নার্ভের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে রাখুন
নার্ভের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার।আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক আপনার কি নার্ভের সমস্যা? আপনার কি হাত-পা ঝিন ঝিন করে? তাহলে আজকের নার্ভের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আশা করি এই পোস্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাথেই থাকবেন।
![]() |
নার্ভের-রোগের-লক্ষণ-প্রতিকার |
নার্ভের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সবারই জেনে রাখা উচিত। কেননা এমন কোন ব্যক্তি বা পরিবার নেই যে নার্ভের রোগের সমস্যা বা লক্ষণ নাই। নার্ভের রোগ বলতে বাংলায় সাধারণত স্নায় গঠিত রোগকেই বুঝায়। আর এই নার্ভের রোগের বা স্নায়ু ঘটিত রোগ সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষেরই সাধারণত সুস্পষ্ট ধারণা থাকেনা। তাই চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক নার্ভের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।
নার্ভের রোগ বা স্নায়ু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
নার্ভের রোগের সাধারণ লক্ষণ ও কার্যকর প্রতিকার জানুন। সঠিক যত্ন ও চিকিৎসায় কিভাবে সুস্থ থাকবেন, বিস্তারিত পড়ুন এখানে। নার্ভের রোগ বা স্নায়বিক ব্যাধিগুলো এমন এক অবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করে যা মস্তিষ্ক, ক্রানিয়াল, মেরুদন্ডী, পেরিফেরাল স্নায়ু, স্নায়ু শিকড়, স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র, নিউরোমাসকুলার সংযোগ পেশি সহ কেন্দ্রীয় এবং পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। চিকিৎসা গবেষকদের এক সমীক্ষা অনুসারে, প্রায় ৬০০টিরও বেশি নার্ভের রোগ বা স্নায়বিক ব্যাধি রয়েছে। এই নার্ভের রোগ গুলো সাধারণত বয়স ভেদে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
আপনার বয়স যদি ৪০ বছরের নিচে হয় তাহলে আপনার মাথা ব্যথা, এপিলেপ্সি বা মৃগী ও স্ট্রোক হতে পারে যা নার্ভের রোগ বা স্নায়ু রোগ। এখন কমবেশি প্রায় লোকের ঐ মাথাব্যথা বা যন্ত্রণা দেখা যাচ্ছে। এই বয়সে সাধারণত স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা অন্য রোগের তুলনায় কম হলেও গত কয়েক বছরের তুলনায় এ সংখ্যা ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। স্ট্রোক হলো যখন অতিরিক্ত ব্লাড প্রেসারের চাপে মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ হয় তখন মাথার মগজের রক্তনালী গুলো ছিঁড়ে ব্রেনে বা মস্তিষ্কে রক্ত জমা হতে থাকে। এক্ষেত্রে ডান হাত-পা অথবা বাম হাত-পা অথবা উভয় অংশই অসাড় (প্যারালাইজড) হয়ে যায়।
আবার আপনার বয়স যদি ৪০ এর উপরে কিন্তু ৬০ বছরের নিচে হয় তখন এপিলেপ্সি. স্ট্রোক এবং কোমরের নিচের দিকে ব্যথা, মাথা ব্যথা হতে পারে। এই বয়সে অনেকেরই দেখা যায় হঠাৎ কোমর থেকে নিচের অংশ অচেতন বা প্যারালাইজড হয়ে যায়। তখন সে ঠিকমতো দাঁড়াতে পারে না। এটা নার্ভের রোগ বা স্নায়ু রোগের একটি অন্যতম কারণ। আবার রোগী যখন হঠাৎ আগুন কিংবা পানি দেখে অস্বাভাবিক আচরণ যেমন হাত-পা নাড়ানো, খিঁচুনি হয় তখন এটাকে মৃগী রোগ বা এপিলেপ্সি বা খিঁচুনি রোগ বলে।
![]() |
নার্ভের-রোগের-লক্ষণ-প্রতিকার |
আপনার বয়স যখন ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে তখন বার্ধক্য জনিত রোগ যেমন ডিমেনশিয়া (ভুলে যাওয়া), স্ট্রোক এবং মস্তিষ্কে সংক্রমণ (মেনিনজাইটিস) ইত্যাদি দেখা দেয়। এগুলোই হল নার্ভের রোগ বা স্নায়ু রোগ। যদি কারো এপিলেপ্সি বা মৃগী বা খিঁচুনির সমস্যা বংশগত (জিনগত) কারণে হয়, তবে তার প্রকাশ হতে ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সেও হতে পারে।
