

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
অর্থাৎ "আর আমি আপনাকে (রাসূল সাঃ) বিশ্ববাসীর জন্য জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া: আয়াত নং ১০৭)
আল কোরআনের এই আয়াতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনকে রহমত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং তাঁর জন্মের আগমনে আনন্দ প্রকাশ করা যেতেই পারে। আল কোরআনের অন্য এক সুরায় মহান আল্লাহতালা আরও ঘোষণা করেছেন,

قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ
অর্থাৎ "বলুন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও মেহেরবানীতে। সুতরাং এরই প্রতি তাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত। এটিই উত্তম সে সমুদয় থেকে যা সঞ্চয় করছে"। (সূরা ইউনূস: আয়াত নং ৫৮)
ঈদে-মিলাদুন্নবী-২০২৫-কত-তারিখ
ঈদে-মিলাদুন্নবী-২০২৫-কত-তারিখ
উপরে উল্লেখিত আল কোরআনের আয়াত দুটিতে আল্লাহর রহমত প্রাপ্তিতে আনন্দ প্রকাশ করার কথা বলা হয়েছে। অনেক ইসলামিক চিন্তাবিদ রাসূলুল্লাহ সাঃ এর আগমনকে মহান আল্লাহতা'লার বিশেষ রহমত হিসেবে গণ্য করেন। তাছাড়া বিভিন্ন হাদিসে তাঁর জন্মদিনের ঘটনাবলী বর্ণিত আছে। কিছু কিছু হাদিসে তিনি নিজে তাঁর জন্মদিনে রোজা রাখতেন বলে উল্লেখ আছে। সুতরাং ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থাৎ মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্মদিনে আনন্দ প্রকাশ করা যেতে পারে। আশা করি ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখ  সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন।

ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে রোজা রাখা যাবে কি

ইসলামী চিন্তাবিদদের মধ্যে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রোজা রাখা নিয়ে কিছুটা ভিন্নমত রয়েছে। কিছু কিছু ইসলামী পন্ডিত মনে করেন, এই দিনে রোজা রাখা যেতে পারে। এর সমর্থনে তারা বলেন, যেহেতু মহানবী সাঃ সোমবার দিন রোজা রাখতেন, কারণ তিনি এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই তারা ঈদে মিলাদুন্নবীতে রোজা রাখা সুন্নত বলে দাবি করেন।

ঈদে মিলাদুন্নবীর আমল

ঈদে মিলাদুন্নবীর আমল সম্পর্কে জেনে নিই। ঈদে মিলাদুন্নবী দিনটিতে একই সাথে ইসলামের সর্বশেষ নবী ও রাসূল সাঃ এর জন্মদিন এবং মৃত্যু (ওফাত) দিন। মুসলমান বিশ্বে দিনটি যেমন আনন্দের, ঠিক তেমনি বিষাদেরও। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে কিছু আমল নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • এই দিনে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা যেতে পারে। এতে মহানবী সাঃ এর জীবন ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
  • নফল নামাজ ও অন্যান্য নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা যেতে পারে।
  • এই দিনে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করে মহানবী সাঃ এর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো যেতে পারে।
  • এই দিনে মহানবী সাঃ এর উপর বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হতে পারে।
  • এই দিনে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাঁকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম কামনা করা যেতে পারে।
  • গরিব ও দুঃস্থদের মাঝে বেশি বেশি দান খয়রাত করা ও উত্তম খাবার বন্টন করা যেতে পারে।
  • ঈদে মিলাদুন্নবীতে রোজা রাখা যেতে পারে, কেননা রাসূলুল্লাহ সাঃ সোমবার রোজা রাখতেন যা তাঁর জন্মদিন।
  • ঈদে মিলাদুন্নবী মহানবী সঃ এর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তাই এই দিনে উত্তম আমল করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা আমাদের সকলের উচিত।
আরো পড়ুন: 

সর্বশেষ কথা -ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখ

এ বছর ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ই সেপ্টেম্বর রোজ শুক্রবার। এই দিনটি মুসলিম বিশ্বের কাছে একটি অতীব তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটি মুসলমানগণ অত্যন্ত ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যের মাধ্যমে উদযাপন করে থাকে। আশা করি ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখ লেখাটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আপনি লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকলে শেয়ার করার অনুরোধ রইল যেন আপনার বন্ধু-বান্ধব উপকৃত হতে পারেন। এরকম আরো পোস্ট করতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভালো করে রাখতে পারেন। লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url