১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ২০২৫ - May Day
১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ২০২৫। আসসালামু আলাইকুম। প্রতিবছর ১লা মে দিনটি সারা বিশ্বে "আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস" হিসেবে পালন করা হয়। এদিনের পেছনে রয়েছে অগণিত শ্রমজীবী মানুষের এক কঠিন ইতিহাস। প্রতিবছর মে মাসের প্রথম দিনটি পৃথিবীর অনেক দেশে 'মে দিবস' হিসেবে পালিত হয়।
![]() |
১লা-মে-আন্তর্জাতিক-শ্রমিক-দিবস |
১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস - মে দিবসের ইতিহাস
আজ মহান মে দিবস। আজকের দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসও বলা হয়ে থাকে। এই দিবসের পেছনে রয়েছে শ্রমজীবী মানুষের এক কঠিন ইতিহাস। ১৮৮৬ সালের ১ মে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ৮ঘন্টা শ্রম দিনের দাবিতে আন্দোলনরত হাজারো শ্রমিকের উপর পুলিশ গুলি চালায়। এতে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন। পরবর্তীতে এ আন্দোলনের স্মরণে ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯৮০ সালের পহেলা মে থেকে প্রতিবছর এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে।
পূর্বে শ্রমিকদের অমানবিক পরিশ্রম করতে হতো। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ ঘন্টা থেকে ১২ ঘন্টা আর সপ্তাহে ছয় দিন পরিশ্রম করতে হতো। বিপরীতে মজুরি মিলতো অতি নগণ্য। শ্রমিকরা মানবতের জীবন যাপন করত এবং ক্ষেত্র বিশেষে দাসবৃত্তির পর্যায়ে পড়তো। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘন্টা পরিশ্রম করার দাবি জানান এবং তাদের এ দাবি কার্যকরের সময় বেঁধে দেন ১৮৮৬ সালের ১লা মে পর্যন্ত। কিন্তু কলকারখানার মালিকগণ এ দাবী মেনে না নিলে সন্ধ্যা বেলা হালকা বৃষ্টির মধ্যে শিকাগোর হে মার্কেট নামক স্থানে শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হন।
আগস্ট স্পীজ নামে এক শ্রমিক নেতা জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলছিলেন। এমন সময় কিছু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ দলের কাছে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। তৎক্ষণাৎ একজন পুলিশ মারা যান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি করলে সেখানেই ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন। বোমা বিস্ফোরণে পুলিশ হত্যার দায়ে আগস্ট স্পীজ সহ ৮ জন শ্রমিককে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা করা হয়। এক প্রহসন মূলক বিচারের মাধ্যমে ১৮৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর উন্মুক্ত স্থানে ছয় জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। লুইস লিং নামে একজন শ্রমিক নেতা একদিন পূর্বে কারাগারের অভ্যন্তরে আত্মহত্যা করেন এবং অন্য একজনের পনের বছরের কারাদণ্ড হয়।
ফাঁসির মঞ্চে আরোহণের পূর্বে শ্রমিক নেতা আগস্ট স্পীজ বলেছিলেন, 'আজ আমাদের এই নিঃশব্দতা, তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে'। ২৬ শে জুন, ১৮৯৩ সালে ইলিয়নের গভর্নর অভিযুক্ত আটজন শ্রমিককেই নিরাপরাধ বলে ঘোষণা দেন এবং দাঙ্গা সৃষ্টিকারী হুকুম প্রদানকারী পুলিশের কমান্ডারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করেন। আর অভিযুক্ত সেই বোমা বিস্ফোরণকারীর পরিচয় আজও প্রকাশ পায়নি।
শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি "দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ করার দাবি" অফিশিয়াল ভাবে স্বীকৃতি পায়। আর পহেলা মে বা মে দিবস প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দাবি আদায়ের দিন হিসেবে, যা বিশ্বব্যাপী আজও "আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস" হিসেবে যথাযথ মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে আসছে।
এবছর মে দিবসের প্রতিপাদ্য - May Day
আজ মহান মে দিবস বা মে ডে (MAY DAY)। সারা বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষদের আন্দোলন সংগ্রামের স্বীকৃতির দিন হল এই দিন। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রতিবছর পহেলা মে সারা বিশ্বে দেশটি পালন করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এই দিনটি গুরুত্বের সাথে পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটির দিন। এ বছর ২০২৫ সালের ১ মে দিবসের প্রতিপাদ্য হলো- "শ্রমিক - মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে"। আজ ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।
মে দিবসের গুরুত্ব বা শ্রমিক দিবসের গুরুত্ব
মে দিবস বা শ্রমিক দিবস কেবল একটি ছুটির দিনই নয়, এটি হলো শ্রমিকের অধিকার আদায়ের প্রতীক। এই দিনটি শ্রমিকদের কষ্ট, অবদান এবং ন্যায্য দাবিগুলোর প্রতি সম্মান জানানোর একটি বিশেষ উপলক্ষ্য। এটি আমাদের সমাজকে স্মরণ করিয়ে দেয়, আজকের উন্নত জীবন যাত্রার পেছনে লাখো শ্রমিকের অবদান রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার এই দিনটি পালিত হয়।
মে দিবস বিশ্বজুড়ে কিভাবে পালিত হয়?
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের প্রতি সম্মান রেখে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এই দিনটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন রেলি, সেমিনার, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করে থাকে। সামাজিক মাধ্যমে শ্রমিক অধিকার, নিরাপদ কর্মস্থল, ন্যায্য মজুরি ইত্যাদি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো হয়।
বাংলাদেশে শ্রমিক দিবস
বাংলাদেশে ১লা মে দিনটি জাতীয়ভাবে পালন করা হয়। শ্রম মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও গার্মেন্টস সেক্টরের নেতৃবৃন্দ এই দিনটিতে আলোচনা সভা, বর্ণাঢ্য রেলি এবং বিভিন্ন সচেতনতা মূলক প্রোগ্রাম আয়োজন করে। দেশের অর্থনীতির বড় একটি অংশ গার্মেন্টস ও নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল, তাই এই দিনটি আরো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ এবং অর্থবহ।
২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে মে দিবস
২০২৫ সালে এসে শ্রমজীবী মানুষের চ্যালেঞ্জ আরো নতুন রূপ নিয়েছে। প্রযুক্তির অগ্রগতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), অটোমেশন - এসব কারণে অনেক কাজের ধরন বদলে যাচ্ছে। এসব পরিস্থিতির কারণে শ্রমিকদের নতুন দক্ষতা অর্জন, সঠিক প্রশিক্ষণ ও ডিজিটাল জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরী। তার পাশাপাশি কর্ম ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আরো পড়ুন:
সর্বশেষ কথা - ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস
শ্রমিক দিবস একটি বার্তা দেয় - পরিশ্রমই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার রক্ষা, ন্যায্যমজুরি নিশ্চিত করা এবং তাদের মর্যাদা দেওয়াই হওয়া উচিত সমাজের প্রতিটি স্তরের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। আসুন, ১লা মে -কে শুধু ছুটি হিসেবে নয় বরং একটি সচেতনতা ও শ্রদ্ধার দিন হিসেবে পালন করি। পরিশেষে বলতে চাই - মহান মে দিবস অমর হোক, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস অমর হোক। আশা করি শিরোনামের ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস লেখাটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। লেখাটি শেয়ার করে আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে জানিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url