নার্ভের বা স্নায়বিক রোগের লক্ষণ
নার্ভের বা স্নায়বিক রোগের লক্ষণগুলো বা উপসর্গগুলো নির্দিষ্ট রোগ এবং শরীরের প্রভাবিত এলাকার উপর নির্ভর করে ব্যাপকভাবে পৃথক হতে পারে।। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক উপসর্গ থাকতে পারে আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানসিক উপসর্গ বা লক্ষণ থাকতে পারে। তাহলে চলুন নার্ভের বা স্নায়বিক রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
১। একটি অঙ্গের অসাড়তা (প্যারালাইজড) বা শক্তি হ্রাস হতে পারে।
২। তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে।
৩। যেকোনো সময় মাথা ঘোরা হতে পারে।
৪। রোগীর ডাবল-ভেশন বা একই বস্তু দুটি বস্তু দেখা।
৫। অজ্ঞান হওয়া এবং চেতনা হারানো হতে পারে।
৬। বক্তৃতায় বা কথায় অসংলগ্ন হতে পারে।
৭। মেমোরি লস সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৮। জ্ঞানীয় অসুবিধা হতে পারে।
৯। দৃষ্টিশক্তি সমস্যা হতে পারে।
১০ খিঁচুনি, কম্পন এবং অনিচ্ছাকৃত সংকোচন দেখা দিতে পারে।
১১। হাত-পা ঝিনঝিন করা বা রগের ব্যথা সহ সারা শরীর হতে পারে।
নার্ভের রোগের প্রতিকার
নার্ভের রোগ প্রতিরোধ করা বেশিরভাগ সময়ই চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। আর যেগুলো বংশগত কারণ বা জেনেটিক কারণ থেকে উদ্বুদ্ধ হয় সেগুলো আরো বেশি কঠিন। তারপরেও কিছু নির্দিষ্ট জীবনধারা সমন্বয় করা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে এবং পরবর্তী জীবনে ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়া অথবা অবশ (প্যারালাইজড) হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে। তাহলে চলুন নার্ভের রোগের প্রতিকার বা স্নায়বিক রোগের প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
- সামাজিক বন্ধন বাড়াতে পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে সংযুক্ত থাকুন।
- অ্যালকোহল, তামাক এবং অবৈধ নেশা জাতীয় পদার্থ থেকে বিরত থাকুন।
- নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ক্রিয়ায় লিপ্ত হোন।
- নিয়মিত ফল এবং সবজি সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।
- প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
- আপনি পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমান।
- মস্তিষ্কের আঘাত প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
- উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টরেল, ক্লান্তি (স্ট্রেস), স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগ গুলোতে মেডিকেলে যোগাযোগ করে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
নার্ভের রোগের কারণ গুলো কি কি
নার্ভের রোগের বেশ কিছু কারণ দেখা যায়। মেরুদন্ড এবং মস্তিষ্ক উভয়েই একাধিক ঝিল্লি দ্বারা সুরক্ষিত যেগুলো উচ্চ রক্ত চাপের জন্য সংবেদনশীল। আবার হাত পায়ের অর্থাৎ পেরিফেরাল নার্ভগুলো আঘাতের কারণে হতে পারে। নার্ভের অবস্থার একটি সম্পূর্ণ স্নায়বিক পথ বা একটি একক নিউরনকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা দেখা যায়। তাহলে চলুন নার্ভের রোগের কারণ গুলো কি কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
- বংশগত বা জিনগত কারণ।
- শারীরিক ও মানসিক আঘাত জনিত কারণ।
- জীবনধারা সম্পর্কিত কারণ।
- উচ্চ রক্তচাপ।
- তীব্র রোগ সংক্রমণ।
- পুষ্টি সম্পর্কিত কারণ।
- সুপ্রজনন বিদ্যা।
- আঘাত জনিত কারণ লক্ষ্য করা যায়।
আরো পড়ুন: কোন ভিটামিনের অভাবে স্মৃতিশক্তি কমে যায়।
FAQ: কিছু প্রশ্ন উত্তর -নার্ভের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
১। প্রশ্ন: নার্ভের সমস্যা হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?
উত্তর: নার্ভের সমস্যা হলে একজন ব্যক্তির হাত-পা শরীর অসাড়তা, ঝাঁকুনি, খিঁচুনি, পেশি দুর্বলতা, অনিয়ন্ত্রিত মোচড়, ঘন ঘন হাত থেকে জিনিস পড়ে যাওয়া, তীব্র ব্যথা বা দুর্বলতা হওয়া, দ্রুত বা অনিয়মিত হার্টবিট হওয়া, বাথরুমের অভ্যাস পরিবর্তন হওয়া, মাথা চক্কর দেওয়া বা ঘোরানো, হাত-পা ঝিন ঝিন করা বা রগের ব্যথা হওয়া ইত্যাদি।
২। প্রশ্ন: নার্ভ শুকিয়ে যাওয়ার লক্ষণ কি কি?
উত্তর: নার্ভ শুকিয়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো হল হঠাৎ করে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, দ্বিগুণ দৃষ্টি এবং মাথাব্যথা হওয়া, চোখের পলক কম হওয়া, বর্ণের দৃষ্টি শক্তির দুর্বলতা এবং আলো দেখতে অসুবিধা হওয়া ইত্যাদি।
৩। প্রশ্ন: কোন কোন স্নায়বিক রোগ রয়েছে?
উত্তর: স্নাবিক রোগের একটি বর্ণালী বিদ্যমান থাকলেও মাইগ্রেন (তীব্র মাথাব্যথা), মৃগী রোগ, মস্তিষ্কের টিউমার এবং মেনিনজাইটিস (মস্তিষ্কের সংক্রমণ) এর মত অবস্থা গুলো সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
৪। প্রশ্ন: নার্ভের সমস্যার জন্য কোন ডাক্তার দেখাতে হবে?
উত্তর: নার্ভের সমস্যার জন্য নিউরোলজিস্ট ডাক্তার দেখাতে হবে। একজন নিউরোলজিস্ট ডাক্তার মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের অবস্থা নির্ণয় করে চিকিৎসা প্রদান করেন।
৫। প্রশ্ন: নার্ভের ভিটামিন কি কি?
উত্তর: নার্ভের ভিটামিন গুলো হল ভিটামিন বি১, বি১২ এবং ভিটামিন বি৬। ঔষধ কোম্পানির ঔষধ গুলো হলো: Tab. B126, Tab. Neuro B, Tab. Neuralgin ইত্যাদি।
সর্বশেষ কথা -নার্ভের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
নার্ভের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার শিরোনামের আর্টিকেলে আমরা নার্ভের রোগ কি, নার্ভের রোগের লক্ষণ, নার্ভের রোগের কারণ গুলো কি কি এবং নার্ভের রোগের প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। শুরুতে নার্ভের রোগ নির্ণয় করতে পারলে এবং সঠিকভাবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করলে নার্ভের রোগ অনেকটাই ভালো বা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আশা করি লেখাটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আপনি লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকলে আপনার বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো যেন তারাও উপকৃত হতে পারেন। লেখার মাধ্যমে কোন ভুল ত্রুটি হলে কমেন্টের মাধ্যমে অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না। আজকের নার্ভের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url